শনিবার, ২০শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২রা রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি
Admin | ৬৬০ views | ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৯ | খৃষ্টবাদ | ১২:৫৯ পূর্বাহ্ণ
খ্রিস্টানদের দাবি: কুরআন শুধুমাত্র মক্কা ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকার লোকদের জন্য নাযিল হয়েছে।
তাদের দলিল:
وَكَذَلِكَ أَوْحَيْنَا إِلَيْكَ قُرْآَنًا عَرَبِيًّا لِتُنْذِرَ أُمَّ الْقُرَى وَمَنْ حَوْلَهَا وَتُنْذِرَ يَوْمَ الْجَمْعِ لَا رَيْبَ فِيهِ فَرِيقٌ فِي الْجَنَّةِ وَفَرِيقٌ فِي السَّعِيرِ.
অর্থ: এমনিভাবে আমি আপনার প্রতি আরবি ভাষায় কোরআন নাযিল করেছি, যাতে আপনি মক্কা ও তার আশে-পাশের লোকদের সতর্ক করেন এবং সতর্ক করেন সমাবেশের দিন সম্পর্কে- যাতে কোনো সন্দেহ নেই। একদল জান্নাতে এবং একদল জাহান্নামে প্রবেশ করবে।
আয়াতের সঠিক ব্যাখ্যা :
“হাওলাহু” শব্দের ব্যাখ্যায় তাফসীরে ইবনে কাসীর ৪নং খন্ডের. ১০৯নং পৃ: রয়েছে (‘মিন সায়িরিল বিলাদী শরকান ওয়া গরবান’) সারা পৃথিবীর পূর্ব থেকে পশ্চিমে।
আর তাফসীরে কুরতুবীতে ১৬নং খন্ডের ৬নং পৃ: রয়েছে (‘মিন সায়িরিল খলকি’) সকল সৃষ্টি। আর তাফসীর বগভী ৪/১২০ রয়েছে (‘কুরাল আরযী কুল্লাহা’) পৃথিবীর সকল ভূমি। সুতরাং, এ সমস্ত তাফসীরের মাধ্যমে বুঝা গেল ‘হাওলাহু’ দ্বারা সমস্ত পৃথিবী বুঝানো হয়েছে।
যেভাবে অপব্যাখ্যা করে:
খ্রিস্টানগণ এই আয়াত দ্বারা প্রমাণ করতে চায়, কুরআন শুধুমাত্র মক্কাবাসী ও তার পার্শ্ববর্তী কয়েকটি এলাকার জন্য। যেমন তাদের বই ‘গুনাহগারদের জন্য বেহেস্তে যাওয়ার পথ’ নামক, বইয়ের ১৩নং পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে….“কুরআন শরীফ অবতীর্ণ করা হয়েছে আরবি ভাষায়, যাতে মক্কা ও তার চতুর্দিকের জনগণকে সতর্ক করতে পারে। এখানে মনে রাখা উচিৎ চতুুর্দিকের বলতে সমস্ত বিশ্বকে বুঝায় না। র্অথাৎ মক্কা ও তার চতুর্দিকের আরবি ভাষাভাষী লোকদের বুঝায়। ”
আমরা হলাম বাংলাদেশি, মক্কা থেকে অনেক দূরে- সুতরাং কুরআন আমাদের জন্য নয়। দ্বিতীয় বিষয় হলো কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে আরবি ভাষায়, আরবদের জন্য। আমাদের ভাষা হলো বাংলা। আরবি আমাদের ভাষা নয়। অতএব, কুরআন আমাদের জন্য নয়।
১নং উত্তর :
১. حَوْلَهَঅর্থ চারপাশ, মক্কা হলো পৃথিবীর নাভি। মূল কেদ্রবিন্দু। ‘চারপাশ’ বলার দ্বারা নির্দিষ্ট কোনো স্থানে সীমাবদ্ধ থাকে না। যেমন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে মক্কা ছাড়াও কেসরা, কায়সার, শাম, য়েমেন ইত্যাদি দেশে দাওয়াত দিয়েছেন। আধুনিক বর্তমান বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন, গোলাকার পৃথিবীর মধ্যস্থল হলো মক্কা নামক নগরী। অতএব حَوْلَه দ্বারা পুরো পৃথিবীই উদ্দেশ্য। পুরো পৃথিবীর মানুষকেই কুরআন মানতে হবে। আর কুরআন হল সকল মানুষের জন্য।
২. কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে সমগ্র মানবজাতির জন্য।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِي أُنْزِلَ فِيهِ الْقُرْآَنُ هُدًى لِلنَّاسِ
অর্থ: “রমযান মাসই হল সে মাস, যাতে নাযিল করা হয়েছে কুরআন, যা ‘মানুষের’ জন্য হেদায়েত”।
২নং উত্তর :
আল্লাহ তা‘আলা উল্লিখিত আয়াতে حَوْلَهَ দ্বারা কোনো সীমানা নির্দিষ্ট করেননি। বলেননি যে, চতুর্পাশে ৩০ মাইল বা ৪০ মাইল, ইত্যাদি। এমন কোনো সীমানা ধার্য করেননি। এই আয়াতই-প্রমাণ করে কুরআন হলো বিশ্বজনীন।
৩নং উত্তর :
মক্কায় তৎকালীন সময়ে সকল জাতির লোক বসবাস করত। তাই তাকে উম্মুল কুরা বা প্রাণকেন্দ্র বলা হয়েছে। যেমন : ঢাকা বাংলাদেশের প্রাণকেন্দ্র। এখানে, পুরো দেশের সব জাতির লোক বসবাস করে। আর “উম্মুল কুরা” বলে কখনই প্রমাণ হয় না যে, কুরআন শুধুই মক্কাবাসীর জন্য ।
৪নং উত্তর
তারপরও যদি কেউ একথা মানতে না চাই যে, তিনি সমস্ত পৃথিবীর জ্বীন ও মানবের নবী ছিলেন। তাহলে, আমরা বলবো তোমার কথা যদি আমরা কিছুক্ষণের জন্যও মেনে নেই যে, তিনি মক্কা ও তার আশেপাশের লোকদের নবী ছিলেন গোটা পৃথিবীর নবী ছিলেন না। তবে স্মরণ রেখো যেহতু মক্কাবাসী ও তার আশে পাশের লোকেরা নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকটাত্মীয় প্রতিবেশী ও আশেপাশের মানুষ ছিলন। এই কারণে তারাই ইসলামের দাওয়াত পাওয়ার বেশী হকদার ছিল। কারণ কুরআন ও হাদীস দ্বারা নিকটাত্মীয় প্রতিবেশী আশেপাশের মানুষের সবচেয়ে বেশী অধিকার সাব্যস্ত হয়েছে। তাই, বিশেষ করে তাদের কথাই বলা হয়েছে। আর আমরা জানি বিশেষ ভাবে কাউকে বলার দ্বারা অন্যরা উক্ত হুকুম থেকে বের হয়ে যায় না। এর অসংখ্য প্রমাণ আমাদের সামনে রয়েছে। “ওয়ামা র্আসাল্নাকা ইল্লা কাফ্ফাতাল লিন্নাস” (সূরা সাবা আয়াত ২৮.) আমি আপনাকে সারা পৃথিবীর সকল মানুষের নবী ও রাসুল বানিয়ে পাঠিয়েছি। ( তাফসীরে কাসির ৯/৫৮০) মক্কা নগরীকে উম্মুল কুরা বলার কারণ হলো, ‘উম্মা’ অর্থ হলো মূল। উম্মুল কুরা অর্থ জনপদসমূহের মূল অর্থাৎ মক্কা। পৃথিবীর মধ্যে মক্কা সবচে বলা হয়েছে সম্মানিত ও মর্যাদাসম্পন্ন স্থান পাশাপাশি তার মধ্যে বায়তুল্লাহ থাকার কারণে এটা উম্মুল কুরা ।
