বুধবার, ৯ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৮ই মহর্‌রম, ১৪৪৬ হিজরি

দাওয়াতের কাজে চাই অবিচলতা – তারাবীহ ১৩তম পাঠ

This entry is part [part not set] of 27 in the series দরসে তারাবীহ


আজ ১৩তম তারাবিতে সূরা কাহফের ৭৫-১১০ আয়াত এবং সূরা মরিয়ম ও ত্বহা পড়া হবে। পারা হিসেবে পড়া হবে ১৬তম পারা।

১৮. সূরা কাহফ: (৭৫-১১০) পারার সূচনার আয়াতগুলোতে মুসা ও খিজর (আ.) এর ঘটনার উল্লেখ রয়েছে (৬০-৮২)। জ্ঞানার্জনের জন্য মুসা (আ.) খিজরের সঙ্গে দীর্ঘ সফর করেছিলেন। পথে খিজর আশ্চর্যজনক কিছু ঘটনা ঘটিয়েছিলেন। সূরা কাহফে মুসা-খিজরের কাহিনিটি বিস্তারিতভাবে আলোচিত হয়েছে। এ কাহিনিতে আমাদের জন্য এ শিক্ষা রয়েছে যে, আমাদের সামনে নিত্য যেসব ঘটনা ঘটে চলে, সেসবের আড়ালে আশ্চর্যজনক রহস্য ও হেকমত লুকিয়ে থাকে। যাদের ধারণা, চোখে যা দেখি তা-ই সব; তাদের জন্য মুসা-খিজরের ঘটনায় শিক্ষার অনেক উপাদান রয়েছে।

এরপর বাদশা জুলকারনাইনের ঘটনা আলোচিত হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা জুলকারনাইনকে বিশেষ ক্ষমতা দান করেছিলেন। তার বিজিত অঞ্চলের সীমানা ছিল অনেক বিস্তৃত। তিনি এমন এক সম্প্রদায়ের দেখা পেয়েছিলেন, যারা সর্বদা ইয়াজুজ-মাজুজ নামক একটি বর্বর গোষ্ঠীর হামলার শিকার হতো। এ নিপীড়িত সম্প্রদায়ের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জুলকারনাইন মজবুত একটি দেয়াল নির্মাণ করে দেন, ফলে তারা নিরাপত্তা লাভ করে। এ দেয়াল কেয়ামতের আগে টুকরো টুকরো হয়ে যাবে এবং ইয়াজুজ-মাজুজ সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়বে। (৮৩-১০১)।

সূরা কাহফের শেষে বলা হয়েছে, ‘যে আশা রাখে, তার রবের সাক্ষাৎ লাভের, সে যেন নেক আমল করে এবং আপন প্রতিপালকের বন্দেগির ক্ষেত্রে যেন কাউকে শরিক না করে।’ (১১০)।

১৯. সূরা মারয়াম: (মক্কায় অবতীর্ণ, আয়াত ৯৮, রুকু ৬)

সূরা মারয়মে আল্লাহ তায়ালার অস্তিত্ব, একত্ববাদ এবং পুনরুত্থান ও হিসাব-নিকাশ প্রসঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। সূরায় কয়েকজন নবীর ঘটনা আলোচিত হয়েছেঃ- জাকারিয়া (আ.)। বুড়ো বয়সে আল্লাহর কাছে সন্তান প্রার্থনা করেন। সন্তান হওয়ার বাহ্যিক কোনো সম্ভাবনাই যখন ছিল না, এমন সময় দোয়ার বরকতে আল্লাহ তায়ালা তাকে ইয়াহইয়া নামের এক পুত্র সন্তান দান করেন। (২-১৫)।

ঈসা (আ.) আল্লাহর আদেশে বাবা ছাড়া কুমারী মারয়ামের ঘরে ঈসা (আ.) এর জন্মসংক্রান্ত ঘটনা আলোচনা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, সন্তান নিয়ে মারয়াম নিজ সম্প্রদায়ের কাছে এলে ইহুদিরা সমালোচনা শুরু করে। মারয়াম মুখে জবাব না দিয়ে শিশু ঈসার দিকে ইশারা করা মাত্র নবজাতক ঈসা বলে ওঠেন, ‘আমি আল্লাহর বান্দা’। কোলের শিশু মায়ের চারিত্রিক পবিত্রতার ঘোষণা দেয়। (১৬-৩৪)। আসলে আল্লাহর কুদরতের কাছে অসম্ভব বলতে কিছু নেই। (৩৫-৩৬)।

ইবরাহিম (আ.)। বাবাকে মূর্তিপূজায় লিপ্ত দেখে পুত্র ইবরাহিম তাকে একত্ববাদের দাওয়াত দেন। কিন্তু বাবা কথা শোনেনি। ঈমান রক্ষার জন্য ইবরাহিম (আ.) দেশ-জাতি সব ছেড়ে চলে যান। পরবর্তী সময়ে তার বংশেই বিশ্বের সব নবীর আবির্ভাব ঘটে। (৪১-৫০)। এরপর সূরা মারয়ামে মুসা, হারুন, ইসমাইল ও ইদরিস (আ.) এর আলোচনা রয়েছে, এরা আল্লাহর অনুগ্রহপ্রাপ্ত বান্দা ছিলেন। কিন্তু তাদের পরে এসেছে এমন কিছু লোক, যারা নামাজ নষ্ট করেছে, প্রবৃত্তির অনুসরণ করেছে, তাই তাদের ঠিকানা হল জাহান্নাম। (৫১-৫৯)।

