শুক্রবার, ১৯শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১লা রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি
খুবই জোরে-শোরে একটা কথা চাউর করা হয় যে, সব মুসলমান সন্ত্রাসী নয়, তবে সব সন্ত্রাসীই মুসলমান! কিন্তু খোদ আমেরিকায় ৭ অক্টোবর ২০১৭ থেকে নিয়ে ২৭ অক্টোবর ২০১৭ এর মধ্যে গুলিতে প্রায় ৯০০ জন নিহত হয়েছেন। প্রায় ২ হাজার জন হয়েছেন আহত। অক্টোবর ২০১৭ এর শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের লাস ভেগাসের কনসার্টে হামলায় নিহত হন ৫৯ জন। আহত হন কমপক্ষে ৫২৭ জন। ৬৪ বছর বয়সী স্টিফেন প্যাডক আধুনিক যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ভয়াবহ গুলির ঘটনা ঘটায়। নিউইয়র্ক ডেইলি নিউজ জানায়, গান ভায়োলেন্স আর্কাইভের এক পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, লাস ভেগাসের ওই ঘটনার পর যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন গুলির ঘটনায় অন্তত ৮৯৬ জন মারা গেছেন। কারা এসব ঘটনা ঘটায়? যারা ঘটায়, তাদের মধ্যে মুসলিমদের সংখ্যা নেই বললেই চলে। অক্টবরের গুলির ঘটনাগুলোর প্রথম শিকার সাউথ ক্যারোলিনার পাম্পলিকোর ২৩ বছর বয়সী এলি বেকোট। ১ অক্টোবর লাস ভেগাসের কনসার্টে প্যাডকের গুলিতে তিনি মারা যান। এছাড়া ওই পরিসংখ্যান মতে, ১ অক্টোবর থেকে গত মঙ্গলবার পর্যন্ত গুলির ঘটনায় আহত হয়েছেন ১ হাজার ৯৯০ জন।
এসব হত্যাকাণ্ডের বেশিরভাগই পিস্তলের মতো ছোট বন্দুক দিয়ে ঘটানো হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে লাস ভেগাসের ঘটনায় প্যাডক উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন বেশ কয়েকটি অ্যাসল্ট রাইফেল ব্যবহার করেছিলেন। ঘটনার পর তার হোটেল কক্ষে তল্লাশি চালিয়ে ১৭টি বন্দুক উদ্ধার করে পুলিশ। প্যাডক তো মুসলিম ছিলো না। প্রতিবছর আমেরিকায় গড়ে ১০ হাজারের বেশি মানুষ গুলিবদ্ধি হয়ে মারা যান। তাদের কেউ আত্মহত্যা করেন, কেউ অন্যের ছোড়া গুলিতে নিহত হন। এছাড়া সরকারের তৈরি এক পরিসংখ্যান মতে, দেশটিতে প্রতিবছর বন্দুকের গুলিতে ১ হাজার ৩০০ শিশু মারা যায়। কারা এই নিষ্ঠুরতার হোতা? তাদের ধর্মপরিচয় বরাবরই অাড়াল করা হয়।
আমেরিকার রয়েছে এক অদ্ভুত বন্দুক সংস্কৃতি। দেশটির মানুষের একটি বড় অংশেরই নিজের কাছে বন্দুক রাখা নিয়ে রয়েছে ব্যাপক পক্ষপাত। অনেকেইএটিকে নিজেদের ঐতিহ্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ বলে মনে করে। বিশ্বের আর কোথাও এমন সংস্কৃতি দেখা যায় না। ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব জাস্টিসের (এনআইজে) ২০০৯ সালের তথ্য মতে, আমেরিকার বেসামরিক মানুষের হাতে রয়েছে আনুমানিক ৩১ কোটি বন্দুক। এগুলো দিয়ে হত্যা ও রক্তপাতের ঘটনা হরহামেশা ঘটানো হয়। কিন্তু কখনোই এগুলোকে সন্ত্রাসবাদ হিসেবে চিহ্নিত করা হয় না। দেখানো হয় বিষন্নতা,হতাশা,মতিভ্রান্তি,মদ্ যপান ইত্যাদির ফসল হিসেবে।কিন্তু যদি কোনো ‘ বিষন্ন,হতাশ, মতিভ্রষ্ট বা মদ্যপ’ মুসলিমের দ্বারা কোনো কিছু ঘটে, অবশ্যই তাকে ‘ মুসলিম সন্ত্রাস’ হিসেবে জগতময় চাউর করা হয়। আমেরিকায় মুসলিমদের হাতে ঘটা এমন ঘটনার সংখ্যা কতো? আমেরিকান গোয়েন্দা সংস্থা এফ বি আই ১৯৮০ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত আমেরিকায় সংগঠিত সন্ত্রাসের যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায় শতকরা ৯৪টি সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটিয়েছে অমুসলিমরা। অপরদিকে ইন্টারপোলের রিপোর্ট অনুযায়ী ইউরোপে সংগঠিত ৯৯ দশমিক ৪ ভাগ অপরাধই ঘটিয়েছে অমুসলিম সন্ত্রাসীরা। এই জাতীয় তথ্যগুলো ইসলামের দিকে সন্ত্রাসের অভিযোগ আরোপকারীদের গায়ে চুনকালি মাখিয়ে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। কিন্তু উদঘাটিত এ সত্য নিয়ে কেউ কিছু বলছেনা। সন্ত্রাসের ঠিকানা তালাশে আমাদের সাহায্য করে। নরওয়ের অসলোতে বোমাবাজী ও উটোয়া দ্বীপেবেহরিঙ্গ ব্রেইভিকের গণহত্যা নিয়ে
কোনো বুদ্ধিজীবি উচ্চবাচ্য করেনি। ঘটনাটির ভয়াবহতা গোটা নরওয়েকে কাপিয়ে দিয়েছিলো। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সে দেশে এতো বড় বিপর্যয় আর ঘটেনি। শান্তিপূর্ণ সমাবেশে বিপুল সংখ্যক মানুষকে ঠান্ডা মাথায় হত্যা করা হলো, অসলোর সুরতি এলাকায় প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের সামনে ভয়ানক বোমা হামলা হলো, সরকারী বহু কর্মকর্তা প্রাণ হারালেন, শান্তিতে নোবেল দেয় যে নরওয়ে, সেই ‘শান্তিরাষ্ট্রের’ চতুর্দিকে কান্না-এতো বড় সর্বনাশ ঘটালো খৃষ্টবাদী সন্ত্রাসীরা!!
নরওয়ের উটোয়া দ্বীপে মতাসীন লেবার পার্টির যুবসমাবেশে পুলিশের ছদ্মবেশে ঢুকে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে ৮৫ জনকে হত্যা করে স্যানডারস বেহরিঙ্গ ব্রেইভিক নামে এক যুবক।
সে মূলত বর্নএ্যাগেন তথা প্রকৃত খৃষ্টান হয়ে দ্বিতীয়বার জন্মগ্রহণকারী ঘোরতর ইসলাম বিদ্বেষী এক্টিভিস্ট। ইন্টারনেটে সে মুসলমানদের ওপর সন্ত্রাসের অভিযোগে কতো
