শুক্রবার, ২৪শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৮ই শাবান, ১৪৪৬ হিজরি

রোহিঙ্গা ইস্যুতে মাদরাসা শিক্ষার্থীদের  ত্যাগের ব্যাপক নাজরানা 

Khutbah Tv 

মাটির ব্যাংকের জমানো টাকা, মাসিক খরচের টাকা, অনেকে আবার কর্জ নিয়ে রোহিঙ্গাদের সাহায্যার্তে বিলিয়ে দিয়ে কুরবানির অনন্য নজির সৃষ্টি করল বিভিন্ন মাদরাসার তরুণ শিক্ষার্থীরা!

গত ২৫ আগস্ট মিয়ানমারে জাতিগত নিধন শুরু হলে, বাংলাদেশে নতুন করে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ ঘটে।

প্রথম দিকে সীমান্তে কড়াকড়ি থাকলেও পরে তা শিথিল হয়ে যায়। ফলে পূর্বের চেয়ে ব্যাপক আকারে রোহিঙ্গারা দেশে প্রবেশ করে।

Default Ad Content Here

মিয়ানমারের রাষ্ট্রসন্ত্রাসে পিষ্ট হয়ে লাখো-লাখো নারী-শিশু-পুরুষ পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে শুরু করে। খাদ্য-বস্ত্র-বাসস্থানহীন এমন অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে সারা দেশ। পাশাপাশি বাংলাদেশের আলেম ওলামারও ব্যাপক অংশগ্রহণ দেখা যাচ্ছে শুরু থেকেই।

অভিজ্ঞজনরা একে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। দেশের বিভিন্ন কওমি মাদরাসার ছাত্র স্ব স্ব অবস্থান থেকে এগিয়ে আসছেন।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের কুতুপালং, বালুখালী, ল্যাদা ক্যাম্পসহ বিভিন্ন পয়েন্টে মাদরাসার শিক্ষার্থীরা প্রচুর শ্রম দিয়ে যাচ্ছে। কেউ নগদ টাকা দিচ্ছে। কেউ চাল ডাল তেল দিচ্ছে। কেউ কেউ সহমর্মিতা দেখাচ্ছে। ঘর ছেড়ে আসা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর কষ্টের ভাগ নিচ্ছে। দূরপ্রান্ত হেঁটে আসা লোকদের পানি খাওয়াচ্ছে পরম মমতায়।

বয়সে তরুণ হওয়ার বিভিন্ন কষ্টসাধ্য কাজগুলোতে তাদের প্রথম সারিতে দেখা যাচ্ছে। সীমান্তে নদী পারাপার থেকে শুরু করে বিভিন্ন জায়গায় রান্নাবান্নার কাজও তারা আঞ্জাম দিচ্ছেন।

কথা হয় রোহিঙ্গাদের সহযোগিতা করতে আসা ক’জন মাদরাসা শিক্ষার্থীর সঙ্গে।

হাটহাজারী মাদরাসার উচ্চতর হাদীস বিভাগের ছাত্র সাইফুল ইসলাম জানান, আমার পকেটে টাকা ছিল না। কিন্তু রোহিঙ্গা মাজলুমদের এমন অবস্থা দেখে বসে থাকতে পারিনি। মাটির ব্যাংকে কিছু টাকা জমা ছিল, ওটা ভেঙ্গে প্রায় ৫ হাজার টাকা পেয়েছি। ঐ টাকা নিয়েই বের হয়ে আসি। আমরা আরও কজন বন্ধুবান্ধব মিলে এদের সাহায্যে এগিয়ে আসি।

রোহিঙ্গাদের সহযোগিতা করতে এসেছেন তরুণ মাদরাসা শিক্ষার্থী উসামা। তিনি সীমান্ত পার হয়ে আসা রোহিঙ্গাদের নগদ অর্থ দিয়ে সাহায্য করছিলেন। অর্থ সংগ্রহ বিষয়ে জানতে চাইলে উসামা জানায়, আমার জমানো কিছু টাকা ছিল। রোহিঙ্গাদের কষ্ট দেখে সেই টাকা নিয়ে অসুস্থতার মাঝেও তাদের সহযোগিতা করতে এসেছি।

দেখা হয় হাটহাজারী মাদরাসা থেকে আসা একদল তরুণের সঙ্গে। আলাপকালে তাদের ক’জন জানায়, বাড়িতে কুরবানির ছুটি শেষ করে মাদরাসায় ফিরেই মজলুম ভাইদের সহযোগিতা করতে ছুটে এসেছি। বাড়ি থেকে মাসিক খরচের যা টাকা দিয়েছে তা নিয়েই এখানে চলে এসেছি। হয়তো আমার ক’দিন কষ্ট হবে কিন্তু এতে অসহায় নারী-শিশুরা তো একটু সুখ পাবে।

চট্টগ্রামের হাটহাজারী, পটিয়া এবং ঢাকার মাদরাসাসহ দেশের বিভিন্ন মাদরাসার শিক্ষার্থীদের উল্লেখযোগ্য হারে অসহায় রোহিঙ্গাদের সহায়তায় ত্যাগের ব্যাপক নাযরানা দিতে দেখা যায়।

নিজের জমানো বা বন্ধুদের কাছে তুলে অর্থ আনছেন। সেগুলো বিতরণ করছেন অসহায় রোহিঙ্গাদের মধ্যে। আর সেসব দৃশ্য দেশের মানুষের কাছে এক সুখকর চিত্র হিসেবে স্থান করে নিচ্ছে।

 

Archives

February 2025
S S M T W T F
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728