বুধবার, ২৪শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৬ই রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

বিধির লিখন যায় না খণ্ডন!

  • তাকদির সংশ্লিষ্ট ব্যাপার নিয়ে নাস্তিকরা এই পর্যন্ত কম জল ঘোলা করে নি। হতাশাবাদী থেকে শুরু করে ধার্মিক হৃদয়েও এরকম প্রশ্ন আসে- আমি খারাপ; এটা কি আমার দোষ? আল্লাহ্‌ই তো আমার ভাগ্যে খারাপ লিখেছেন। আল্লাহ্‌ যেহেতু জানেনই কে বেহেশতে যাবে আর কে জাহান্নামে যাবে, তাহলে দুনিয়াতে পাঠিয়ে এত কষ্ট দেয়ার মানে কি? সরাসরি জাহান্নাম বা জান্নাতে পাঠালেই তো হত! আর নাস্তিকদের তো রেডিমেড প্রশ্নই আছে যে, আল্লাহ্‌ই নাকি তাদের ভুল পথে পরিচালিত করেছে! আজকে আমরা তাকদির সংশ্লিষ্ট এরকম জটিল প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজার চেষ্টা করবো।
  • ১। একজন মানুষের ভবিষ্যৎ তার মাতৃগর্ভেই লিখে দেয়া হয় এবং তাদেরকে ভুল পথে পরিচালিত করার মূলে রয়েছেন স্বয়ং আল্লাহ্‌! তাহলে কেন তাদের কৃতকর্মের জন্য কিংবা কাফের/অবিশ্বাসী হওয়ার জন্য পরকালে সাজা পেতে হবে?
  • উত্তর: এটা নাস্তিকদের খুব প্রিয় একটা প্রশ্ন। তারা তাদের বক্তব্যের স্বপক্ষে সবসময় সূরা বাকারার ৬-৭ নম্বর আয়াতটা তুলে ধরে। প্রথমে এই আয়াতটা তাহলে দেখা যাক।
  • “নিশ্চয়ই যারা অবিশ্বাস করে, তাদের তুমি সাবধান করো, আর না-ই করো, তাদের কাছে তা একই কথা— তারা বিশ্বাস করবে না। আল্লাহ তাদের বুদ্ধিমত্তা/হৃদয়ের উপর এবং তাদের শোনার ক্ষমতার উপর সিল করে দিয়েছেন; তাদের দৃষ্টির উপরে আছে এক পর্দা। তাদের জন্য আছে এক প্রচণ্ড শাস্তি।” [সূরা বাকারাহ ২:৬-৭]
  • কু’রআনের মূল আরবি ছাড়া প্রচলিত অনুবাদগুলো পড়ে মানুষ যে অনেক সময় বিরাট ভুল বুঝতে পারে, তার একটি চমৎকার উদাহরণ হলো এই আয়াত দুটি। অনুবাদকরা যতই চেষ্টা করুন না কেন, তারা অন্য ভাষায় রূপান্তর করতে গিয়ে মাঝে মাঝে ভুল করে এমন অনুবাদ করে ফেলেন, যা পড়ে মানুষ অনেক সময় বিরাট ভুল বোঝাবুঝির শিকার হয়।
