মঙ্গলবার, ৩১শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৬ই জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি

নওমুসলিমদের সাক্ষাৎকার [পর্ব-১১] :: আবদুল হালিম (নির্মল কুমার)-এর সাক্ষাৎকার


আমাদের নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হলেন সর্বশেষ নবী। এখন মানুষের কাছে পয়গাম নিয়ে যাওয়া আমাদের কাজ। আমরা এখন জ্ঞান ও যুক্তির কাল পার করছি। হয়তো আমার এবং আমার পিতাজীর মতো আরও অসংখ্য মানুষ আছে যারা অমুসলিম পরিবারে জন্মেছেন ঠিক কিন্তু তারা স্বভাবজাতভাবে মুসলমান। আমাদের তাদের কথা ভাবতে হবে। তাদের জন্য দুআ করতে হবে। আল্লাহ তায়ালা আমাকে একজন আদর্শ মুসলমান হিসেবে কবুল করুন। হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খাঁটি উম্মত হিসেবে কবুল করুন। যেন বেহেশতে গিয়ে তাঁর সামনে দাঁড়াতে পারি। জানা নেই কখন মৃত্যুর পয়গাম এসে হাজির হয়।
জীবনের শেষ সন্ধ্যা কখন এসে হাজির হয়।


আহমদ আওয়াহ: আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু!
আব্দুল হালিম: ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু!

আহমদ আওয়াহ: আবদুল হালিম ভাই! আপনার সাথে আরমুগানের পক্ষে কিছু কথা বলতে চাই।
আব্দুল হালিম: হ্যাঁ! অবশ্যই বলুন, এটা আমার জন্য অনেক বড় সৌভাগ্যের বিষয়। আরমুগানে আমার সাক্ষাৎকার ছাপা হবে। এত বড় একটা দাওয়াতী ম্যাগাজিনে আমার নাম যাবে এটা অবশ্যই খুশির কথা।

আহমদ আওয়াহ: প্রথমেই আপনার পারিবারিক পরিচয় ও লেখাপড়া সম্বন্ধে জানতে চাইবো।
আব্দুল হালিম: আমি বিহারের বেগুসারায় জেলার এক রাজপূত খান্দানে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার জন্ম এখন থেকে ২৩ বছর আগে। আমার পারিবারিক নাম নির্মল কুমার। আমার পিতাজীর নাম গঙ্গাপ্রসাদ। তিনি ছিলেন একজন ফার্মাসিস্ট। আমরা ছয় বোন এবং তিন ভাই। তারা সবাই আলাদা থাকছে। আমার মা হেলথ বিভাগে এলএইচবি করা শিক্ষিতা মহিলা। আমার প্রাথমিক লেখাপড়া হয়েছে শাহ্পুরে। তারপর সমস্তিপুর মহাবিদ্যালয় থেকে বিএ করেছি। আমার পিতাজি ছিলেন স্বভাবগতভাবেই মুসলমান। মূর্তিপূজাকে তিনি চরম পর্যায়ের নির্বুদ্ধিতা মনে করতেন। এর প্রতি তার ঘৃণা ছিল চরম পর্যায়ের। তাছাড়া ছোটকাল থেকেই লোকেরা যখন মন্দিরে পূজা করতে যেতো আমি বলতাম, এই পাথরগুলোর মধ্যে এমন কী আছে? বিজ্ঞানের এই যুগে তোমরা স্বহস্তে তৈরি মূর্তি পূজা করছো এর কোনো মানে হয়?
পাঁচ বছর আগের কথা। আমি একটি কাজে পানিপথ এসেছি। আমার এক বন্ধু আমাকে ডেকে পাঠিয়েছিল। পানিপথ ইন্টারন্যাশনালে সে আমাকে ডায়িং অপারেটর হিসাবে চাকুরি ধরিয়ে দিয়েছিল। চাকুরির ভেতর দিয়েই সে আমাকে কাজ শিখিয়েছে। তারপর সেই ফ্যাক্টরিটা তার হাত ছাড়া হয়ে যায়। আমিও পানিপথ ছেড়ে দিই। সেখান থেকে হিমাচলে চলে যাই। স্বরস্বতী স্পিনিং মিল্ েআমি ডায়িং অপারেটর হিসেবে নতুন চাকরি নিই।