আমি খ্রিস্টান প্রচারকদের জিজ্ঞাসা করবো, আপনাদের বাইবেলে কোথায় আছে ‘বাইবেল সকল মানুষের জন্য?’ আমি চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি, বাইবেলের কোথাও নেই তাওরাত-ইঞ্জিল সকল মানুষের জন্য বা বাংলাদেশিদের জন্য। আপনি যেই গ্রন্থকে বিশ্বাস করছেন সেটাই তো আপনার জন্য নয়। যেটা আপনার জন্য নয় সেটা বিশ্বাস করছেন কেন? মানছেন কেন? বিষয়টি নিয়ে একটু ভাবুন, চিন্তা-ফিকির করুন। এরপর সিদ্ধান্ত নিন। সত্যের উপর আছেন কি না মিথ্যার উপর চলছেন। পক্ষান্তরে কুরআন সকল মানুষের জন্য হেদায়াতনামা। চাই মানুষটি খ্রিস্টান হওক, হিন্দু হওক, মুসলমান হওক, যেই হোক না কেন, সকল মানুষের জন্য এই কুরআন। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, “রমযান মাস-ই হল সেই মাস, যাতে নাযিল করা হয়েছে কুরআন যা মানুষের জন্য হেদায়েত” হিন্দু, খ্রিস্টান, মুসলিম সকলেই মানুষ। আর কুরআনও সকল মানুষের জন্য। অতএব, কোনো খ্রিস্টান যদি মানুষ হয়ে থাকেন, তাহলে তাকে কুরআন মানতেই হবে। তবেই সে হেদায়াতপ্রাপ্ত হবে।
খ্রিস্টান প্রচারকদের বলবো, আপনি এদেশে খ্রিস্টধর্ম প্রচার করতে পারবেন না। কারণ, আপনি যে ধর্মীয় গ্রন্থ বাইবেল বা কিতাবুল মোকাদ্দাস মানেন, তাতেই লেখা আছে যে যীশু শুধুমাত্র বনী ই¯্রাইলদের নিকট প্রেরিত হয়েছেন। যেমন, যীশু বলেন- “আমাকে শুধু বনী ই¯্রায়েলের হারানো মেষদের নিকট পাঠানো হয়েছে।
আরো বলা হয়েছে- “তোমরা অইহুদীর নিকট যেয়ো না। বরং ই¯্রায়েল জাতির হারানো ভেড়াদের কাছে যেয়ো। ” এ ধর্ম মানতে হলে আপনাদেরকে ইসরাঈলে যেতে হবে। কারণ, সেখানে বনি ইস্রায়েলের লোকজন থাকে।
৫নং উত্তর:
আমি খ্রিস্টান প্রচারকদের জিজ্ঞাসা করতে চাই “এই আয়াতটি কে বেশি বুঝেছেন? আপনি? না রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম? যার ওপর এই আয়াত নাযিল হয়েছে। যদি বলেন তিনি বুঝেছেন। তাহলে, বিষয়টি সুস্পষ্ট হয়ে গেল- আপনার বুঝাটা ভুল, কুরআনই সঠিক।”
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন আরবি। তাই, তাঁর ভাষাতেই কুরআন নাযিল করা হয়েছে।
খ্রিস্টান ভায়েরা জিজ্ঞাসা করেন, কুরআন আরবি ভাষায় কেন? বাংলায় তো হতে পারতো? তাদের এই প্রশ্নের উত্তর আল্লাহ তা‘আলা নিজেই সুন্দরভাবে কুরআনে দিয়েছেন। দেখুন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
(*১) এবার খ্রিস্টানভাইদেরকে জিজ্ঞাসা করবো, “বলুন তো, আপনাদের বাইবেল, তাওরাত ও ইঞ্জিল কোন ভাষায়? ঈসা নবী কোন ভাষায় কথা বলতেন? তাহলে আপনারা বলবেন তাঁর ভাষা ছিল অরমীয়। বাইবেল লেখা হয়েছে কোন ভাষায়? আপনারা বলবেন হিব্রু ভাষায়। যেই ভাষায় ঈসা নবী কথা বলতেন, ইঞ্জিল প্রচার করতেন সেই ভাষায় ইঞ্জিল লেখা হলো না, লেখা হলো অন্য ভাষায়। এমনটি কেন? প্রথমেই ভাষার হেরফের হয়ে গেল পরবর্তীতে যেই ভাষায় র্অথাৎ হিব্রু ভাষায় ইঞ্জিল বা বাইবেল লেখা হলো, সেই ভাষা কি এখনো প্রচলিত আছে? নেই। সেই ভাষার প্রচলন এখন কোথাও নেই।