  • আয়াতটির প্রথম অংশ إِنَّ ٱلَّذِينَ كَفَرُوا হচ্ছে একটি অতীত ক্রিয়াবাচক বাক্য, যার সঠিক বাংলা অনুবাদ হবে, “যারা অবিশ্বাস করবে বলে মন স্থির করে ফেলেছে” বা “যারা অবিশ্বাস করেছে এবং করবেই।”[১] কিন্তু প্রশ্ন হলো অবিশ্বাস করে কীসে? এখানে এক বিশেষ ধরনের কাফিরদের কথা বলা হয়েছে—এই আয়াতের আগের আয়াতগুলোতে মুত্তাকীদের যে বৈশিষ্ট্যগুলো বলা হয়েছে- ১) মানুষের চিন্তার বাইরের কিছু ব্যাপারে বিশ্বাস, ২) সালাত প্রতিষ্ঠা করা, ৩) আল্লাহ্‌র দেওয়া রিজিক থেকে দান করা, ৪) নবী (সা) এর উপর যা নাজিল হয়েছে, ৫) তাঁর আগে নবীদের (আ) উপর যা নাজিল হয়েছে ৬) আখিরাতে দৃঢ় বিশ্বাস—এগুলোতে তারা কোনোভাবেই বিশ্বাস করবে না বলে ঠিক করেছে এবং তাদেরকে বার বার বোঝানোর পরেও তারা অবিশ্বাস করেই যাচ্ছে। এই ধরনের মানুষদেরকে সাবধান করে আর কোনো লাভ নেই, তারা শুনবে না।[২]
  • সাবধান করার জন্য এখানে আল্লাহ্‌ যে শব্দটি ব্যবহার করেছেন তা হলো – ءَأَنذَرْتَهُمْ ইনযার অর্থ এমন খবর জানানো, যেটা জানার পর মানুষ সাবধান হয়ে যায়, চিন্তিত হয়ে পড়ে। ইনযার হচ্ছে ভালবাসার সাথে, উৎসাহের মাধ্যমে সাবধান করা, যাতে মানুষ নিজের ইচ্ছায় ভুল দিকে না যায়। যেমন, ছোট বাচ্চাদেরকে আগুন, সাপ ইত্যাদির খারাপ দিকগুলো সম্পর্কে সাবধান করে দেওয়া, যাতে তারা সেগুলো না ধরে। এটা কোনো ভয়ভীতি দেখিয়ে সাবধান করা নয়। আপনি যদি কাউকে বলেন, “তিন দিন সময় দিলাম, মুসলিম হও। নাইলে কিন্তু…” – এটা ইনযার নয়। ইনযার ব্যবহার করে আল্লাহ্‌ আমাদেরকে শেখাচ্ছেন যে, অমুসলিমদেরকে, এমনকি ঘোরতর কাফিরদেরকেও ভালবাসার সাথে, উৎসাহের সাথে ইসলামের দিকে ডাকতে হবে, তাদের ভুল ধারণার পরিণতি সম্পর্কে সাবধান করতে হবে। কোনো ধরণের ভয়ভীতি, জোর করা যাবে না।
  • কাফির শব্দটির অর্থ সম্পর্কে আমাদের অনেকের ভুল ধারণা আছে। অবিশ্বাসী (কাফির) তারাই যারা সত্য জানার পরেও তা জেনে শুনে অবিশ্বাস করে। অবিশ্বাসীরা তারা নয় যাদের কাছে সত্য পৌঁছায়নি; বা যাদের জানার বা বোঝার ক্ষমতা নেই যে, তারা সত্যকে অস্বীকার করছে; বা যাদেরকে কেউ সত্য ঠিকমতো বোঝাতে পারেনি।[৩]