নওমুসলিমদের সহযোগিতার জন্য এগিয়ে আসুন

আহমদ আওয়াহ: আপনার ইসলাম গ্রহণ সম্পর্কে কিছু বলুন।
আব্দুল হালিম: আমাদের নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, প্রতিটি শিশুই মুসলমান হয়ে জন্মগ্রহণ করে। অতপর তার বাবা-মাই তাকে ইহুদি-খৃষ্টান বা অগ্নিপূজক বানায়। এই পৃথিবীকে যিনি সত্য শিখিয়েছেন তাঁর কথায় কী কোনো সন্দেহ থাকতে পারে? ছেলেবেলা থেকেই ইসলাম আমার পছন্দের ধর্ম। আমি আগেও বলেছি মূর্তিপূজারীদের দেখে আমার হাসি পেত। আমি এমনও দেখেছি একটি কুকুর মন্দিরে ঢুকে পূজারীর প্রসাদ খেয়ে যাচ্ছে। প্রসাদ খেয়ে অন্য কোনো দেবতার মুখ চাটছে। এমনকি পা উঁচু করে মূর্তির মুখে প্রস্রাব করতেও দেখেছি। এই অবস্থা দেখে আমি পূজারীদের ডেকে বলতাম, তোমাদের ভগবানের উপর কিভাবে তার কুকুর প্রস্রাব করছে তোমরা তোমাদের ভগবানকে জলদি বাঁচাও। আমি যখন কুরআন মাজীদে হযরত ইবরাহিম আ.-এর ঘটনা পড়ি তখন আমার মনে হয় আমার মনের অবস্থাও অনেকটা ইবরাহীম আ.-এর মতই। তিনি ছিলেন আল্লাহর নবী। আমি তাঁর পায়ের ধূলার সমানও নই। তবে এতোটুকু অবশ্যই বলবো, স্বভাবগতভাবেই আমি ছিলাম ইবরাহিমী চরিত্রের মানুষ।

ভাই আহমদ! আপনাকে কিভাবে বুঝাবো, যখনই আযানের আওয়াজ আমার কানে আসতো মনে হতো আমার মালিক যেন আমাকেই ডাকছেন। আমাদের বাড়ির পাশে একটি মসজিদ ছিল। সেই মসজিদে একজন কারী সাহেব এতো চমৎকার আযান দিতেন আমি সবকিছু ভুলে সেই আযান শুনতাম। এমনও হতো আমি খাচ্ছি আর আযান শুরু হয়েছে আমার খাওয়া বন্ধ হয়ে যেত। পান করবো হাতে পানি নিয়েছি এমন সময় আযান। সব কাজ ফেলে আগে আযান শুনতাম তারপর কাজ শুরু করতাম। মাঝেমধ্যে বলতাম, একদিন আমিও আমার মালিকের ডাক শুনে চলে আসবো এবং মালিকের ঘরে গিয়ে কেবল তাঁর সামনেই লুটিয়ে পড়বো।

আমার আল্লাহ আমাকে এমন একজন পিতা দিয়েছিলেন যিনি ছিলেন স্বভাবগতভাবেই মুসলমান। তিনি আমাকে মূর্তিপূজারী হতে দেননি। আজ ভাবতেও কষ্ট হয় আমার পিতাজী কালেমা ছাড়াই দুনিয়া থেকে বিদায় গ্রহণ করেছেন। (দীর্ঘশ্বাস….) আমার আল্লাহ আমাকে পথ দেখিয়েছেন। কালা আমারেতে যখন আমি চাকরি নিই তখন ঐ ফ্যাক্টরিতে একজন মোল্লাজী ছিলেন। নাম তাওহিদ। দেখতে যেমন চমৎকার তার ঘন দাড়ি, গোল টুপি, ইসলামী পোশাক এসব তার সৌন্দর্যকে আরও ফুটিয়ে তুলতো। পুরো ফ্যাক্টরিতে এই যুবক ছিল আমার কাছে সবচে’ সুন্দর মানুষ। আমি একবার মনে মনে ভাবলাম, আমার মালিক আমাকে হিন্দু পরিবারে সৃষ্টি করেছেন। আমার ভেতরটা যেমনই হোক, আমি তো চাইলে লেবাসে আকার-আকৃতিতে বাইরে থেকে সুন্দর হতে পারি।