কী যে লিখেছে! ইসলামকে গালাগাল করেছে সন্ত্রাসের জীবানু হিসেবে। তার ভাষায় ইউরোপের নিরাপত্তার জন্য এই জীবানু সমাজ থেকে অপসারণ জরুরি। অর্থাৎ সে এমন এক ইউরোপ চায় যেখানে ইসলাম থাকবে না। তার এই ইচ্ছা পাশ্চাত্যের চরমপন্থী খৃস্টবাদী দলগুলোর চাহিদারই প্রতিনিধিত্ব করছে। হান্টিংটনের সভ্যতার সংঘাত থিউরিকে তাবিজ বানিয়ে পশ্চিমাজগত ইসলামকে নতুনভাবে প্রতিপ বানিয়ে নাইন/ইলিভেন কান্ড ও মুসলিমবিশ্বকে টার্গেট করে অন্তহীন যুদ্ধঘোষনার পরে আমেরিকায় দি ওয়ার্ল্ড উইদাউটইসলাম নামে বই ছাপা হয়ে ল ল কপি
বিক্রি হয়েছে। ফ্রান্স, ইটালিসহ দেশে দেশে ইসলামমুক্ত পৃথিবীর দাবীতে প্রকাশ্যে সমাবেশ হয়েছে, গ্রিট উইল্ডার্সের মতো ইউরোপীয় নেতা কোরআনকে নিষিদ্ধ করার দাবী জানিয়েছেন, কোরআনুল কারীমকে তিনি হিটলারের ম্যাঁ ক্যাম্পের সাথে তুলনা করেছেন, আমেরিকায় প্রকাশ্যে কোরআন পুড়ানো দিবস উদযাপনের ঘোষণা দেয়া হয়েছে, ফ্রান্স, ইতালি, সুইজারল্যান্ড ইত্যাদি দেশে হিযাবকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে, স্টপ ইসলামাইজেশন গোষ্টি ইসলাম বিরোধি প্রোপাগান্ডার ফলে বিভ্রান্ত তরুণদের সংগঠিত করছে, দেশে দেশে মধ্যযুগীয় ক্রোসেডারদের অনুকরণে নাইট টেম্পলার নামে ধর্মীয় সামরিক বাহিনী তৈরী হচ্ছে। ব্রেইভিক ছিলো সেই নাইট টেম্পলারদের একজন। ইন্টারনেটে সে নিজেকে নাইট টেম্পলার বলেই দাবী করেছে। ব্রিটেনের উগ্র ইসলাম বিরোধি ইংল্যান্ড ডিফেন্সলীগের প্রেরণায় সে ক্রোসেডার হবার স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। খৃষ্টবাদী গ্রুপ নরওয়ে গ্রোগ্রেস পার্টির সে ছিলো সক্রিয় সদস্য। অভিবাসী মুসলমানদের বিরুদ্ধে তার ােভের শেষ নেই। মতাসীন লেবার পার্টি অভিবাসীদের প্রতি নমনীয়। সে লেবার পার্টিকে হুশিয়ার করে দিতে এ নৃশংসতার আশ্রয় নেয়। এই বর্বরতা ব্রেইভিকের ভাষায় ‘প্রয়োজনীয়’। মুসলমানদের ব্যাপারে বর্বরতা প্রয়োজনীয়, এটা শুধু তার কথা নয়, ইউরোপ আমেরিকায় হাজার হাজার তরুণও একে সমর্থন করবে। মাস কয়েক আগে খৃষ্টান এক্টিভিস্টরা ফোরিডার জ্যাকসন ভ্যালির একটি মসজিদে হামলা করলো, টেনেসি মসজিদের একপাশে আগুন ধরিয়ে দিলো, নিউয়র্কের এক মুসলিম ক্যাব ড্রাইভারের মুখে ও কাঁধে কুপিয়ে রাজপথে তাকে ফেলে গেলো এক খৃষ্টান সন্ত্রাসী। এ নিয়ে ইয়াহু নিউজে অনেকের মন্তব্যে ড্রাইভারকে ছুরি মারার নিন্দা না করে অপরাধের প্রশংসা করা হয়। ডেভিড নামে একজন লিখে ‘এই ছেলেটা (হামলাকারী মাইকেল এনরাইট) একটা মেডেলে ভূষিত হবার যোগ্য। গ্রাউন্ড জিরোতে মসজিদ বানালে তা উড়িয়ে দেয়ার জন্য সেচ্চার হও। সময় এসেছে নিউয়র্কে কেউ একজন আবির্ভূত হয়ে আমেরিকার শক্তি দেখিয়ে দিক।’ এই যে শক্তি দেখিয়ে দেয়া, এটা কি হুমকি নয় বিশ্বশান্তির জন্য?