‘মোশরেকরা পুনরুত্থান ও প্রতিদান দিবসকে অস্বীকার করে, তাদের অবশ্যই জাহান্নামে একত্র করা হবে (৮৬)’- এ প্রসঙ্গে আলোচনার পর সূরার শেষে বলা হয়েছে, মোমিনদের আল্লাহ তায়ালা বিশেষ মহব্বত দান করবেন এবং বর্তমান কাফেরদেরও পূর্ববর্তী কাফেরদের মতো ধ্বংস করবেন। (৯৬-৯৮)।

২০. সূরা ত্বহা: (মক্কায় অবতীর্ণ, আয়াত ১৩৫, রুকু ৮)

প্রায় পুরো সূরাতেই রয়েছে হজরত মুসা (আ.) এর জীবনের বিবরণ। কোরআনের বাণী প্রচার-প্রসারের জন্য নবী মুহাম্মদ (সা.) অনেক মেহনত ও কষ্ট করতেন। সূরার প্রথম দিকে আল্লাহ তায়ালা তাঁর প্রিয় নবীকে সান্ত¡না দিয়েছেন। মূলত সূরায় নবী মুসার ঘটনা আলোচনার অন্যতম একটি উদ্দেশ্য হলো, নবীজি এবং তাঁর উম্মতকে এ বার্তা দেওয়া যে, সবসময় আল্লাহ তায়ালা তাঁর প্রিয় বান্দাদের হেফাজতের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকেন।

সূরা ত্বহার ৯-৯৮ নম্বর আয়াত পর্যন্ত একাধারে মুসা (আ.) এর ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। এখানে তার জীবনের বড় বড় প্রায় সব ঘটনা চলে এসেছে। তবে লক্ষণীয় বিষয় হলো, ঘটনার খুটিনাটি বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি না দিয়ে বান্দা যেন মূল শিক্ষার প্রতি মনোনিবেশ করে সে লক্ষে কোরআনে সাধারণত ঘটনার ধারাবাহিক ক্রম রক্ষা করা হয় না।

আলোচ্য সূরায় মুসা (আ.) এর যে ঘটনাগুলো বর্ণনা করা হয়েছে সেগুলো হলো, শিশু মুসাকে আল্লাহর আদেশে দরিয়ায় নিক্ষেপ, শত্রুর ঘরে মায়ের কোলে লালন-পালন, নবুয়ত লাভ, আল্লাহর সঙ্গে সরাসরি কথা, আল্লাহর পক্ষ থেকে তাকে এবং তার ভাই হারুন (আ.) কে ফেরাউনের কাছে যাওয়ার এবং তার সঙ্গে উত্তম বাচনভঙ্গিতে কথোপকথনের নির্দেশ, মুসার বিরোধিতার জন্য ফেরাউন কর্তৃক জাদুকরদের একত্রীকরণ, মুসা (আ.) এর বিজয়, জাদুকরদের ঈমান আনায়ন, নবীর নেতৃত্বে বনি ইসরাইলের মিসর ত্যাগ, সৈন্যসামন্ত নিয়ে বনি ইসরাইলকে ফেরাউনের ধাওয়া করা, পরিশেষে সমুদ্রে ডুবে ফেরাউন বাহিনীর বিনাশ সাধন।

মহান দয়ালু রবের নেয়ামতের বিপরীতে বনি ইসরাইলের অকৃতজ্ঞতা, সামিরি কর্তৃক গো-বাছুর বানানো এবং বনি ইসরাইলের পথভ্রষ্টতা, তাওরাত নিয়ে মুসা (আ.) এর তুর পর্বত থেকে প্রত্যাবর্তন এবং নিজের ভাইয়ের প্রতি ক্রোধ প্রকাশ।

এরপর কেয়ামতের ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরে পরকালে আল্লাহবিমুখ বান্দাদের শাস্তির বিবরণ দেওয়া হয়েছে। (১০২-১১২, ১২৪-১২৮)। মাঝে আদম (আ.) কে ইবলিসের সিজদা না করার ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। (১১৬-১২৩)। মোশরেকদের কথায় কান না দিয়ে দাওয়াতের কাজে অবিচলতার নির্দেশনার মাধ্যমে সূরাটি সমাপ্ত হয়েছে। (১২৯-১৩৫)।.

লেখক:মাওলানা রাশেদুর রহমান ।। পেশ ইমাম ও খতীব, কেন্দ্রীয় মসজিদ, বুয়েট

Series Navigation

Archives

July 2024
S S M T W T F
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031