বৃহস্পতিবার, ১০ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৯শে মহর্‌রম, ১৪৪৬ হিজরি

কেয়ামতের দিন কেউ কারও উপকারে আসবে না – তারাবীহ ২৭তম পাঠ

This entry is part [part not set] of 27 in the series দরসে তারাবীহ


আজ ২৭তম তারাবিতে সূরা নাবা থেকে সূরা নাস পর্যন্ত মোট ৩৭টি সূরা পড়া হবে। পারা হিসেবে আজ পড়া হবে ৩০তম পারা। পারাটির ‘সূরা বাইয়িনা, জিলজাল, নাসর, ফালাক ও নাস’ এ পাঁচটি সূরা ছাড়া সব ক’টি সূরা মক্কায় অবতীর্ণ। পারার অধিকাংশ সূরায় তাওহিদ, রিসালাত, আখেরাত, মৃত্যুপরবর্তী জীবন, হিসাব-নিকাশ, কেয়ামত এবং জান্নাত-জাহান্নাম প্রসঙ্গে আলোকপাত করা হয়েছে।

সূরা নাবায় অপরাধীদের পরিণাম প্রসঙ্গে আলোচনা রয়েছে। দুনিয়ার সবকিছুই মানুষের জন্য- এ কথাও বলা হয়েছে। কেয়ামতের দিন কাফেরদের হাহাকার ও আফসোসের বর্ণনার মাধ্যমে সূরাটি সমাপ্ত হয়েছে।

সূরা নাজিআতে যারা কেয়ামত অস্বীকার করে তাদেরকে ফেরাউনের পরিণতির কথা চিন্তা করতে বলা হয়েছে। সূরার শেষে জান্নাতের যোগ্য ও জাহান্নামের উপযুক্ত লোকদের আলোচনা রয়েছে।

সূরা আবাসায় অন্ধ সাহাবি আবদুল্লাহ বিন উম্মে মাকতুম (রা.) এর একটি ঘটনার উল্লেখ করে নবী কারীমকে সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এবং তাঁর উম্মতকে একটি বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আল্লাহর একত্ববাদের বিভিন্ন প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়েছে। কেয়ামতের দিন কেউ কারও উপকারে আসবে না- মর্মে আলোচনার মাধ্যমে সূরাটি সমাপ্ত হয়েছে।

সূরা তাকভিরে কেয়ামতকালীন যে পরিবর্তনগুলো ঘটবে, সে বিবরণ রয়েছে। সূরার শেষভাগে কোরআন এবং নবীজির নবুয়তের সত্যতার বিবরণ রয়েছে।

সূরা ইনফিতারে বড় মহব্বতের সঙ্গে মানুষের প্রতি অনুযোগ করে কিছু কথা বলা হয়েছে। ‘কিরামান-কাতিবিন’ শ্রদ্ধেয় আমল লিপিকাররা আমাদের সব আমল লিখে রাখছেন- মর্মেও সূরায় আলোচনা রয়েছে।

সূরা মুতাফফিফিনে যারা মাপে কম দেয়, মানুষের হক আদায় করে না; কিন্তু অন্যের কাছ থেকে নেওয়ার সময় পুরোপুরি নেয়, তাদের সম্পর্কে নিন্দা রয়েছে। তাছাড়া দুর্ভাগা-দুরাত্মা এবং সৌভাগ্যশীল-পুণ্যাত্মাদের পরিণতিও শোনানো হয়েছে সূরায়।

সূরা ইনশিকাকে কেয়ামতের দিন মানুষ তার যাবতীয় কৃতকর্মের ফল পাবে মর্মে আলোচনা রয়েছে। সে দিন যার আমলনামা ডান হাতে দেওয়া হবে সেই হবে ভাগ্যবান।

সূরা বুরুজে ‘আসহাবুল উখদুদ’ তথা পরিখা খননকারীদের কাহিনি বর্ণিত হয়েছে। যারা ঈমানদারদের প্রতি নির্যাতন করে ঘটনাটিতে তাদের জন্য অনেক সবক রয়েছে। কোরআনের মাহাত্ম্য ও বড়ত্বের বিবরণ দিয়ে সূরাটি শেষ হয়েছে।