একে ‘হুমকি’ বলা হতো, যদি এমনটি ঘটাতো মুসলিম নামের কেউ। নরওয়ের এ ঘটনাই আগুন জ্বালিয়ে দিতো বিশ্বরাজনীতিতে। ঘটনাটি যদি একজন ব্রেইভিক না ঘটাতো কিংবা ধরা না পড়তো, তাহলে এজন্য নির্বিচারে মুসলমানদের দায়ী করা হতো। আসামী করা হতো আল কায়দাকে কিংবা বলা হতো পাকিস্তান ইয়েমেন কিংবা অমুক দেশের সন্ত্রাসীরা এর সাথে জড়িত। অতএব দেশটি পড়তো মহাসংকটে। হয়তো জঙ্গিবিমান উড়াল দিতো, আমেরিকা ও ন্যাটোবাহিনী খোলে দিতো নতুন যুদ্ধফ্রন্ট। ইউরোপ আমেরিকার মুসলমানরা পড়তো নিরাপত্তা ঝুঁিকতে। দেশে দেশে থিংকট্যাঙ্কগুলো গেলো গেলো রবে হাহাকার শুরু করতো, ইসলাম ও সন্ত্রাসবাদের মধ্যে সহাবস্থান আবিস্কার করে বুদ্ধিজীবিরা চড়ামাত্রার রচনাবলী উদগীরণ করতেন, মানবাধিকার সংগঠনগুলোর মাতমে বাতাস ভারি হয়ে উঠতো, মিডিয়াগুলো শুরু করতো বুকচাপড়ানি, দাঁড়ি-টুপিওয়ালাদের জন্য সৃষ্টি হতো নারকীয় পরিস্থিতি, সব মুসলমান সন্ত্রাসী নয়, তবে সব সন্ত্রাসীই মুসলমান এই আওয়াজ আরো জোরালো হতো, পশ্চিমের কাছে মগজবন্ধকদেয়া মুসলিম সুশীলরাও এই মিছিলে শামিল হতো, বাংলাদেশেও দেখতাম এর গণগণে উত্তাপ… … কিন্তু হলোনা, দাও ফসকে গেলো। এ নিয়ে এখন আর টু শব্দটিও উচ্চারিত হচ্ছেনা। সবাই চুপচাপ হয়ে গেছে। এ রকম হওয়াটা নতুন নয়। ১৯৯৬ সালের মার্চে স্কটল্যান্ডে থমাস হেমিল্টন হত্যা করে ১৬ শিশুকে। ১৯৯৬ সালের এপ্রিলে অস্ট্রেলিয়ার মার্টিন ব্রায়ান হত্যা করে ৩৫ জনকে। ১৯৯৯ সালের এপ্রিলে কলরোডায় কলম্বিয়ান হাইস্কুলে এরিক হেরিস হত্যা করে ১৭জনকে। ২০০২ সালে জার্মানিতে রর্বাট স্টিংহেওসর হত্যা করে ১৯ জনকে।
২০০৭ সালের এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ায় সিরহুই চত্ত নামের বন্দুকধারী ৩২ জনকে হত্যা করেছিলো। কই? এইসব সন্ত্রাসী ঘটনার নায়কদের জন্যে কেউ তো সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে খৃষ্টানদের দিকে ঢালাওভাবে তীর নিপে করেনি। কাটগড়ায় দাড় করানো হয়নি খৃষ্টধর্মকে। কিন্তু ইসলামের েেত্র নিয়ম আলাদা। ইহুদী নিয়ন্ত্রিত আন্তর্জাতিক মিডিয়া যেকোন প্রসঙ্গে ইসলামকে কালো বিড়াল বানাতে খুবই উৎসাহী। মিডিয়া বরাবরই পাশ্চাত্য সভ্যতাকে সন্ত্রাসের শিকার এবং প্রতিপ হিসেবে দেখাচ্ছে এবং ইসলামকে সন্ত্রাসের জন্য দায়ী করছে। অথচ পশ্চিমারাইতো সবচে বেশি ধ্বংশ ও গণহত্যা দ্বারা পৃথিবীকে বিপন্ন করেছে। পশ্চিমা হামলাবাজরাইতো আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজল্যান্ডের আদিবাসীদের গোটা জনগোষ্ঠীকে খুন করে খতম করে দিয়েছে। ইংরেজরা কতো বর্বর, এর প্রমাণ হলো তারা অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসী সন্তানদের হত্যা করে তাদের কুকুরের খাদ্য সরবরাহ করতো। তারা আফ্রিকা থেকে মানুষ শিকার করে আমেরিকার হাটে বিক্রি করতো। পশ্চিম ইউরোপীয়রা আমেরিকার রেড ইন্ডিয়ান জাতিকে হত্যা করে