বৃহস্পতিবার, ১০ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৯শে মহর্‌রম, ১৪৪৬ হিজরি

বাইবেলই তাকে টেনে নিয়ে গেল ইসলামের পথে

ইসলামের সৌন্দর্য আমাদের জন্য আল্লাহর এক মহান অনুগ্রহ। অথচ আমরা যথার্থভাবে ইসলাম পালনের মাধ্যমে তা তুলে ধরছি না ।যারা ইসলাম সম্পর্কে মিথ্যা ও ভ্রান্ত ধারণা নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে তাদের কাছে এর সৌন্দর্য আর শান্তির অমিয় ফল্গুধারা পৌঁছে দিচ্ছি না। অথচ পৃথিবীতে হাজার হাজার মানুষ এই আলো থেকে বঞ্চিত’।

এমন এক মার্কিন নাগরিক ইউশা ইভান্স। বড় হয়েছেন সাউথ ক্যারোলিনার গ্রিনভিলে। তিনি এককট্টর মেথডিস্ট (খ্রিষ্টানদের একটি গোষ্ঠী) পরিবারে দাদা-দাদির সাথে থাকতেন। কৈশোরের শুরুতেই তার বাড়ির কাছেই এক চার্চের কার্যক্রমের সাথে খুব বেশি সম্পৃক্ত হয়ে পড়েন। তিনি শহরে ছোট্ট এক বাইবেল কলেজে ভর্তি হন; উদ্দেশ্য বিশ্বখ্যাত বাইবেল কলেজ ‘বব জোনস ইউনির্ভাসিটিতে ভর্তি হওয়া। তিনি নিয়মিত চার্চে যেতেন এবং সব বক্তব্য খুব আগ্রহ নিয়ে শুনতেন। তার খুব ইচ্ছে ছিল বাইবেলের টেক্সুয়াল ক্রিটিকস (মূল পান্ডুলিপি নির্ধারণ) হওয়ার।

শেখা শুরু করলেন গ্রিক আর হিব্রু। উদ্যমের এই দিনগুলোতে তারই চার্চের একজন মিনিস্টারের সাথে পড়া শুরু করেন বাইবেল; শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত। এভাবে, ছয় থেকে সাতবার পড়লেন পুরো বাইবেল । এই পড়াই তার খিস্টধর্মের বিশ্বাসের ভীত নাড়িয়ে দিলো। বাইবেলের বিভিন্ন জায়গায় অসংগতি আর পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দেখতে পেলেন। এ ব্যাপারে প্রশ্ন করলে তিনি উত্তর পেলেন “এর কিছু মানবিক ত্রুটি আছে। কিন্তু যে এটা বিশ্বাস করে, সে আস্থা রাখে। বিশ্বাস হচ্ছে পরিত্রাণের একমাত্র উপায়।”

তখন তিনি বুঝলেন বাইবেল সরাসরি স্রষ্টার বাণী নয়। এরপর তিনি খিস্টধর্ম ছেড়ে অন্যত্র স্রষ্টার সন্ধান শুরু করেন। সময়কাল ছিল ১৯৯৬ সালের গ্রীস্মকাল। এরপর তিনি একে একে ইহুদিবাদ, বুদ্ধধর্ম, উইকা, বুশিডো, হিন্দুইজম,নাস্তিক্যবাদ, কনফুসিয়ানিসম থেকে ইসলাম সবকিছুই পড়েন। ইসলাম সম্পর্কে তিনি যে বইটি পড়েন সেটি ছিল সম্পুর্ণ ভুলে ভরা। যেখানে লেখা ছিল মুসলিমরা আরব, তারা চন্দ্র ঈশ্বরের উপাসনা করে, নারীদের নির্যাতন করে। তাদের সবচেয়ে বড় কাজ অমুসলিম হত্যা করা । এরপর ধর্ম নিয়ে তার উৎসাহ নষ্ট হয়ে গেল। তিনি ধীরে ধীরে পাশ্চাত্যের গতানুগতিক জীবনে জড়িয়ে পড়েন। হিপ-হপ জীবনধারার পাশাপাশি অপরাধকর্মেও জড়িয়ে পড়েন। এরপর দুটি ঘটনা তাকে আবার ভাবিয়ে তুলল।