  • আপনার মুসলিম নামধারী প্রতিবেশীরা কাফির হবেন, যদি কু’রআনের বাণী জানার এবং বোঝার পরেও তারা সিদ্ধান্ত নেয় যে, তারা তা মানবে না। আপনার ভাই মুহাম্মাদ একজন কাফির হবেন, যদি তিনি খুব ভালো করে জানেন: কু’রআনে আল্লাহ্‌ ﷻ আমাদেরকে বহুবার সালাত আদায় করার কথা বলেছেন, কিন্তু তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি নিয়মিত সালাত পড়বেন না, কারণ তার কাছে মনে হয় না প্রত্যেক দিন সালাত আদায় করাটা জরুরি কিছু, তাও আবার দিনে ৫ বার! আপনার বোন ফাতিমা কাফির হয়ে যাবেন, যদি তিনি সিদ্ধান্ত নেন তিনি রামাদানের সিয়াম পালন করবেন না—যদিও তিনি ভালো করে জানেন কু’রআনে রোযা রাখা ফরয করা হয়েছে। ইসলামের কোন বিষয় আপনি মেনে না চলতে পারলে কাফির হবেন না, বরং সেই বিষয়গুলোকে অস্বীকার করা এবং হারামকে হালাল ভাবার মাধ্যমে আপনি কাফির হবেন।
  • কাফিরদের তুলনা হচ্ছে ধূমপায়ীদের মতো, যারা জানে ধূমপান করা স্বাস্থ্যর জন্য খারাপ। তাদের যথেষ্ট বোঝানো হয়েছে, প্যাকেটের গায়ে লেখা পর্যন্ত আছে ‘ধূমপান স্বাস্থ্যর জন্য ক্ষতিকর’, কিন্তু তারপরেও তারা বুঝে শুনে ধূমপান করে। তাদের অন্তর তাদেরকে বার বার জানান দেয় যে, তারা যা করছে তা ভুল, তাদের এটা করা উচিত নয়। কিন্তু তারপরেও তারা তাদের অন্তরের ভিতরের সেই আর্তনাদকে চেপে রেখে সত্যকে অস্বীকার করে যায়। অর্থাৎ, কাফির হচ্ছে তারাই, যারা জেনে শুনে নিজেদের অভ্যাস, গোঁড়ামি, অন্ধ বিশ্বাস, অমূলক সন্দেহ এবং ইগোর কারণে তাদের ধারণার বাইরে নতুন বা ভিন্ন কিছুকে গ্রহণ করার ক্ষমতাকে ধামাচাপা দিয়ে রেখেছে, যাতে তাদের অন্তরে সত্যর আলো কখনো পৌঁছাতে না পারে।
  • এর পরের আয়াতে আল্লাহ্‌ বলেছেন যে, তিনি এই ধরনের কাফিরদের অন্তর এবং কান সিল করে দেন এবং তাদের চোখের উপরে আবরণ দিয়ে ঢেকে দেন। এই আয়াতটি নিয়ে নাস্তিকরা মহাখুশি। তারা এই আয়াতটি দিয়ে মুসলিমদেরকে প্রায়ই আক্রমণ করে, “দেখো! তোমাদের আল্লাহ্‌ কত খারাপ! সে একদিকে মানুষকে ভালো হতে বলে, অন্যদিকে তার কথা না শুনলেই সে মানুষের অন্তরকে বন্ধ করে দেয়, মানুষের ভালো হওয়ার সব সুযোগ বন্ধ করে দেয়।” অমুসলিম ক্রিটিক এবং নাস্তিকরা কু’রআনকে অবমাননা করার জন্য এই আয়াতটি ব্যাপকভাবে অপব্যবহার করেছে এবং প্রচুর মুসলিমকে তারা সফলভাবে বিভ্রান্ত করতে পেরেছে, যারা কু’রআনের এই আয়াত পড়ে ভেবেছে—“তাইতো, আল্লাহ্‌ দেখি আসলেই কাফিরদের ভালো হওয়ার সব পথ বন্ধ করে দেন! তাহলে তারা আর কীভাবে মুসলিম হবে! এটা কেমন কথা হলো?”