সম্পূর্ণ নিঃশেষ করে দিয়েছিল। ধর্মের নামে জবরদস্তি করা তাদেরই আবিস্কার। মুসলিম আগমনের পূর্বে একমাত্র স্পেনে ৬১২ থেকে ৬২০ মাত্র আট বছরে ৯০ হাজার ইহুদিকে জোর করে খ্রিষ্টান বানানো হয়। পঞ্চদশ শতাব্দীতে রোমের পোপ যখন স্পেন ও পর্তুগালকে সারা দুনিয়া ভাগাভাগি করে যেখানে যেভাবে খুশি দখল করার অধিকার দিয়ে দিলেন, তখন তারা দেশে দেশে অখ্রিষ্টানদের ওপর নির্যাতনের অবিশ্বাস্য দাস্তান তৈরি করে। ইংল্যান্ডে যখন প্রটেস্ট্যান্ট মতবাদ প্রতিষ্ঠিত হলো, তখন প্রেসবাইটেরিয়ান ও রোমান ক্যাথলিকদের যেখানে পাওয়া যেত হত্যা করা হতো । স্কটল্যান্ডে তাদেরকে ধরে ধরে গরম লোহা দিয়ে দেহে সেক দেওয়া হতো। ইংল্যান্ডে এরিয়ান নামক একেশ্বরবাদী খ্রিষ্টানদের জীবন্ত দগ্ধ করে হত্যা করা হতো। ইহুদিদের যখন-তখন ধরে এনে ফাঁসি দেওয়া হতো। ধর্মের কারণে তারা স্যক্সন, ফ্রিসিয়ান্স ও বহু জার্মান উপজাতিকে ধবংশ
ফেলে। ক্রুসেডের সময় জেরুজালেম দখল করে তারা সত্তর হাজার মানুষ হত্যা করে। ইউরোপে ধর্মের নামে ১৩৩৭ থেকে ১৪৫৩ সাল পর্যন্ত চলতে থাকে ভয়াবহ হত্যাকান্ড। ইংল্যান্ডের পাঁচ জন রাজা, ফ্রান্সের পাঁচজন রাজা ও দুই দেশের তিনটি প্রজন্ম শান্তি কী, জিনিস এ সময় তা দেখে নাই। এসময়েই ফ্রান্সে ঘটে জোয়ান অব আর্কের আবির্ভাব। যাকে ইংরেজরা চার্চের পরামর্শে ডাইনি ঘোষনা করে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করে ফেলে। আরেক হত্যাযজ্ঞ শুরু হয় ১৬১৮ সালে। চলতে থাকে ১৬৪৮ সাল পর্যন্ত। এটা শুরু হয় রোমান ক্যাথালিক ও প্রটেস্টান্টদের ভিবিন্ন গ্রুপের
মধ্যে। স্পেন ও নেদারল্যান্ডের রাজা দ্বিতীয় ফিলিপ ক্যাথলিকবাদকে প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে প্রটেস্টান্টদের রক্ত ঝরানো শুরু করেন। এটা শুরু হয় ইংল্যান্ডেও। তারপর প্রটেস্টান্টরা শক্তি সঞ্চয় করে। প্রটেস্টান্ট রাজা ৮ম হেনরী মতা গ্রহণ করেন। তিনি আরম্ভ^ করেন ক্যাথলিক নিধন। কিন্তু তার মৃত্যুর পর তার কন্যা রানী মেরি টিউডর পুনরায় চালু করেন ক্যাথলিক মতবাদ। শুরু করেন প্রটেস্টান্ট হত্যা। ফলে তার নাম হয় ব্লাডি মেরি। স্পেনের ক্যাথলিকগণ পেট্রো মেনেনজেডের নেতৃত্বে ফরাসী প্রটেস্টান্ট শহর ফোর্ট কেরোনিন আক্রমন করে সব মানুষ হত্যা করে ফেলেন। মেননজেড হত্যালীলা প্রত্য করে বলেন, আমি ফারসীদের মারছি না, মারছি প্রটেস্টান্টদের। এর প্রতিশোধে ১৫৬৮ খ্রিষ্টাব্দে ফারসিরা স্পেনের ফোরিডা, এলাকায় সেন্ট আগস্টান শহর আক্রমণ করে সব মানুষ হত্যা করে ফেলে। ফরাসীদের নেতা তখন এ দৃশ্য দেখে বলেন, আমি স্প্যানিশদের মারছি না মারছি বিশ্বাসঘাতক, ডাকাত ও খুনীদের। স্পেন থেকে মুসলিম উৎখাত পর্ব স্মরণ করুন, বিশ ল মুসলমানকে তারা শুধু হত্যা করেনি, শুধু ল ল গ্রন্থই পুড়ায়নি বরং তারাই তৈরি করেছিল নিষ্ঠুর ধর্মীয় উৎপীড়ন কেন্দ্র। মুসলমান ও ইহুদিদের ধরে এনে বলা হতো