এক. একবার মাতাল অবস্থায় তিনি আর তার বন্ধু গাড়িতে ফিরছিলেন আর মারাত্মক এক দুর্ঘটনা ঘটিয়ে বেঁচে গেলেন। আর পুলিশ অফিসার অবাক হয়ে বললেন “সৃষ্টিকর্তার নিশ্চয়ই তোমাকে নিয়ে কোনো পরিকল্পনা আছে।

দুই. একবার এটিএম বুথে টাকা তুলতে গেলে এক সন্ত্রাসী তার মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে ট্রিগার চাপলেন অথচ গুলি বের হলো না। এই যাত্রায়ও প্রাণে বেচে গেলেন।

এরপর হঠাৎ একদিন শহরের এক আফ্রো-আমেরিকান মুসলিমের সাথে তার ধর্ম নিয়ে কথা উঠল। তখন সে বলল, ইসলাম নিয়ে তার পড়া বইয়ের কথা। এতে সেই মুসলিম ক্ষিপ্ত হলো আর বলল, ‘আমি মুসলিম কিন্তু আমি তা সঠিকভাবে পালন করি না কিন্তু তুমি শুক্রবার খুতবায় এসো।’

তার কথা মতো ইউশা মসজিদে গেলেও আমন্ত্রিত ব্যক্তির দেখা না পেয়ে অবাক হলেন। কিন্তু মসজিদের এক মিসরীয় মুসলিম তাকে ভিতরে ডেকে নিয়ে যান। ভিতরে ঢুকে তিনি কিছুটা ভয় পেয়ে যান এবং মাথায় অনেক চিন্তা ঘুরপাক খেতে থাকে। ইমাম যখন মিম্বারে উঠে আরবিতে খুতবা দিতে শুরু করলেন, ইউশা ভাবল নিশ্চয়ই তাকে মারার কথাই বলছে। ইউশা মনে মনে পালানোর পথ খুঁজছিলেন। পরক্ষণেই ইমাম যখন এই খুতবার ইংরেজি অনুবাদ পড়ে শোনালেন ইউশা হতভম্ব হয়ে যান। ভাবতে লাগলেন কতো বেশি উপেক্ষা আর তাচ্ছিল্যের সাথেই না এদের উড়িয়ে দিতে চেয়েছিলেন।

খুতবার বিষয় ছিল : আল্লাহর ক্ষমা আর তাওবাহ নিয়ে। তিনি আরো অবাক হন যখন সকলেই নামাজে সিজদাহ’র মাধ্যমে আল্লাহর ইবাদত করছিলেন। তিনি বুঝতে পারলেন, এরা সত্যিই স্রষ্টার ইবাদত করছে। এভাবে ইবাদত করেছেন ইব্রাহিম, দাউদ আর ঈসা আলাইহিস সালাম। জুমআ শেষে ইউশা কুরআনের একখানা কপি ইমামের কাছে চেয়ে নিলেন। এরপর অল্প সময়ের মধ্যে কুরআন পড়া শেষ করলেন। অবশেষে ১৯৯৮ সালের এক শীতকালে তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন।

ইউশা এখন পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে ঘুরে ঘুরে দাওয়াহ ওয়ার্কশপ পরিচালনা করেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্র আর মিশরে বিভিন্ন শিক্ষকের অধীনে পড়াশোনা করেছেন। নিজে দুটি টিভি স্টেশানের ফাউন্ডার ও কো-ফাউন্ডার। ওয়ান উম্মাহ্ তার একটি। তিনি শায়খ ওয়ালিদ আল-মেনেসীর অধীনে পড়াশুনা করছেন। কয়েকটি ডিসিপ্লিনে ব্ল্যাক বেল্টপ্রাপ্ত আর মিনেপোলিসে তিনি নিজেই মার্শাল আর্টস শেখান।

ইউশা ইভান্স-এর ওয়েবসাইট : http://yushaevans.com/

Archives

July 2024
S S M T W T F
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031