  • আপনার মনে হতে পারে— আল্লাহ্‌ যদি কাফিরদের অন্তর সিল করেই দেন তাহলে তাদের দোষ কী? তারাতো ইচ্ছা করলেও ভালো হতে পারবে না। কাফিররা তারাই যারা জেনে শুনে নিজেদের দেখা, শোনা ও বোঝার ক্ষমতার উপর আবরণ টেনে নিয়েছে। আল্লাহ শুধু সে আবরণের ব্যবস্থা করে দেন। কাফির, মুনাফিকরা তাদের মস্তিস্কের সঠিক ব্যবহার না করতে করতে, তাদের মস্তিস্কের সত্য-মিথ্যা পার্থক্য করার ক্ষমতা নষ্ট করে ফেলেছে।[৪] মানুষ যদি ছয় মাস তার পা ব্যবহার না করে, তার পায়ের পেশি শুকিয়ে যায়, তখন আর সে দাঁড়াতে পারে না। একইভাবে মানুষ যদি মস্তিস্কের যথেষ্ট ব্যবহার না করে, তাহলে তার মস্তিস্ক ভোঁতা হয়ে যায়। মস্তিস্ক এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যে, মানুষ তা যত ব্যবহার করবে, তা তত শক্তিশালী হবে।[৫] আমরা যখন কোনো কিছু করি, আমরা আমাদের চিন্তার স্বাধীনতা ব্যবহার করে করার ইচ্ছা করি। কিন্তু প্রকৃত কাজটা হয় আল্লাহর তৈরি প্রাকৃতিক নিয়ম, বস্তু এবং শক্তি দিয়েই। যেমন: আমরা যখন খাই, আল্লাহই আমাদের খাওয়ান। কারণ খাওয়ার জন্য যেসব খাবার হাত দিয়ে সেই খাবার তোলা, সেই হাতকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য পেশি, মস্তিস্ক, স্নায়ুতন্ত্র, খাবার খাওয়ার জন্য মুখ, চাবানোর জন্য দাঁত, হজমের জন্য পরিপাকতন্ত্র—সবকিছুই আল্লাহ তৈরি করে দিয়েছেন এবং সবকিছুই তিনি নিয়ন্ত্রণ করেন। আমরা শুধু ইচ্ছা করি, বাকি পুরোটা ‘করেন’ আল্লাহ্‌, তাঁর নির্ধারিত প্রাকৃতিক নিয়ম দিয়ে। সুতরাং, এটা বলা যায় যে—আমরা যা করার ইচ্ছা করি, সেটা সম্পাদন করেন আল্লাহ।[৬] কু’রআনের যেসব আয়াতে বলা হয় যে, আল্লাহ‌ কাফির বা মুনাফিকদের দেখার, শোনার ক্ষমতা কেড়ে নেন, সেগুলোর প্রকৃত অর্থ হলো—মানুষ তার নিজের দোষের ফলাফল হিসেবে তাদের শোনার এবং দেখার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে এবং সেটা করেন আল্লাহ্‌, তাদের জন্য শাস্তি হিসেবে, মহাবিশ্ব পরিচালনার ‘পূর্ব-নির্ধারিত নিয়ম’ বা ‘প্রাকৃতিক নিয়ম’ দিয়েই, কোন আলাদা গজবের ব্যবস্থা করে নয়।
  • ঠিক এই আয়াতের মতো একটি কথা যদি বলি তাহলে দেখুন কী দাঁড়ায়— “নিশ্চয়ই যারা কোনোভাবেই খেতে চায় না, তাদের খেতে বলো আর নাই বলো, তারা খাবে না। আল্লাহ্‌ তাদের দেহ শুকিয়ে দেন, তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করে দেন, তাদের জন্য রয়েছে কঠিন অসুখ।” এখানে ওরা খেতে চায়না দেখেই তাদের দেহ শুকিয়ে যায়, অসুখ হয়। দেহ শুকানোর প্রক্রিয়া, জীবাণুর আক্রমণ, দেহের অঙ্গে সমস্যা হয়ে অসুস্থ হওয়া—এগুলোর সব ব্যবস্থা আল্লাহ্‌ করে দিয়েছেন প্রাকৃতিক নিয়মকানুন দিয়ে। আশা করি প্রথম প্রশ্নের উত্তর পেয়েছেন।
