বুধবার, ১৪ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৫ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সবচেয়ে প্রভাবশালী রোহিঙ্গা পরিবারটি এখন পথের ফকির

 মিয়ানমারের টম বাজারের  খালেদা বেগমের ছিল হার্ডওয়্যার, মুদির দোকানসহ বেশকিছু দোকান, যা অন্তত কোটি টাকা মূল্যের। বাড়িও ছিল ওই এলাকার মধ্যে সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন। মুসলিম অধ্যুষিত ওই বাজারে তারাই ছিলেন সবচেয়ে প্রভাবশালী।

সেনাবাহিনীর অত্যাচার-নির্যাতনের মুখে সব দোকান, বাড়িসহ সহায় সম্পত্তি ফেলে ১৫ দিনে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে অনেক কষ্টে নাফ নদ ও কাঁটাতারের সীমারেখা পার হয়ে চলে আসেন বাংলাদেশে। আসার পরপরই জানতে পেরেছেন, দোকান পাট ও বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। এদিকে, এখনো কোনো তাঁবু পাননি। মেলেনি কোনো ত্রাণও। আশ্রয় জুটেছে খোলা আকাশের নিচে। ফলে কোটিপতি থেকে মুহূর্তেই হয়ে গেলেন পথের ফকির।

কুতুপালং সড়কের কাছে একটি নালার কিনারে কচু বাগানে বসে থাকতে দেখা যায় তাকে। অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছেন অজানা, অচেনা পথের দিকে। সবকিছুই তার কাছে অপরিচিত। তার কোলজুড়ে ৩ মাসের একটি বাচ্চাকেও কান্না করতে দেখা যায়। গতকাল দুপুরে যখন খালেদা বেগমের সঙ্গে কথা হয় তখন তিনি ছিলেন ক্ষুধার্ত। কিন্তু চেহারায় ছিল আভিজাত্যের ছাপ। ডান হাতে ছিল একটি গোল্ডেন রঙের ঘড়ি। পরনের পোশাকও ছিল অনেকটা মার্জিত। কিন্তু লজ্জায় ত্রাণের জন্য হাত পাততে পারছিলেন না।

খালেদা খানম বলেন, ‘টম বাজার এলাকায় তারা ছিলেন রাজার হালে। কোনো কিছুর অভাব ছিল না। তাদের প্রায় ১২ একর জমি ছিল। ত্রিশটির মতো গরু ছিল। দোকান পাট ছাড়াও আরও কিছু সম্পদ ছিল। সব মিলিয়ে হবে কোটি টাকার। এখন কার কাছে যাব, কি করব কিছুই দিশা পাচ্ছেন না তিনি। যৌথ পরিবারের সদস্য আলেয়া বেগমের কোলেও দেখা যায় এক ছোট্ট শিশু।’

তিনি জানান, ‘বাংলাদেশে আসার পথে দুই লাখ মিয়ানমারের মুদ্রা কিয়াট নিয়ে আসলেও দালালদের খপ্পরে পড়ে আড়াই হাজার টাকায় তা বিক্রি করে দেন। গত দুই দিন কষ্ট করে এই টাকা দিয়ে পানি আর শুকনো কিছু খাবার কিনে বাচ্চাদের কোনোমতে খাওয়ান। কিন্তু পরিবারের অন্য সদস্যরাও না খেয়ে পথেই বসে রয়েছেন।’

ওই পরিবারের পুরুষ সদস্য আবদুল হামিদ ও মৌলভি মাইনুদ্দিন জানান, ‘তাদের পরিবারটি অনেক বড়। ৩০ সদস্যের সবাই বাংলাদেশে কষ্ট করে আসতে পারলেও সব সহায় সম্পত্তি ফেলে আসতে হয়েছে। এখন তারা শূন্য হাতে।’

Archives

November 2023
S S M T W T F
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
252627282930