আমি চ্যালেঞ্জ করলাম, ঈসা আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আসমানে উঠিয়ে নেয়ার পর থেকে ৩০০ বছরের মধ্যে কোনো ইঞ্জিল কেউ দেখাতে পারবে না। আমি বহু খ্রিস্টানভাইদের এই ওপেন চ্যালেঞ্জ দিয়েছি, কেউ দেখাতে পারেনি। আর পারবেই বা কিভাবে, নেই তো; যা আছে তার মধ্যে আবার অসংখ্য ভুল। বিকৃতির তো অভাবই নেই। বৈপরিত্যের তো কথাই নেই। যা সামনে বিস্তারিত বলা হবে ইনশাআল্লাহ তা‘আলা । বর্তমানে আমরা যেই বাইবেল দেখি তা হলো বাংলা অনুবাদ। কিন্তু, সাথে আসলটি দিয়ে দেয়া উচিত ছিল, সেটিও নেই।
পক্ষান্তরে, কুরআন আরবি ভাষায়। যেই নবীর উপর কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে, তাঁর ভাষাও ছিল আরবি। প্রত্যেক নবীর উপর যেই কিতাব অবতীর্ণ করা হয়েছে তা সেই নবীর মাতৃভাষায় ছিল।
প্রিয় পাঠক! একটি বিষয় ভালোভাবে বুঝার চেষ্টা করুন, তা হলো কুরআন মূলত লিখিতভাবে আসেনি। আল্লাহ তা‘আলা তা মানুষকে মুখস্থ করিয়ে অন্তরে অন্তরে সংরক্ষণ করেছেন। এই ভাষা মুখস্থ করাও সহজ। লক্ষ লক্ষ কুরআনের হাফেজ রয়েছে যাদের অন্তরে আল্লাহ তা‘আলা কুরআনকে সংরক্ষণ করেছেন। পৃথিবীর সকল কুরআনকে যদি বিলীনও করে দেওয়া হয়, তাহলে হুবহু সেই কুরআন লিপিবদ্ধ করা সম্ভব। একটি বিন্দু বা যের-যবরেও পরিবর্তন হবে না। পক্ষান্তরে পুরো পৃথিবীতে বাইবেলের একটি হাফেজও কোনো খ্রিস্টান দেখাতে পারবে না । এ আলোচনা দ্বারা বুঝা যায় কুরআন অবিকৃত ও সকল মানুষের জন্য।
তাছাড়া, কুরআন যদি অন্য কোনো ভাষায় নাযিল হতো, তাহলে সেই এলাকা থেকে নবীর ভাষা শিখে, নিজ এলাকায় শিখাতে হতো, এতে এক বড় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতো। আর আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
وَمَا أَرْسَلْنَا مِنْ رَسُولٍ إِلَّا بِلِسَانِ قَوْمِهِ لِيُبَيِّنَ لَهُمْ فَيُضِلُّ اللَّهُ مَنْ يَشَاءُ وَيَهْدِي مَنْ يَشَاءُ وَهُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ
অর্থ: আমি সব পয়গাম্বরকেই তাদের স্বজাতির ভাষাভাষী করেই প্রেরণ করেছি, যাতে তাদেরকে পরিষ্কার বোঝাতে পারে। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা যাকে ইচ্ছা পথভ্রষ্ট করেন এবং যাকে ইচ্ছা সৎপথ প্রদর্শন করেন। তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।
এই বিস্তারিত আলোচনা দ্বারা আমরা বুঝতে পারলাম, কুরআন সকল মানুষের জন্য । সঠিক পথ পেতে হলে সকল মানুষকে আল্লাহ তা‘আলার কালাম পবিত্র কুরআন পড়তে হবে, বুঝতে হবে এবং সেই অনুযায়ী আমল করতে হবে। আমি খ্রিস্টান ভাইদেরকে অনুরোধ করবো, “আপনারা কুরআনকে আপনার আল্লাহ তা‘আলার কালাম মনে করে পড়–ন। সাথে সাথে চিরস্থায়ী জাহান্নাম থেকে বাঁচার জন্য ইসলাম গ্রহণ করুন। আল্লাহ তা‘আলা আপনাকে ইসলাম গ্রহণ করার তৌফিক দান করুন। আমিন।”