সূরা তারিকে বলা হয়েছে, আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রত্যেকের জন্য তত্ত্বাবধায়ক ফেরেশতা নিযুক্ত রয়েছে। মানুষকে তার সৃষ্টির মূল উপাদান সম্পর্কে চিন্তাভাবনা করতে বলা হয়েছে। কাফেরদেরকে ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে সূরাটি সমাপ্ত হয়েছে।

সূরা ‘আলায় রবের তাসবিহের হুকুম দেওয়া হয়েছে। কোরআনের মাধ্যমে মানুষকে উপদেশ দিতে বলা হয়েছে। সফল তো সে, যে নিজের সংশোধন করে।

সূরা গাশিয়ায় কেয়ামতের বিভিন্ন প্রসঙ্গে আলোচনা রয়েছে। আল্লাহকে চেনার জন্য সৃষ্টির বিভিন্ন জিনিসের প্রতি দৃষ্টিপাত করতে বলা হয়েছে।

সূরা ফাজরে ধ্বংসপ্রাপ্ত বিভিন্ন জাতির ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে। মানুষের অকৃতজ্ঞতার কথা বলা হয়েছে। কেয়ামতের দিন মানুষ যে দুই দলে বিভক্ত হবে, সেই দুই দলেরও বর্ণনা রয়েছে সূরায়।

সূরা বালাদে বলা হয়েছে, দুঃখকষ্ট মানুষের জীবন সাথি। এরপর অহংকারী কাফেরদের কেয়ামতের ভয়াবহ দিনের কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেদিন ঈমান ও নেক আমল ছাড়া অন্য কিছুই কাজে আসবে না।

সূরা শামসে মানুষকে নেক কাজের উৎসাহ প্রদান এবং অন্যায়, অসৎ ও গোনাহের কাজের ব্যাপারে ভীতি প্রদর্শন ও সতর্ক করা হয়েছে। মানুষ যদি তাকওয়া অবলম্বন করে; তবেই সে সফল।

সূরা লাইলে মানুষের আমল যেহেতু ভিন্ন ভিন্ন; তাই ফলাফলও হবে বিভিন্ন ধরনের- মর্মে আলোচনা রয়েছে। সূরা দুহায় নবীজির প্রতি আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নেয়ামতের কথা বলা হয়েছে।

সূরা ইনশিরাহে নবীজি (সা.) এর ব্যক্তিত্ব এবং তাঁর উচ্চ মর্যাদার বিবরণ রয়েছে।

সূরা ত্বিনে বলা হয়েছে, আল্লাহ তায়ালা মানুষকে খুব সুন্দর করে সৃষ্টি করেছেন। মানুষের কর্তব্য হলো সর্বদা স্রষ্টার অনুগত হয়ে থাকা।

সূরা আলাকের সূচনা হয়েছে পড়ার নির্দেশের মাধ্যমে। তা ছাড়া বলা হয়েছে, ধনদৌলতের কারণে মানুষ আল্লাহর অবাধ্য হয়। নবীজির নামাজে-ইবাদতে বাধা দিত, এমন এক কাফেরের সমালোচনাও রয়েছে সূরায়।

সূরা কদরে লাইলাতুল কদরের ফজিলত এবং এ রাতে কোরআন নাজিল প্রসঙ্গে আলোচনা রয়েছে।

সূরা বাইয়িনায় নবী মুহাম্মদের রিসালাত ও নবুয়তের ব্যাপারে কিতাবিদের অবস্থান প্রসঙ্গে আলোচনা রয়েছে। দ্বীনের ভিত্তিমূল তথা ইখলাস বিষয়েও বলা হয়েছে। সূরার শেষে ভাগ্যবান মোমিন এবং হতভাগা কাফেরের পরিণতি বয়ান করা হয়েছে।