  • আরেকটা উদাহরণ দেই। মনে করুন, আপনি কোন পাওয়ার স্টেশন থেকে বিদ্যুৎ নিচ্ছেন এবং সেই বিদ্যুৎ আপনি ইচ্ছামত বিভিন্ন কাজে লাগাচ্ছেন। এখান থেকে আমরা দুইটা পয়েন্ট পাচ্ছি।
  • ১। বিদ্যুতের জন্য আপনি পাওয়ার স্টেশন যিনি চালাচ্ছেন তার মুখাপেক্ষী।
  • ২। কিন্তু বিদ্যুৎ কি খাতে ব্যবহার করবেন সেটা আপনার ইচ্ছাধীন।
  • তারমানে-
  • ১। বিদ্যুতের সঠিক/অপ ব্যবহারের জন্য আপনি নিজেই দায়ী, ‘পাওয়ার স্টেশন যিনি চালাচ্ছেন’ তিনি নন।
  • ২। কিন্তু যেহেতু ‘পাওয়ার স্টেশন যিনি চালাচ্ছেন’ তার ইচ্ছা ব্যতীত আপনি বিদ্যুৎ পেতে পারেন না, সেহেতু একথা বলা যায়, বিদ্যুতের যে ইচ্ছামত ব্যবহার আপনি করছেন তা ‘পাওয়ার স্টেশন যিনি চালাচ্ছেন’ তার ইচ্ছাতেই করতে পারছেন।
  • কেউ যখন বলে “আল্লাহ্‌র ইচ্ছাতেই সবকিছু হয়”, তখন সবচেয়ে বড় যে ভুলটা সাধারণত হয় তা হলো আল্লাহ্‌র ইচ্ছাকে মানুষের ইচ্ছার মত কিছু একটা বিবেচনা করা হয়। বস্তুত আল্লাহর ইচ্ছা হচ্ছে আমাদের জন্য একপ্রকার শক্তি, যেই শক্তির বলে আমরা ইচ্ছা করতে পারি। আমরা তখনই কেবল ইচ্ছা করতে পারি যখন “আল্লাহ্‌র ইচ্ছা” আমাদেরকে ইচ্ছা করার জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি সরবরাহ করে। একটু আগেই বিষয়টা নিয়ে কিছু কথা বলা হয়েছে।
  • ১। ইচ্ছা করতে পারব কি না এই ব্যাপারে আমরা আল্লাহর ইচ্ছার ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল। “আল্লাহর ইচ্ছা” তথা শক্তি ছাড়া আমরা কোন ইচ্ছাই করতে পারি না।
  • ২। কিন্তু ইচ্ছা করার জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি “আল্লাহর ইচ্ছা” কর্তৃক প্রাপ্ত হবার পর আমরা “কী ইচ্ছা করব”- সেই ব্যাপারে আমাদের স্বাধীনতা রয়েছে। [মানুষের ইচ্ছার স্বীকৃতি রয়েছে এমন কিছু আয়াত ১৮:২৯, ২৫:৫৭, ৭৬:২৯, ৭৩:১৯, ৭৮:৩৯, ৮০:১২, ৭৪:৫৫]
  • এ ব্যাপারে আরও কিছু বিষয় বলে রাখা প্রয়োজন। সবক্ষেত্রে আমরা স্বাধীনভাবে ইচ্ছাশক্তি প্রয়োগ করতে পারবো- ব্যাপারটা এমন না। তবে আমাদের শুধু সে সকল বিষয়েরই হিসাব নেয়া হবে, যে সকল বিষয়ে আমরা স্বাধীনভাবে ইচ্ছা শক্তিকে প্রয়োগ করতে পারবো।
  • আর যে সকল বিষয়ে আমাদের কোন হাত নেই, আল্লাহ নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন এবং তা তাকদিরের কিতাবে লিখেও রেখেছেন। যেমন- কোন মানুষ কখন জন্মাবে, কখন মারা যাবে, সে কতটুকু রিযিক পাবে ইত্যাদি। এসব ব্যাপারে আমাদের জবাবদিহি করতে হবে না।
