রবিবার, ৩১শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১২ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
চট্টগ্রামের সাতকানিয়া আমরা ছমদরপাড়া বাসী’র ঐতিহাসিক তাফসীরুল কুরআন মাহফিলের ২য় দিন বা’দ মাগরীব আলোচনা শেষ করে অন্যত্র আখেরী বয়ানের উদ্দেশ্যে দ্রুত বেরিয়ে পড়ি । এই মাহফিলে অতিথী হিসেবে আমন্ত্রিত হয়েছিলেন শ্রদ্ধেয় নেছার আহমাদ নাছিরী এবং ১০৩ টি দেশের বিশ্বজয়ী হাফেজ তরীকুল ইসলাম। আমার আরেকটি মাহফিল থাকায় যেহেতু ছমদরপাড়া থেকে আমি দ্রুত চলে এসেছি,তাই ওনাদের সাথে সে রাতে আমার আর দেখা হয়নি।
যথা নিয়মে আমি ২য় মাহফিলে আলোচনা করে রাতে ওখানেই থেকে যাই,এবং পরদিন (১৬ ডিসেম্বর) বা’দ ফজর হালকা নাস্তা সেরে ঢাকার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ি। অল্পকিছু পথ অতিক্রম করার পর মোবাইলের
রিং বেজে উঠলো ! তাকিয়ে দেখি ছমদরপাড়ার আমার অন্যতম পছন্দের মানুষ মাওলানা হারুন ভাইয়ের ফোন। রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে ভয়ানক ১টি খবর দিলেন তিনি ! নেছার আহমাদ সাহেব এবং তরীকুল ইসলাম
রোড এক্সিডেন্টে অজ্ঞান অবস্হায় হাসপাতালে ভর্তি,নেছার সাহেবের গলার নিচে অনেকগুলি সেলাই দিয়েও রক্ত বন্ধ করা যাচ্ছেনা তাড়াতাড়ি ঢাকা নিতে হবে!
আমি হ্যাং হয়ে গেলাম। সাতসকালে প্রিয় ব্যক্তি সম্পর্কে এমন একটি সংবাদ শুনতে আমার কান মোটেও প্রস্তুত ছিলোনা। ঠিকানা নিয়ে সো-জা হাসপাতালে চলে এলাম।এসে যে দৃশ্য দেখেছি, তা বর্ননার মতো নয়! নেসার ভাইজানের সাথে দেখা করার ইচ্ছা ছিলো,কিন্তু দেখাটা এভাবে হবে, কল্পনাও করিনি! জানতে পারলাম গতকাল সাতকানিয়ার প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করে একটি এসি বাসে করে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছিলেন তাঁরা। গভীর অন্ধকার চিরে রাতের নিরবতাকে খানখান করে দিয়ে , ঢাকার উদ্দেশ্যে ছুটে চললো এসি বাসটি। অল্পকিছু পথ অতিক্রম করার পরই গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মারাত্মক এক্সিডেন্ট করে।(ভিডিও দ্রষ্টব্য) ফলে ঘটনাস্থলেই নিহত হয় অনেকেই, এবং নেছার আহমাদ আন নাছিরী ভাই ও বিশ্বজয়ী হাফেজ তরীকুলকে মারাত্মকভাবে আহত অবস্হায় বের করতে পারলে ও, অনেককে বের করতে হয়েছে লাশ হিসেবে! তরিকুল জানালেন আমি যখন দেখলাম নেছার সাহেব হুজুর বাসের নিছে চাপা পড়ে মুখ ও নাক দিয়ে রক্ত আর ফেনা বের হচ্ছে, তখন আমার শরীল রক্তাত্ব, কিন্তু আমি ভাবলাম আমি মরে গেলে কিছুই হবেনা,কিন্তু হুজুরের সাথে হিফজ জগত জড়িত, অনেক ছাত্রের বিশ্বজয় করার সপ্ন জড়িত,তাই আমার হুজুরকে বাচাঁতে হবে, কারন হুজুরের সপ্ন এখনো অনেক বাকী, অনেক শাখা বাংলাদেশের বিভিন্ন বিভাগে, নিজ্স্ব জমি কিনেছে বাড়ীর বসতবাড়ী বিক্রি করে,সারারাত জায়গাটা দেখে দেখে রাত কাটিয়ে দেয়,আর বলে আল্লাহ যেহেতু মাদরাসা কবুল করেছে এবং ছাত্রদেরকে বিশ্বজয়ী করেছে, সেই জন্য এই মাদরাসা থেকে যুগশ্রেষ্ঠ বুযুর্গ বানিয়ে আল্লাহ তায়ালাকে উপহার দিবো, কি করে হুজুরের সপ্নকে বাচাঁনো যাবে,আর কত সপ্ন আকেঁ সেই গুলি রক্তমাখা অবস্থায় বলতে পারছিনা, কত কিছুই যে করবে বলে রাতের পর রাত জেগে কেঁদেছে,আর আমাদেরকে কাঁদিয়েছে, সবার কাছে দোয়া চেয়েছে,সেই কথা কেন মনে পড়ছে জানিনা,হুজুর প্রায়ই বলেন” হিফজ বিশ্ববিদ্যালয় করবেন” বিদেশ থেকে বাংলাদেশে মানুষ হিফজ পড়তে আসবে, আমাকে মক্কা শরীফের ইমাম বানাবে,সাআদকে মিশরে পাঠিয়ে বড় কারী বানাবে, আরো কত সপ্ন!!