হয় খৃষ্টান হও, নতুবা মৃত্যুকে গ্রহন করো। যারা খ্রিষ্টান হতো না তাদেরকে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করা হতো। এর সাথে স্মরন করুন প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ল ল মানুষ হত্যার ইতিহাস। স্মরন করুন হামবুর্গ ড্রেসডেন টোকিও হিরোসিমা ও নাগাসাকিতে এটম ফেলে অগনিত মানুষ হত্যার ইতিহাস। স্মরন করুন ১৯৪৫-৫০ সাল পর্যন্ত খাদ্য পানি না দিয়ে ল ল জার্মান হত্যার ইতিহাস। স্মরন করুন তথাকথিত ‘জমি দখলের’ নামে আমেরিকার সৈন্য ও দখলদার লেলিয়ে ল ল ভূমিপুত্র হত্যার ইতিহাস। স্মরণ করুন সিআইএ’র ফক্সিন কর্মসূচীর আওতায় ১৯৬৮ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত চল্লিশ ল ভিয়েতনামী হত্যার ইতিহাস। স্মরণ করুন মার্কিন মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানীর অপকর্মে ষাট ল ব্রাজিলিয়ান ইন্ডিয়ানের মৃত্যুর ইতিহাস। স্মরণ করুন আশির দশকে প্রেসিডেন্ট রিগান কর্তৃক সিআইএ দ্বারা কন্ট্রারা, নিকারাগুয়া ও এলসালভাদরে এক ল আশি হাজার মানুষ হত্যার ইতিহাস।
স্মরণ করুন ১৯৯১ সালে ক্যান্সার জিবানুবাহী বোমা নিপে করে ইরাকে ২০ ল মানুষ হত্যার ইতিহাস। স্মরণ করুন প্রেসিডেন্ট বুশের নির্মমতা, যে ইরাকের এক চতুর্থাংশ মানুষকে হত্যা করেছে। হত্যা করেছে ল ল আফগানিকে। এর সাথে যুক্ত করুন সোভিয়েত ইউনিয়নের রাষ্টীয় গণহত্যা। যারা নীতি স্থির করেছিল পৃথিবীর তিনভাগ মানুষ হত্যা করে বাকি একভাগকেও যে কোন উপায়ে কম্যুনিস্ট বানাতে (দেখুন ম্যক্সিম গোর্কীর প্রতি লেনিনের পত্র) এরই আওতায় অসংখ্য অগনিতমানুষকে সাইবেরিয়ার বরফে নির্বাসনে প্রেরণের কথা স্মরণ করুন। স্মরণ করুন বসনিয়া-হার্জেগোভিয়ায় জাতিগত নিধনে অগণিত মানুষ হত্যার ইতিহাস। স্মরণ করুন ফিলিস্তিনে ইহুদিদের জাতিগত নিধন ও উচ্ছেদযজ্ঞে ল ল মানুষের মৃত্যুর করুণ ইতিহাস। স্মরণ করুন শাবরা-শাতিলার নির্মম গণহত্যা, স্মরণ করুন নাবলুস- জেনিনে অগণিত মানুষ হত্যা করে তাদের লাশের ওপর বুলডোজার চালিয়ে দেয়ার অসুরীয় উন্মত্ততা এবং ইতিহাসের প্রতিটি ধ্বংযজ্ঞ প্রত্য করুন। দেখতে পাবেন সন্ত্রাসের কারা ধারক, কারা এবং লালনকারী! সাম্রাজ্যবাদী মিডিয়া মানুষের চোখে ধুুলো দিচ্ছে। তারা প্রচার করছে কুরআানে নাকি সন্ত্রাসের ইন্ধন রয়েছে। কথাটা তারা বললেও প্রমাণ উপস্থাপনের সাধ্য তাদের নেই। কুরআনে সন্ত্রাসের ইন্ধন নেই, কিন্তু তারা কুরআনের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করছে। আর ইহুদিদের ধর্মগ্রন্থে সন্ত্রাসের উপাদান থাকলেও সেটা চেপে রাখা হচ্ছে।
