রবিবার, ২১শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৩রা রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি
রুটিন মত সকাল সকাল বের হয়েছি। গন্তব্য উখিয়া থাইংখালি। কয়েক ক্যাম্পের আলেমরা জড়ো হয়েছেন মসজিদে। তাদের থেকে শিক্ষক নির্বাচন হবে। বাকিদের নগদ কিছু হাদিয়া দিয়ে বিদায়।
গাড়ী থেকে নেমেই মসজিদের উদ্দেশে হাঁটছি। একজায়গায় ছোট্ট জটলা দেখে থামলাম, এগিয়ে গেলাম।
সবাই যাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে, সে একজন আরাকানী মুহাজির। সকলের কৌতূহল তাকে ঘিরে। কারণ সে স্বাভাবিক নয়; বিকলাঙ্গ এবং বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী। উৎকট শব্দে চেচাচ্ছে। মুখ থেকে দু’পাশ গলে লালা পড়ছে। পাশেই কাপড় পেচিয়ে চোখ বের করে বসে আছেন একজন বৃদ্ধা, বয়স ষাটের ঘরের।
একজন শুনাচ্ছেন তাদের উপাখ্যান।
আর্মিরা হামলা করেছে গ্রামে। পুরুষদের ধরে ধরে হত্যা করছে। এক পর্যায়ে আগুন লাগিয়ে দেয় পুরো গ্রামে। যে যার মত ছুটছে দিকবেদিক। পালাতে পারছে না প্রতিবন্ধী রফিক!
ভাগ্যিস বাহিরে বসা ছিলো, না হয় আজ তাকে দেখা হতো না।
সবাই পালাতে পারে, ইয়া নাফসি করে করে, পারেন না একজন; তিনি মা!
সবার সাথে ছুটে মনে পড়েছে কলিজার ধনের কথা। মৃত্যুমুখে পড়া নিশ্চিত জেনেও তিনি ফিরেছেন। বুকে জড়িয়েছেন আদরের দুলালকে। কিন্তু বাঁচার উপায়? নিজেই যেখানে বিকল, বোঝা কাঁধে নেওয়ার সাধ্য কি হয়? কিন্তু তিনি মা, তার পরিচয় মা!
বস্তা ঝোলানোর মত করে কাঁধে চড়িয়েছেন নারীছেড়া ধনকে।
কচ্ছপ গতিতে চলছেন, আবার থামছেন, আবার চলছেন,
এভাবে নয়দিন!
গ্রামবাসীকে খুঁজে না পেলেও পেয়েছেন ভিন্ন আরেক পলায়নপর দলকে। তাদের থেকে কিছু খাবার পেয়েছেন এক পাহাড়ে চড়ে!
পাহাড়ে উঠতে বহুবার পদস্খলন হয়েছে, আঘাতে আঘাতে জর্জরিত হয়েছেন, আগলে রেখেছেন সন্তানকে, কারণ তিনি ‘মা’
সন্তানকে আগলে রাখতে পেরেই যেন সব কষ্ট ভুলেছেন, কারণ তিনি ‘মা’
যে টুকু খাবার ছিল তা সন্তানকেই দিয়েছেন, নিজে খেয়েছেন লতাপাতা!
এভাবে নয়দিন চলে তিনি এখন বাংলাদেশে! শরির কাঁপছে, কথা বলতে পারছেন না। পীপাসার্ত, ক্ষুধার্ত।
উপস্থিত প্রায় সবার চোখে জল, অনবরত জল গড়াচ্ছিল মায়ের চোখে!
বড্ড মনে পড়ছিল নিজ মাকে! আজ কতদিন দেখি না। আমাকেও তিনি এমন খেয়ে না খেয়ে বড় করেছেন। জীবনের সবটুকু ভালোবাসা দিয়ে আগলে রেখেছিলেন, তিনি “মা”, তার পরিচয় একটাই।
তোমারও কি “মা” আছে? আমার নেই। তুমি বুঝবে না আমাদের কষ্ট, বড় কষ্ট, শুধুই কষ্ট!
মা-মা- মা…..
رب ارحمهما كما ربياني صغيرا…