মানুষ কিশোর বয়স থেকেই স্বাধীন হতে চায়। সে যত বড় হয়, কিশোর থেকে তরুণ হয়, তরুণ থেকে প্রবীণ হয়, তখন তার স্বাধীন হওয়ার ইচ্ছা আরও বেড়ে যায়। কিন্তু তার স্বাধীনতার পথে একটা বাধা এসে দাঁড়ায়: ধর্ম। মানুষ যখন বড় হতে থাকে, তখন সে দেখতে পায় যে, ধর্ম বলে: এটা করা নিষেধ, ওটা করা নিষেধ, এটা খাওয়া যাবে না, ওটা দেখা যাবে না, এটা শোনা যাবে না, ওটা বলা যাবে না। তখন তার হাতে দুটি পথ খোলা থাকে—
১) তাকে এই নিয়মগুলো মেনে নিয়ে জীবন পার করতে হবে।
২) সে এই নিয়মকানুনগুলো অস্বীকার করে নিজের খেয়াল খুশি মত জীবন যাপন করবে।
কিন্তু নিজের মত করে জীবন যাপন করতে গেলে প্রথমে তাকে ধর্মকে অস্বীকার করতে হবে। তখন সে বলা শুরু করবে: “সৃষ্টিকর্তা বলতে কিছু নেই। আমি সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস করি না।” এটা বলে সে নিজের ভেতর এক ধরনের মানসিক স্বাধীনতা অনুভব করে, কারণ তখন তার মধ্যে কোনো ধর্মীয় দায়বদ্ধতা থাকে না, যা তাকে এক ধরনের আনন্দ দেয়। আর এভাবেই জন্ম হয় বেশিরভাগ নাস্তিকদের।
আজকাল যে সকল নাস্তিকদের আমরা দেখে থাকি, তাদের বেশিরভাগই হুজুগে নাস্তিক। তারা কেন নাস্তিক, সেটা তারা নিজেরাও জানে না। তাদেরকে যদি জিজ্ঞাসা করা হয়: আপনি কেন নাস্তিক? —তারা কোনো যুক্তিসংগত উত্তর দিতে পারে না। তারা নাস্তিক হয় সবার চেয়ে আলাদা হওয়ার জন্য। অন্যদের বলার জন্য যে, “দেখ, আমি তোমাদের চেয়ে আলাদা। তোমরা সব মান্ধাত্তা আমলের কুসংস্কারাচ্ছন্ন মানুষ, তাই ঈশ্বরে বিশ্বাস করো। আমি একজন আধুনিক শিক্ষিত মানুষ। আমি ঈশ্বর মানি না।”
কিছু নাস্তিক আছে, যারা হতাশা থেকে নাস্তিক হয়। যেমন- সে আল্লাহ্র কাছে কোন কিছুর জন্য অনেক চাইল, কিন্তু তারপরেও তার সেটা না পাওয়ার থেকে হতাশা তৈরি হয়। এরপর তার মাথায় চিন্তা ঘুরে, “আমি এত করে চাওয়ার পরেও আল্লাহ্ আমাকে দিলো না। আল্লাহ্ যদি সত্যিই থাকতো তাহলে দুনিয়ার এত মানুষ কেন এত কষ্ট সহ্য করে, এত অবিচারের স্বীকার হয়? খারাপ লোকদের কেন কিছু হয় না? তিনি থাকতে এত দুঃখকষ্ট হয় কিভাবে?… ইত্যাদি আরও নানা ধরনের প্রশ্ন!
আর এক শ্রেনীর নাস্তিক আছে, যারা বিভিন্ন বই পড়ে নাস্তিক হয়। তারা ঐ বইয়ের লেখকদেরকে মনে করে সর্বজ্ঞানী। ঐ লেখকদের বইয়ে, মতবাদে কোনো ভুল থাকতে পারে — সেটা তারা কল্পনাও করতে পারে না। হাজার হোক, লেখকদের পিএইচডি ডিগ্রী আছে না? তারা কীভাবে ভুল করতে পারে? তাদের বইয়ের বা মতবাদের বা যুক্তির ভুলগুলোকে, ফাঁকফোকরগুলোকে কেউ আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেও তারা সেটাকে মানে না। তার বিশ্বাসের পক্ষের যুক্তিগুলো সে খুব ভালো করে শোনে, খুব ভালো করে মনে রাখে। কিন্তু তার বিশ্বাসের বিরুদ্ধে যায় এমন যুক্তিগুলো তার এক কান দিয়ে ঢুকে অন্য কান দিয়ে বের হয়ে যায়। তখন তাকে তার বিশ্বাসের বিরুদ্ধে কিছু বললেও কোনো লাভ হয় না। সে ঘুরে ফিরে বিভিন্নভাবে নিজেকে নানাভাবে বোঝাতে থাকে, যেন সে তার বিশ্বাসে অটুট থাকতে পারে। তারা তখন আপনার যুক্তিগুলোকে বলবে ঠুনকো যুক্তি, সবকিছুই ভুল, মিথ্যাচার করা হয়েছে, বিজ্ঞানের নামে ছদ্মবিজ্ঞানের আশ্রয় নেয়া হয়েছে…ইত্যাদি। অর্থাৎ, তাদের কাছে আপনি যাই বলবেন সবই ভুল। শুধু তারা বা তাদের গুরুরা যা বলবে তাই ঠিক! তারা ভুল করতেই পারে না,তারা ভুলের উর্ধ্বে!! (নাউযুবিল্লাহ্)
সবশেষে আমাদের জন্য আল্লাহর ﷻ কিছু আমন্ত্রণ দিয়ে শেষ করি—
“আমি আমার বান্দার প্রতি যাহা অবতীর্ণ করিয়াছি, তাহাতে তোমাদের কোন সন্দেহ থাকিলে, তোমরা ইহার অনুরুপ একটি সূরা আনয়ন কর। এবং তোমরা যদি সত্যবাদী হও, তাহলে আল্লাহ্ ব্যতীত তোমাদের সকল সাহায্যকারীকে আহ্বান কর। যদি আনয়ন না কর, এবং কখনোই করিতে পারিবে না। তাহলে সেই আগুন কে ভয় কর, কাফিরদের জন্য যাহা প্রস্তুত করিয়া রাখা হইয়াছে মানুষ এবং পাথর হইবে যাহার ইন্ধন।” [সূরা আল্-বাকারা ২:২৩-২৪]
“মানুষকে বলো, ‘আকাশ এবং পৃথিবীতে যা আছে, তা ভালো করে দেখো।’” [সূরা ইউনুস ১০:১০১]
“রহমানের সৃষ্টিতে কোথাও কোন অসঙ্গতি দেখতে পাবে না। তোমার সুতীক্ষ্ণ দৃষ্টিকে প্রসারিত করে দেখো, তেমন কিছু দেখতে পেলে কি? তোমার সেই দৃষ্টি আবার বুলিয়ে নাও। এবং আবারও। তোমার দৃষ্টি তোমার কাছে ফিরে আসবে আহত, ব্যথিত, লাঞ্চিত ও লজ্জিত হয়ে।” [সূরা মূলক্ ৬৭:৩-৪]