শুক্রবার, ২৬শে পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ই রজব, ১৪৪৬ হিজরি

পবিত্র কোরআন অকাট্য, নির্ভুল এবং ধ্রুব সত্য – তারাবীহ ৯ম পাঠ

This entry is part 9 of 27 in the series দরসে তারাবীহ


আজ নবম তারাবিতে সূরা হুদ এবং সূরা ইউসুফের ১-৫২ আয়াত পড়া হবে। পারা হিসেবে আজ পড়া হবে ১২তম পারা।

Default Ad Content Here

১১. সূরা হুদ: (মক্কায় অবতীর্ণ, আয়াত ১২৩, রুকু ১০) প্রথম পাঁচ আয়াত ব্যতীত সূরা হুদ পুরোটাই এ পারায়। সূরাটির সূচনাপর্বে কোরআনের আজমত ও বড়ত্বের কথা বর্ণনা করা হয়েছে। শব্দ, ভাষা, অর্থ- সবদিক দিয়েই পবিত্র কোরআন অকাট্য, নির্ভুল এবং ধ্রুব সত্য। তার বর্ণনায় কোনো বিরোধ নেই, কোনো কিছুই অযৌক্তিক এবং বাস্তব-বিরুদ্ধ নয়। এর অনুপম ভাষা এবং বর্ণনাধারা, অলৌকিক সাবলীলতা এবং প্রাঞ্জলতায় কটাক্ষ করার কোনো সুযোগ নেই। কোরআনের প্রতিটি তত্ত্ব এবং তথ্য অকাট্য, কালের পরিবর্তনে তাতে চিড় ধরার সম্ভাবনা মাত্র নেই, রোজ কেয়ামত পর্যন্ত এর সার্থকতা, উপাদেয়তা এবং প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। (১-৫)।

কোরআনের আজমত বর্ণনার পর তাওহিদের দাওয়াত দেওয়া হয়েছে। আল্লাহর একত্ববাদের বিভিন্ন প্রমাণ পেশ করা হয়েছে। (৬-১২)। যারা বলে, কোরআন মানব রচিত, তাদের কোরআনের অনুরূপ কিছু বানিয়ে দেখানোর জন্য চ্যালেঞ্জ দেওয়া হয়েছে। (১৩)। কিন্তু কখনোই কাফেররা এ চ্যালেঞ্জ গ্রহণের সাহস পর্যন্ত দেখাতে পারেনি এবং কেয়ামত পর্যন্তও পারবে না। কাফের ও ঈমানদারদের আলোচনা প্রসঙ্গে কাফেরদের উদাহরণ দেওয়া হয়েছে অন্ধ ও বধিরের সঙ্গে, আর ঈমানদারদের উপমা দেওয়া হয়েছে চক্ষুষ্মান ও শ্রবণসম্পন্ন ব্যক্তির সঙ্গে। (১৫-২৪)।

কোরআনের সত্যতা এবং তাওহিদ ও রিসালতের বাস্তবতার প্রমাণ উল্লেখের পর হজরত নুহ, হুদ, সালেহ, ইব্রাহীম, লুত, শুআইব, এবং মুসা (আ.) এর কাহিনি বর্ণনা করা হয়েছে। মূলত এ ঘটনাগুলো বর্ণনার একটি উদ্দেশ্য হলো নবী মুহাম্মদ (সা.) এর নবুয়তের সত্যতা এবং কোরআনের চির সত্য হওয়ার প্রমাণ পেশ করা।

সূরায় নবীদের ঘটনা আলোচনা প্রসঙ্গে হজরত নুহ (আ.) এর ঘটনা বর্ণনার পর বলা হয়েছে, এসব ঘটনা অদৃশ্য সংবাদের অন্তর্ভুক্ত, যা আমি তোমাকে ওহির মাধ্যমে জানাচ্ছি। ইতঃপূর্বে না তুমি জানতে এগুলো, আর না জানত তোমার জাতি। সুতরাং সবর করো, মুত্তাকিদের পরিণতি ভালোই হয়। (৪৯)। নবীদের ঘটনাগুলোয় বোধসম্পন্ন লোকদের জন্য রয়েছে অসংখ্য উপদেশ, আর রয়েছে নবীজি (সা.) এবং মুখলিস ঈমানদার ব্যক্তিদের জন্য সান্ত¡না ও দৃঢ়তার সবক। তাই ঘটনাগুলোর বর্ণনা প্রসঙ্গে নবীজি ও তাঁর উম্মতকে দ্বীনের ওপর ইস্তেকামাত ও জমে থাকার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। (১১২)।

বস্তুত ইস্তেকামাত এমন এক হুকুম, যার সম্পর্ক আকিদা-বিশ্বাস, কথা-কাজ এবং আখলাক-চরিত্র সবকিছুর সঙ্গে। ইস্তেকামাত অর্থ হলো সারা জীবন সেই শিক্ষার আলোকে চলা, যেভাবে চলার নির্দেশনা আল্লাহ তায়ালা দিয়েছেন। ইস্তেকামাতই হলো আসল কারামাত। ইস্তেকামাতের চেয়ে বড় কোনো কারামাত আর হতে পারে না। মুসা (আ.) এর ঘটনা আলোচনা প্রসঙ্গে গোনাহ ও নাফরমানির ব্যাপারে সতর্ক করে বলা হয়েছে, আল্লাহ ছাড় দেন, ছেড়ে দেন না। (১০২-১০৩)।