একবার সুযোগ পেয়ে আমি তাওহিদকে বললাম, আমি তোমার মতো পোশাক পরবো এবং দাড়ি রাখবো। তুমি আমাকে দুই সেট পোশাক এবং টুপি বানিয়ে দাও। সে বললো শুধু পোশাক দিয়ে কী হবে যদি পার পুরো মুসলমান হয়ে যাও। আমি বললাম আমি তো হিন্দু পরিবারে জন্মেছি, আমার মালিকই আমাকে হিন্দু বানিয়েছেন। আমি মুসলমান হব কী করে! তাওহিদ বললো আমি যেভাবে হয়েছি। আমি বললাম, তুমি তো জন্মেছই মুসলমান ঘরে। সে বললো না, আমি হিন্দু পরিবারেই জন্মেছিলাম। যৌবনে আমি শিবসেনার অত্যন্ত জানবাজ কর্মী ছিলাম। পরে আল্লাহ তায়ালা আমাকে হেদায়েত দান করেছেন। আমি কালেমা পড়েছি। আমি বললাম, তুমি কোথায় গিয়ে কালেমা পড়েছ? সে বললো দিল্লীতে আমাদের এক আব্বুজী আছেন, নাম মাওলানা কালিম সিদ্দীকি। তুমি চাইলে তাঁর কাছে গিয়ে মুসলমান হতে পারো।
তার সাথে আলাপ করে প্রোগ্রাম করলাম। শনিবার দিল্লী চলে গেলাম। হযরত তখন দিল্লীর খলিলুল্লাহ মসজিদে আমাকে কালেমা পড়ালেন। আমার নাম রাখলেন, আব্দুল হালিম। তারপর আমি চাকরী ছেড়ে দিয়ে তাবলীগে চলে গেলাম। আমাদের জামাত ছিল রাজস্তানে। আলহামদুলিল্লাহ! আমির সাহেব খুবই আন্তরিক মানুষ ছিলেন। আমার সাথে তিনি খুবই সহায়তার পরিচয় দিয়েছেন। মাত্র চল্লিশ দিনে পুরো নামায শিখিয়েছেন এবং সামান্য বয়ান করতেও শিখিয়েছেন।

আহমদ আওয়াহ: মুসলমান হওয়ার পর আপনার অনুভূতি কেমন হয়েছিল?
আব্দুল হালিম: পূর্ব থেকেই কুফর ও শিরকের পরিবেশ আমার কাছে খুবই অপছন্দ ছিল। মুসলমান হওয়ার পর মনে হয়েছে, এতো দিন খাঁচায় বন্দী আত্মা মুক্ত হয়েছে। মনে হয়েছে আমি যেন এতোদিন এক অপরিচিত জগতে বাস করছিলাম, এখন আমি আমার পরিচিতজনদের ফিরে পেয়েছি। ইসলাম গ্রহণ করার পর আমি গভীর স্বস্তি অনুভব করেছি। হযরত আমাকে পরামর্শ দিয়েছিলেন, ইসলামের পূর্ণ স্বাদ পেতে হলে আপনাকে গভীরভাবে ইসলাম সম্পর্কে জানতে হবে। মূলত এ উদ্দেশ্যেই তিনি আমাকে ফুলাতের জুনিয়র হাই স্কুলে শিক্ষকতায় বসিয়ে দিয়েছিলেন। আলহামদুলিল্লাহ! আমি খুবই আন্তরিকভাবে এবং মনে প্রাণেই ইসলামকে পড়ছি। জানবার চেষ্টা করছি।

আহমদ আওয়াহ: আপনার ইসলাম গ্রহণের কথা আপনার পরিবার এবং আত্মীয় স্বজনকে বলেছেন?
আব্দুল হালিম: এখনও আমি বাড়িতে যাইনি। হ্যাঁ, আমার ছোট ভাইয়ের সাথে ফোনে কথা হয়েছে। তাকে এবং মাকেও বলেছি। আমার ছোট ভাই ইলেকট্রিক ইঞ্জিনিয়ার তাকে আমি ফোনে ইসলামের দাওয়াতও দিয়েছি। চার-পাঁচবার কথা হওয়ার পর ফোনেই কালেমা পড়েছে। ফোনে মায়ের সাথে কথা বলেছি। মুসলমান হয়েছি শুনে খুব খুশি হয়েছেন। বলেছেন, যেটা সত্য সেটাই মেনে চলবে। আমাদের সাথে তোমার সম্পর্ক তো ছিল খুবই কাঁচা। মৃত্যু আসার সাথে সাথেই সে সম্পর্ক ভেঙ্গে যায়। পাকা এবং প্রকৃত সম্পর্ক তো হয় মালিকের সাথে। মালিকের সাথে মানুষের যে সম্পর্ক হয় তা সাত জনমেও ভাঙ্গে না। তুমি ভালোই করেছো তোমার মালিকের সাথে সম্পর্ক তুমি পাকা করে নিয়েছো।