ইহুদিদের ধর্মগ্রন্থ পড়–ন। পড়–ন ওল্ড টেস্টামেন্টের ডিউটারনমির বর্ণনা। সেখানে স্পষ্ট বল হয়েছে, ‘যখন তুমি কোনো নগরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করিতে তাহার নিকটে সমুপস্থিত হইবে তখন তাহার কাছে সন্ধির কথা ঘোষণা করিবে। তাহাতে সে যদি সন্ধি করিতে সম্মত হইয়া তোমার জন্য দ্বারা খুুলিয়া দেয়, তবে সেই নগরে যে সমস্ত লোক পাওযা যায়, তাহারা তোমাকে কর দিবে ও তোমার দাস হইবে। কিন্তু যদি সে সন্ধি না করিয়া তোমার সহিত যুদ্ধ করে তবে তুমি সেই নগর অবরুদ্ধ করিবে। পরে তোমার ইশ্বর সদাপ্রভু তাহা তোমার হস্তগত করিলে তুমি তাহার সমস্ত পুরুষকে খড়গধারে আঘাত করিবে। কিন্তু স্ত্রীলোক, বালক- বালিকা ও পশুগণ প্রভৃতি নগরের সর্বস লুটদ্রব্য আপনার জন্য লুটরূপে প্রহণ করিবে। এই জাতিদের যে সকল নগর তোমার ইশ্বর সদাপ্রভু অধিকারার্থে তোমাকে দিবেন, সেই সকলের মধ্যে শ্বাসবিশিষ্ট কাহাকেও জীবিত রাখবে না। তুমি আপন ইশ্বর সদপ্রভুর আজ্ঞানুসারে তাহাদিগকে হিত্তীয়, ইমোরীয়, কনানীয়, পরিসীয় ও বিযুবীয়দেরকে নিঃশেষে বিনষ্ট করিবে।’ (২০: ১০-১৭) এই বর্ণনার সাথে মধ্যপ্রাচ্যে ইহুদিদের মুসলিম বিরোধী ‘এক্সটারমিনেট’ তথা বিনাশের নীতিকে প্রত্য করুন। বুঝতে পারবেন তারা কতো ভয়ানক সন্ত্রাসী। অথচ এই সেই ইহুদি, ইউরোপে প্লেগ ছড়ানোর অজুহাতে যাদের দুই শতের বেশি সম্প্রদায়কে নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হয়েছিল। জারের শাসনে ইহুদি মহিলাদের বেশ্যার হলুদ টিকেট ছাড়া বড় শহরকেন্দ্রে থাকতে দেওয়া হতোনা। অস্ট্রিয়ার যুবরাজ আর্চডিউক ফ্রান্সিস ফার্ডিনান্দকে হত্যা করেছিলো কারা? ১৮৮১ সালে রাশিয়ার জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডার
ও তার পাশের ২১জনকে কারা হত্যা করেছিলো? আমেরিকার প্রেসিডেন্ট মেককিনলে ও ইতালির রাজা প্রথম হামবার্টকে কারা হত্যা করেছিলো? দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইহুদীবাদী সন্ত্রাসীগোষ্ঠি
হাগানো ইরগুণ, স্টার্নগ্যাং ইত্যাদি কাদের আশ্রয়ে প্রতিপালিত হচ্ছিলো? তারা কি গুপ্তহত্যা, বোমাবাজী ও জবরদখল দ্বারা গোটামধ্যপ্রাচ্যকে অস্থির করে তুলেনি? সেই সব সন্ত্রাসী নেতা মোশে দায়ান, আইজ্যাক রবিন, সেনচেম বেগিন, এরিয়েল শ্যারন ইসরাইলের জাতীয় নেতা হলেন। ১৯৬৮-১৯৯২ সাল পর্যন্ত জার্মানির বাদের মেনহুক গোষ্ঠীকি সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের বাজার গরম করে তুলেনি? তারাই তো হত্যা করলো জার্মানির ট্রহান্ডকে? ইতালির সাবেক প্রধানমন্ত্রী আলদো মোরোর হত্যাকারী রেড ব্রিগেড গ্রুপতো মুসলমান ছিলোনা? ১৯৮১ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী রাজিবগান্ধীকে হত্যা করেছিলো যে তামিল টাইগার, তারাতো মুসলমান নয়। চিলির জাতির জনক সালভেদর আলেন্দেকে হত্যা করেছিলো কারা? কারা হত্যা করেছিলো ল্যাতিন আমেরিকা মহানায়ক আরনেস্ত চে গুয়েভারাকে? মার্টিন লুথার কিং নিহত হয়েছিলেন কাদের হাতে? কঙ্গোর বিপ্লবী নেতা পেট্রিস লুমুম্বাকে হত্যা করেছিলো কারা? মার্কিন প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন, মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ফ্র্যান্সিসকো