শুক্রবার, ১৪ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৭শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
ইদানিং পুরো দেশেই তালাকের প্রবণতা আশংকাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। সিরিয়াল ও সিনেমা নাটকের প্রভাবে বহুগামিতার ভয়ানক গজব পুরো দেশটাই গিলে ফেলছে। জিনা আর ব্যাভিচারে ছেয়ে গেছে পুরো সমাজ।
হায়, আমার ধারণা ছিল গ্রামটা এ থেকে নিরাপদ। কিন্তু গ্রামের সত্যিকার চিত্র যখন কানে এল, কলজেটা কেঁপে উঠল। ঘরে ঘরে জিনায় সয়লাব।
ছেলে মেয়েগুলো বালেগ হতে না হতেই পর্নোগ্রাফীতে আসক্ত। মোবাইলে মোবাইলে অশ্লীল ফিল্মে পূর্ণ। চোখ কান নিরাপদ নয় অধিকাংশ যুবকের।
এমন এক নরাধম সমাজে বাস করি, যে সমাজে বোনের সাথে, সৎ মায়ের সাথেও জিনায় লিপ্ত নরপশুটা।
জিনার ভয়াবহতায়, বহুগামিতা আর পরকিয়ার নিকৃষ্টতায় পারিবারিক বন্ধন শিথিল হয়ে আসছে। বাড়ছে তালাক। ছিন্ন হচ্ছে পারিবারিক বন্ধন।
ফের? আবার সেই স্ত্রীকে নিয়েই আবার এক ঘরে থাকছে অনেক মানুষ। তিন তালাক দিয়ে সম্পর্ক ছিন্ন করার পরও চলছে সংসার। মানে এতো সংসার নয়। জিনার সংসার। পাপের সংসার। যে ঘরে জন্ম নিবে জারজ সন্তান।
আফসোস। বড় আফসোস। তালাক কিভাবে দিতে হবে? কয় তালাক দিতে হবে? কখন তালাক দিতে হবে? কয়টা দিলেই চলে? একজন মুমিন মুসলিমের জন্য আবশ্যকীয় এসব বিধান সম্পর্কে কোন ধারণাই রাখে না অধিকাংশ নামধারী মুসলিমটা।
কিছু হলেই তিন তালাক দিয়ে দেয়া হচ্ছে।
কিন্তু কেন?
তিন তালাক কেন দিবেন?
স্ত্রীকে রাখতে চাচ্ছেন না? সংসার করতে চাচ্ছেন না?
তো এক তালাক দিলেইতো হয়। তিন তালাক কেন দেন?
এক তালাক দিলে, ইদ্দত শেষেতো উক্ত স্ত্রী স্বামী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এরপর ইচ্ছে করলে অন্যত্র বিয়ে করতে পারে উক্ত স্ত্রীলোক।
তারপরও তিন তালাক দেবার কী প্রয়োজন?
কেন বিয়ের কাবিননামায়, তালাকের নোটিশে তিন তালাক দেবার কথা লেখা হয়?
কেন? কেন? কেন?
এক তালাকের কথা লিখতে কে বাঁধা দেয়? তাহলে সুপরিকল্পিতভাবে, আইনের মারপ্যাঁচে সমাজে জিনা-ব্যাভিচার ছড়ানোই কি এসব মানসিকতার উদ্দেশ্য?
আবেগে কেউ তালাক দিতে আদালতে গেলেই লিখে দেয়া হয়, তিন তালাকের কথা। অতঃপর দু’দিন পর, তাদের মাঝে বনিবনা হয়ে গেলেও আর ফিরে আসার কোন সুযোগ থাকে না। তখন ধর্মীয় বিধান লঙ্ঘণ করে একসাথে ঘর করে, মানে জিনা করে বেড়ায় পুরো জীবন।
কিন্তু যদি এক তালাক লিখতো, তাহলে পরে স্বামী স্ত্রীর মাঝে বনিবনা হলে একসাথে হবার সুযোগ থাকে। কিন্তু তিন তালাক দেবার মাধ্যমে সেই সুযোগের পথ বন্ধ করে দেয়া হয়।
কিন্তু কেন? কাজীকে এ হক কে দিয়েছে? কাবিননামার আঠার ও উনিশ নং প্যারায় কেন কাজী নিজের পক্ষ থেকে তিন তালাকের অধিকার লিখে দেয়?
কেন আদালতে গেলেই তিন তালাকের কথা লিখা হয়?
এক তালাকের মাধ্যমে কাজ হয়ে যাবার পরও তিন তালাক লিখে সামাজিক বন্ধন নষ্ট করার এ হীন কাজ কেন করা হয়?
সামান্য রাগারাগি, মনোমালিন্য হলেই তালাক কেন দিতে হবে? ভাবুন। জানুন। পরিবার ও সামাজিক বন্ধন অটুট রাখুন।
দু’টি হাদীস দিয়ে শেষ করছিঃ
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لَا يَفْرَكْ مُؤْمِنٌ مُؤْمِنَةً، إِنْ كَرِهَ مِنْهَا خُلُقًا رَضِيَ مِنْهَا آخَرَ
হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, কোন মুমিন পুরুষ যেন কোন মুমিন নারীকে শত্রু মনে না করে। কেননা, যদি সে তার এক কাজকে নাপছন্দ করে, তার অপর কাজকে পছন্দ করবে। {সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-১৪৬৯, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-৮৩৬৩}
عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” إِنَّ مِنْ أَكْمَلِ الْمُؤْمِنِينَ إِيمَانًا، أَحْسَنَهُمْ خُلُقًا، وَأَلْطَفَهُمْ بِأَهْلِهِ
হযরত আয়শা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, মুমিনদের মধ্যে সেই ব্যক্তি অধিকতর পূর্ণ মুমিন, যে ব্যক্তি সদাচারী এবং নিজ পরিবারের জন্য কোমল এবং অনুগ্রহশীল। {সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-২৬১২, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-২৪২০৪}
লেখকঃ মুফতি লুৎফর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।