মাথা থেকে মাত্রাতিরিক্ত রক্তক্ষরনের ফলে,জ্ঞান হারিয়ে প্রায় ২ঘন্টা বেহুঁশ ছিলেন নেছার সাহেব, ওদিকে মাথায় হাতে ও পায়ে প্রচন্ড আঘাতের পরেও নিজের উস্তাদকে বাঁচানোর আপ্রান চেষ্টা অব্যাহত
রাখছে তরীকুল! অবশেষে স্থানিয় লোকদের সহায়তায় তরিকুল তার উস্তাদকে উদ্ধার করে সি এন জি দিয়ে, হাসপাতালে ভর্তি করায়!! এদিকে যখম যেহেতু গুরুতর,তাই ঢাকায় যাওয়াও জরুরী,আর শরীরের এই অবস্থায় বাসে করে ঢাকায় যাওয়াও সম্ভব নয়! অবশেষে (হারুন ভাইয়ের অক্লান্ত পরিশ্রম ও একান্ত সহযোগিতায়) ফায়সালা হলো আমার গাড়িতে করে তাঁরা ২জন ঢাকা যাবেন ( উন্নত চিকিৎসার জন্য) ফায়সালা অনুযায়ী হাসপাতাল থেকে রিলিজ নিয়ে আমার গাড়ীতে তাঁদেরকে নিয়ে রওয়ানা হলাম। পথিমধ্যে রাস্তায় পড়ে থাকা এক্সিডেন্টের সেই গাড়িটি আমাদের নজর কাড়লো।
https://www.facebook.com/fa.azad.77/videos/2028415124082435/
সু ব হা না ল ল লা হ…!
এতো মারাত্নক এক্সিডেন্টের পরে অনেকের লাশ বের হলেও আল্লাহ জিবীত রেখেছেন বিশ্বজয়ী ছাত্র উস্তাদকে…!!
পরক্ষনেই আমার বুঝে আসলো যে কুরআনের পাখিদেরকে মহান আল্লাহ এভাবেই রক্ষা করেন বুঝি! কুরআনের জন্য, মানুষকে কুরআনের দিকে আহবান করতেই/ শুনাতেই তাঁরা সফরে এসেছিলেন ।
বিশ্ববাসীর অফুরন্ত দোয়া ও নেক নজরের বদৌলতে
সেদিন আল্লাহ আমাদের বাংলাদেশের সম্পদ ,আমাদের প্রানপাখিদেরকে মৃত্যুকূপ থেকে হেফাজত করে আমাদের কোলে ফিরিয়ে দিয়েছেন।
না হলে সেদিনের ঘটনা যদি ভিন্ন রকম হতো ..(?) উহ্…আর ভাবতে পারছিনা..!
অগণিত শুকরীয়া জানাই মহান মালিকের
আলিশান দরবারে, আর প্রাণভরে দোয়া করি,
আল্লাহ যেনো কুরআনের এই পাখিদেরকে
নিজ ক্বুদরতি জিম্মায় হেফাজত করেন…!!
(উল্লেখ্য ঘটনাটি ১৫ই ডিসেম্বরের )