মূলত গোনাহ, সীমাতিরিক্ত ভোগবিলাস এবং মন্দ কাজে বাধা না দেওয়ার কারণেই জাতীয় জীবনে বিপর্যয় এবং আল্লাহর আজাব নেমে আসে। (১১৬)। পবিত্র কোরআনে বিভিন্ন কাহিনি আলোচনার কী উদ্দেশ্য, সে বিষয়ে আলোকপাতের মাধ্যমে সূরাটি সমাপ্ত হয়েছে।

১২. সূরা ইউসুফ: (মক্কায় অবতীর্ণ, আয়াত ১১১, রুকু ১২) সূরার নামই বলে দেয়, সূরায় হজরত ইউসুফ (আ.) এর ঘটনা বিবৃত হয়েছে। খোদ কোরআন ইউসুফ (আ.) এর ঘটনাকে ‘আহসানুল কাসাস’ তথা সবচেয়ে সুন্দর ঘটনা বলে আখ্যায়িত করেছে। ঘটনাটিতে প্রচুর শিক্ষা ও নসিহত রয়েছে। নবী ইউসুফ (আ.) এর ঘটনা এতই প্রসিদ্ধ যে, প্রকৃত মুসলিম পরিবারের ছোট ছোট বাচ্চাও তা জানে।

সূরা ইউসুফের যে অংশটুকু আজ পড়া হবে, তার সারসংক্ষেপ হলো- হজরত ইয়াকুব (আ.) এর বারো সন্তান ছিল। এদের মধ্যে ইউসুফ ছিলেন অস্বাভাবিক সৌন্দর্যের অধিকারী, বাহ্যিক আকার-আকৃতি ও দৈহিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি আচার-ব্যবহারেও তিনি ছিলেন অনন্য। তাই বাবার কাছেও ছিলেন সবচেয়ে আদরের। মহব্বতের একটি কারণ এ-ও ছিল যে, ইউসুফ শৈশবে একটি বিস্ময়কর স্বপ্ন দেখেন, যা ছিল তার নবী হওয়ার পূর্বাভাস। তাছাড়া ইউসুফ ও তার ভাই বিনয়ামিন ছিলেন সবার ছোট, আর তাদের মায়েরও ইন্তেকাল হয়ে গিয়েছিল। বাবা ইয়াকুব (আ.) এর এ স্বভাবজাত মহব্বত অন্য ভাইয়েরা সহ্য করতে পারেনি, তারা হিংসার আগুনে জ্বলতে থাকে।

বিনোদনের কথা বলে একদিন তারা ইউসুফ (আ.) কে জঙ্গলে নিয়ে যায় এবং সেখানে একটি কূপে ফেলে দেয়। সেই পথ দিয়ে একটি কাফেলা যাচ্ছিল, পানির প্রয়োজনে তারা কূপের সামনে যায়, বালতি নিচে ফেলার পর বালতি ওঠানো মাত্রই ফুটফুটে সুন্দর ইউসুফকে দেখতে পায় তারা। কাফেলার লোকরা মিসরে পৌঁছে ইউসুফকে বিক্রি করে দেয়। মিসরের আজিজ ইউসুফকে কিনে নিজের ঘরে নিয়ে যান। ধীরে ধীরে ইউসুফ বড় হন, যৌবনে পদার্পণ করেন। একসময় মিসরের আজিজের স্ত্রী ইউসুফের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। সে ইউসুফকে খারাপ কাজের প্রতি আহ্বান করে, ইউসুফ (আ.) তা প্রত্যাখ্যান করেন।

নারীদের ষড়যন্ত্রে ইউসুফকে কারাগারে নিক্ষেপ করা হয়। জেলের কুঠুরিতেও তাওহিদের দাওয়াত অব্যাহত থাকে, বন্দিদের অনেকেই তার হাতে মুসলমান হন। সে সময় তৎকালীন বাদশা একটি আশ্চর্য স্বপ্ন দেখেন। ইউসুফ সেই স্বপ্নের সঠিক ব্যাখ্যা বলে দেন। ইউসুফের প্রতি বাদশাহর বিশেষ দৃষ্টি নিবদ্ধ হয়। বাদশা ইউসুফকে সে দেশের অর্থ বিভাগের পূর্ণ দায়িত্ব দেন এবং তাকে নিজের উজির বানিয়ে নেন। (৩-৫২)।

লেখক:মাওলানা রাশেদুর রহমান ।। পেশ ইমাম ও খতীব, কেন্দ্রীয় মসজিদ, বুয়েট

Series Navigation<< সত্য ও সততা মুক্তি দেয় – তারাবীহ ৮ম পাঠপবিত্র কোরআন অকাট্য, নির্ভুল এবং ধ্রুব সত্য – তারাবীহ ১০ম পাঠ >>

Archives

January 2025
S S M T W T F
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031