আহমদ আওয়াহ: আপনার আব্বার ইন্তেকাল হয়েছে কতদিন আগে?
আব্দুল হালিম: ভাই! এই প্রশ্ন আমার অন্তরের জন্য গভীর বেদনাদায়ক। ইসলাম গ্রহণের পর এই প্রশ্নটিই আমাকে সবচে’ বেশি কষ্ট দেয়। এটা আমার অন্তরে একটা গভীর ক্ষত। আমার বাবা মূর্তিপূজাকে প্রচন্ডভাবে ঘৃণা করতেন, বিরোধিতা করতেন। সবসময় তার বন্ধুত্ব ছিল মুসলমানদের সাথে। অথচ তিনি ছিলেন হিন্দু রাজপূত। হালাল গোশত খেতেন। হিন্দুদের হোলি ইত্যাকার উৎসবকে উপহাস করতেন। মুসলমানদের সাথে ঈদ পালন করতেন। অথচ কোনো মুসলমান কখনও তাকে কালেমা পড়ার কথা বলেনি। আমার পিতাজী কারও মনে কষ্ট দেয়াকে ভয়াবহ অপরাধ মনে করতেন। বিপদগ্রস্তকে সাহায্য করা ছিল তার কাছে বড় পূণ্যের কাজ। আহমদ! হঠাৎ কী হলো, এক দুই ঘন্টার অসুস্থতা। তারপর বিদায়। কালেমা ছাড়া পৃথিবী থেকে বিদায় গ্রহণ করলেন। কালেমা ছাড়া তো কোনো আমল কবুল হয় না। আমার বাবা হয়তো জাহান্নামে জ্বলছেন। অথচ আপনি কতো ভাগ্যবান। আপনি একজন মুসলমান পিতার সন্তান। আপনার পক্ষে আমার মনের এই ক্ষত এবং বেদনার গভীরতা উপলব্ধি করা সম্ভব নয়। একবার ভেবে দেখুন, পুত্র জানে তার প্রিয়তম পিতা অনন্তকালের জন্য জাহান্নামে জ্বলবে। মাঝে মধ্যে আমার ভেতরে ক্ষোভের আগুন জ্বলে ওঠে।

মনে চায় আমি আমার পিতাজীর জাহান্নামের প্রতিশোধ সকল মুসলমান থেকে নেবো। কখনও-কখনও এই যন্ত্রণা আমাকে সারারাত ঘুমাতে দেয় না। মাঝেমাঝে চেঁচিয়ে উঠি। বলি হে আল্লাহ! আমার বাবা কালেমা ছাড়া মারা গেল আর এই জালেম মুসলমান সম্প্রদায় আমার বাবাকে একবার কালেমা পর্যন্ত পড়ালো না। আমার বিশ্বাস কোনো মিথ্যাবাদী মুসলমানও যদি তাকে কালেমা পড়ার দাওয়াত দিতো তাহলে তিনি কালেমা পড়ে নিতেন। আহা! আমার পিতাজী যদি একবার মাওলানা কালিম সিদ্দীকির সাক্ষাত পেতেন! (কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন….) আহ! যদি আমার জন্মই না হতো। আমার বাবা জাহান্নামে জ্বলছেন এই যন্ত্রণা লাঘবের কোনো ঔষধ নেই। আর এই যন্ত্রণায় আমার কোনো শরীক নেই।

আহমদ আওয়াহ: ভাই! আপনি এতো চিন্তা করবেন না। আপনাকে তো একজন মুসলমানই কালেমা পড়িয়েছে। তাছাড়া আপনার পিতাজী ছিলেন একত্ববাদী। তিনি কেবল আল্লাহকেই মানতেন। আপনি আশা রাখেন আল্লাহ তায়ালা আপনার পিতাজীকে কাফেরদের সাথে জাহান্নামে জ্বালাবেন না। আল্লাহ তায়ালার রহমতের প্রতি আশাবাদী থাকুন।
আব্দুল হালিম: ভাই আহমদ! আমার অবস্থা আজ এমন- বাবার কথা যখন ভাবি তখন মুসলমানদের প্রতি ক্ষোভ আমি নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। হ্যাঁ, আমার ইসলাম গ্রহণ আমার প্রতি আল্লাহ পাকের সবচে’ বড় করুণা। যখন আল্লাহর এই করুণার কথা ভাবি তখন মনেমনে লজ্জিত হই, তবে আমার বাবার প্রতি আমার যে যন্ত্রণাবোধ এটা কাউকে বোঝাতে পারবো না।