সূরা জিলজালে কেয়ামতের আগে সংঘটিত ভূকম্পের আলোচনা রয়েছে। ছোট-বড়, ভালো-মন্দ সবকিছুই মানুষ কেয়ামতের দিন দেখতে পাবে- মর্মেও আলোচনা রয়েছে।

সূরা আদিয়াতে মানুষের অকৃতজ্ঞতা প্রসঙ্গে আলোকপাত করা হয়েছে। কেয়ামতের দিন মানুষের সব গোপন কিছু প্রকাশ পেয়ে যাবে- মর্মে সূরায় আলোচনা রয়েছে।

সূরা কারিআয় কেয়ামত দিনের অবস্থা এবং সে দিন মানুষের আমলের ওজন করা হবে প্রসঙ্গে আলোচনা রয়েছে।

সূরা তাকাসুরে দুনিয়ার বিষয়-সম্পত্তি নিয়ে মানুষের অতিরিক্ত দৌড়ঝাঁপের সমালোচনা করা হয়েছে।

সূরা আসরে সময়ের শপথ করে বলা হয়েছে,ঈমান, আমল, হকের উপদেশ এবং সব্রের অসিয়ত- এ চারটি গুণ যদি কোন ব্যক্তির মধ্যে না থাকে তাহলে ক্ষতি অনিবার্য। তাই গুণগুলো অবশ্যই অর্জন করতে হবে।

আরো পড়ুন: “গত রমযান আর এ রমযানের মধ্যে কী পার্থক্য হয়েছে”

সূরা হুমাজায় কারও অগোচরে দোষ বলা, সামনাসামনি কারও বংশ কিংবা চেহারা-আকৃতির ব্যাপারে খোঁটা দেওয়া, বিদ্রুপ করা এবং দুনিয়ার ভালোবাসা- এ তিন ব্যাধির সমালোচনা করা হয়েছে এবং এসব অপরাধের কারণে জাহান্নামের আজাব ভোগের ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে।

সূরা ফিলে ‘আসহাবে ফিল’ তথা ‘হস্তি বাহিনীর’ কাহিনি বর্ণিত হয়েছে। কাবা শরিফ ভাঙতে এসে নিজেরাই ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল হস্তি বাহিনী।

সূরা কোরাইশে শীত-গ্রীষ্মে নিরাপদে কোরাইশের ব্যবসার সফর এবং এ নেয়ামতের শুকরিয়াস্বরূপ ইবাদতের নির্দেশনা রয়েছে।

সূরা মাউনে ঈমানদারদের কিছু গুণাগুণ এবং মোনাফেকদের কিছু দোষত্রুটি আলোচিত হয়েছে।

সূরা কাউসারে নবীজিকে কাউসার প্রদান, নামাজ ও কোরবানির নির্দেশ এবং নবীজির শত্রুদের কোনো নামধাম থাকবে না- মর্মে আলোচনা রয়েছে।

সূরা কাফিরুনে ঈমানের সঙ্গে কুফুরের কোনো সংমিশ্রণ হতে পারে না- মর্মে আলোচনা রয়েছে।

সূরা নসরে নির্দেশনা রয়েছে যে, সাহায্য পেলে বা কোনো ক্ষেত্রে বিজয় লাভ করলে আল্লাহর তসবি ও গুণকীর্তণ বেশি বেশি করে করতে হয়।

সূরা লাহাবে নবীজির চরম বিদ্বেষী শত্রু দুরাত্মা আবু লাহাব ও তার স্ত্রী উম্মে জামিলের পরিণতি সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে।

সূরা ইখলাসে আল্লাহর পরিচয়-তাওহিদ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।

সূরা ফালাকে সৃষ্টির সবকিছুর অনিষ্ট থেকে মানুষকে আল্লাহর আশ্রয় গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

সূরা নাসে মানুষ ও জিন-শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে আল্লাহর আশ্রয় গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

লেখক:মাওলানা রাশেদুর রহমান ।। পেশ ইমাম ও খতীব, কেন্দ্রীয় মসজিদ, বুয়েট

Series Navigation

Archives

July 2024
S S M T W T F
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031