মাডেরো, ভাইস প্রেসিডেন্ট কোসে পিরেনা সুয়ারেজা, গ্রীসের রাজা জর্জ, রাশিয়ার ধর্মগুরু গ্রেগার রাসপুটিন, মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট দিয়েন, ইন্দোনেশিয়ার জাতির জনক সুকর্ণ, মাদাগাস্কারের প্রেসিডেন্ট টানানারিভে, দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট পার্ক চুংহি, লাইবেরিয়ার প্রেসিডেন্ট টলবার্টসহ অসংখ্য রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের হত্যাকারী কারা? সন্ত্রাসী সংগঠন কি শুধু মুসলমানদের মধ্যে? ইউরোপে আইরিশ রিপাবলিকান আর্মি হলো ক্যাথলিক সন্ত্রাসবাদী সংগঠন। স্পেন ও ফ্রান্সে সক্রিয় রয়েছে ভয়ংকর সন্ত্রাসী গোষ্ঠি ইটিএ ও বাস্ক। ১০০ বছর ধরে তারা খুনোখুনির কাজ চালিয়ে আসছে। জাপানের রেড আর্মির কথা ভাবুন। ১৯৯৫ সালে তারাইতো টোকিওর পাতাল রেলে বোমা হামলা করে বহু মানুষ
হত্যা করেছিলো। উগান্ডার লর্ডস স্যালভেশন আর্মির চেয়ে রক্তপায়ী সন্ত্রাসী গোষ্ঠি আফ্রিকায় আর আছে? খৃষ্টান সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসবাদতো আফ্রিকার দেশে দেশে জাহান্নামের সংগীত গেয়ে চলছে। কোথায় নেই চরমপন্থী সন্ত্রাসী গোষ্ঠী? ইসরাইল, ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, স্পেন, আমেরিকা, নেদারল্যান্ডসহ সর্বত্রই ইহুদী খৃষ্টান সাম্প্রায়িক সন্ত্রাসবাদ বিদ্যমান।
আমাদের প্রতিবেশি ভারততো হিন্দু সন্ত্রাসবাদের স্বর্গভূমি। শিবসেনা, বজরংদল, আর এস এস ইত্যাদি সংগঠন সে দেশে ভয়ানক শক্তিশালী। এদের নেতা-কর্মীরাই গুজরাটে জীবন্ত মুসলমানদের পুড়িয়ে হত্যা করেছিলেন। এদের হাতে প্রতিনিয়ত নিগৃহিত হচ্ছে মুসলিম, খৃষ্টান, বৌদ্ধসহ সংখ্যালঘু ভারতীয়রা। যারা হিন্দুত্ববাদী উন্মত্ততা নিয়ে বাবরী মসজিদ গুড়িয়ে দিয়েছিলো, শত শত দাঙ্গা সৃষ্টি করেছিলো, তারাই পরবর্তীতে ভারতের শাসকদল হয়েছে। এদের ছাড়াও ভারতে ডজন ডজন সন্ত্রাসী গ্রুপ তৎপর রয়েছে। আসামে রয়েছে ভয়ংকর উলফা শিখদের রয়েছে পাঞ্জাব মিলিট্যান্ড, ত্রিপুরা, মিজোরাম ও নাগাল্যান্ডে জালের মতো ছড়ানো আছে অসংখ্য সন্ত্রাসী সংগঠন। এদের সন্ত্রাস, সহিংসতা, গণহত্যা, মানবাধিকার লংঘনের ঘটনা পৃথিবীকে বিপন্ন করেছে, করে চলছে। আত্মঘাতি হামলা, পাতাল রেলে হামলা, বোমা মেরে হোটেল-হাসপাতাল উড়িয়ে দেয়াসহ ভীতিকর সব সন্ত্রাসী প্রক্রিয়ার সূচনা এরাই ঘটিয়েছে। এই সবের প্রতি চোখ বন্ধ করে থাকবেন। আর ফিলিস্তিন ইরাক কাশ্মীর আফগান চেচনিয়া ইত্যাদিতে স্বাধীনতার জন্য জীবনপণ সংগ্রামে নিয়োজিত মুজাহিদদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেবেন সমস্ত সন্ত্রাসের দায়ভার, এ অবিচার আর কতোদিন? সত্যের বদঅভ্যাস হলো সে মাটি ফাটিয়ে নিজেকে জাহির করে এবং অবিচারকে অবিচার হিসেবে চিনিয়ে দেয়। সত্য যখন বলতে শুরু করে, তার মুখ সেলাই করার সাধ্য তখন কার?