আহমদ আওয়াহ: হ্যাঁ, এটি ভাবার অধিকার আপনার আছে। তবে সেইসাথে আপনাকে এ-ও মনে রাখতে হবে, আল্লাহ তায়ালা আপনাকে মুসলমানদের মধ্যে শামিল করে নিয়েছেন। আপনি যেন মুসলমানদের মতো গাফেল হয়ে না পড়েন। আপনার পিতাজীর মতো আর কেউ যেন এভাবে পৃথিবী থেকে বিদায় না নেন। আব্বু প্রায়ই বলেন, আমরা সকলেই বলি, মুসলমান এটা করছে না ওটা করছে না। এই হক আদায় করছে না, ওই হক আদায় করছে না। অথচ এখন এটাই ভাবা সবচে’ ভালো যে, আমাকে আমার কর্তব্য আদায় করতে হবে।
আব্দুল হালিম: হ্যাঁ! ভাই, হযরত আমাকেও একথা বলেছেন। কয়েকবার বিশেষভাবে বলেছেন, শয়তান খুবই সতর্ক। বিশেষ করে দাওয়াতের কাজ থেকে মানুষকে ফিরিয়ে রাখার ক্ষেত্রে শয়তান কখনও ত্রুটি করে না। একজন মানুষ ঈমান ছাড়া মারা গেলে তার কী পরিণতি হবে একথা আমাদের ভাবতে হবে। তাদের কাছে ঈমান পৌঁছানোর কথা ভাবতে হবে। যেন আমাদের আত্মীয়-স্বজন প্রিয়জন দোযখে না পোড়ে। যারা খুব কাছের আত্মীয় তাদের প্রতি অধিকার বেশি। আলহামদুলিল্লাহ! বিষয়টা আমার বুঝে এসেছে। আমি এ বিষয়ে চেষ্টাও করছি। আল্লাহ তায়ালার শুকরিয়া আদায় করছি যে, এ পথে সফলতাও পেয়েছি। তবে আহমদ ভাই! আমার পিতাজির বন্ধন এমন এক সুদৃঢ় বন্ধন, তিনি ঈমান থেকে বঞ্চিত হয়ে এই পৃথিবী থেকে বিদায় গ্রহণ করেছেন এ কথা যখনই ভাবি আমি স্থির থাকতে পারি না।

আহমদ আওয়াহ: আপনার পিতাজির বিষয়ে আপনি নিশ্চিন্ত হোন। তিনি যদি শিরক না করে থাকেন। শিরকের প্রতি যদি তার ঘৃণা থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই দয়াময় তাকে ঈমানদারদের সাথেই হাশরের মাঠে ওঠাবেন।
আব্দুল হালিম: আপনার কথা সত্য হোক

আহমদ আওয়াহ: আরমুগানের পাঠকদের উদ্দেশ্যে আপনার কোনো উপদেশ?
আব্দুল হালিম: আমি শুধু এতটুকুই বলবো, আমাদের নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হলেন সর্বশেষ নবী। এখন মানুষের কাছে পয়গাম নিয়ে যাওয়া আমাদের কাজ। আমরা এখন জ্ঞান ও যুক্তির কাল পার করছি। হয়তো আমার এবং আমার পিতাজীর মতো আরও অসংখ্য মানুষ আছে যারা অমুসলিম পরিবারে জন্মেছেন ঠিক কিন্তু তারা স্বভাবজাতভাবে মুসলমান। আমাদের তাদের কথা ভাবতে হবে। তাদের জন্য দুআ করতে হবে। আল্লাহ তায়ালা আমাকে একজন আদর্শ মুসলমান হিসেবে কবুল করুন। হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খাঁটি উম্মত হিসেবে কবুল করুন। যেন বেহেশতে গিয়ে তাঁর সামনে দাঁড়াতে পারি।
জানা নেই কখন মৃত্যুর পয়গাম এসে হাজির হয়।
জীবনের শেষ সন্ধ্যা কখন এসে হাজির হয়।

আহমদ আওয়াহ: ভাই আব্দুল হালিম! আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আল্লাহ তায়ালা আপনার এই আবেগকে কবুল করুন। এই আবেগের কিছু অংশ আমাদেরও দান করুন।
আব্দুল হালিম: আপনাকেও ধন্যবাদ। আমিন!


সাক্ষাৎকার গ্রহণে
মাও. আহমদ আওয়াহ নদভী
মাসিক আরমুগান, মার্চ- ২০০৭

Series Navigation

Archives

May 2024
S S M T W T F
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031