  • ধরুন, আমি খুলনায় পড়াশোনা করি বাপ-মায়ের টাকায়। এখানে খুলনায় পড়াশোনা থেকে শুরু করে সেখানে জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছুও তাদেরই টাকায়। এখন আমি ওইখানে পড়াশোনা করবো নাকি ফুর্তি করে বেড়াবো- এটা সম্পূর্ণ আমার ইচ্ছাধীন। কিন্তু তারা আমাকে খুলনায় পাঠিয়ে ‘টাকা’ দিচ্ছে বলে আমি তাদেরকে ব্লেম করতে পারি না, যদিও বা আমি ফুর্তি করলে এই ‘টাকা’ দিয়েই করবো। একইভাবে মানুষের সামনে চলার দুইটা রাস্তা আছে, একটা ভাল এবং অন্যটা খারাপ। এই দুইটা পথই আল্লাহ্‌র সৃষ্টি। এখন আপনার ইচ্ছা যে আপনি কোন পথে যাবেন। তাই বলে আপনি স্রষ্টাকে এই ‘দুইটা পথ’ সৃষ্টি করার জন্য দোষারোপ করতে পারেন না।
  • অধিকাংশ বিষয়েই আল্লাহ্‌ মানুষকে ইচ্ছা প্রয়োগের ক্ষমতা বা স্বাধীনতা দিয়েছেন। যেমন- ঈমান আনা বা না আনা, হালাল উপায়ে রিযিক অন্বেষণ করা বা হারাম উপায়ে করা, ভাল বা খারাপ কাজ করা ইত্যাদি। এই বিষয়গুলোর জন্য মানুষকে জবাবদিহি করতে হবে। এগুলোও তাকদিরের কিতাবে লিপিবদ্ধ করা আছে, কিন্তু এগুলো তাকদির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত নয়। প্রশ্ন হল- এটা কিভাবে সম্ভব? তাকদিরের কিতাবে লিপিবদ্ধ করা আছে, কিন্তু এগুলো তাকদির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত নয়! এবার চলুন এই প্যারাডক্সের সমাধান করি।
  • প্রথমে ছোট একটা উদাহরন দেই। ধরুন- আপনি কোন পড়াশোনা করেন না। আপনার শিক্ষক আপনার প্রস্তুতি সম্পর্কে অবগত। এখন তিনি যদি পরীক্ষার আগে আপনাকে বলেন যে, আপনি পাশ করতে পারবেন না। আর রেজাল্ট দেয়ার পর যদি দেখা যায়, আপনি সত্যি সত্যিই ফেল করেছেন। সেক্ষেত্রে আপনি কাকে দায়ী করবেন? শিক্ষককে নাকি নিজেকে?! স্রষ্টা আর আমাদের জানাটা ‘কিছুটা’ এরকমই। (তবে এক্ষেত্রে শিক্ষকের ভবিষ্যৎবাণী ভুল হতে পারে, কিন্তু আল্লাহ্‌র হবে না)। স্রষ্টা জানেন আমরা কি করবো, কিন্তু এর মানে এই নয় যে তিনি আমাদের কৃতকর্মের জন্য দায়ী। আমরা কি করবো সেটা আল্লাহ্ তার জ্ঞানের কারণে আগে থেকেই জানেন। কিন্তু তিনি জানেন বলেই আমরা ঐ কাজ করবো- ব্যাপারটা এমন নয়।
  • আরও একটা উদাহরন দেখি। আমার সামনে দুইটা রাস্তা আছে। ধরা যাক, আমি ডান দিকের রাস্তায় গেলাম। আমি যে ডান দিকের রাস্তায় যাবো- এটা আল্লাহ্ আগে থেকেই জানতেন, তাই তিনি এটা আমাকে দুনিয়াতে পাঠানোর আগেই লিখে রেখেছিলেন। এখন তিনি লিখে রেখেছিলেন বলেই কিন্তু আমি ডান দিকের রাস্তায় যাই নি। বরং আমি ডান দিকের রাস্তায় যাবো দেখে আল্লাহ্ লিখে রেখেছিলেন। আমরা যখনই বলি – “আল্লাহ তো সব জানেন” – আমরা ধারণা করে নেই যে আল্লাহ্‌র জানাটা হচ্ছে অতীত কালের ঘটনা এবং যেহেতু আল্লাহ্‌ ‘অতীত কালে’ জেনে গেছেন, তার মানে বর্তমান, ভবিষ্যৎ সবই পূর্ব নির্ধারিত। এটা ভুল ধারণা। আল্লাহ সময়ের উর্ধে। সময়কে আল্লাহ্ সৃষ্টি করেছেন। তাই তিনি সময়ের উপর নির্ভরশীল নন। তাঁর জন্য কোন অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ নেই। আমরা সময়ের গণ্ডিতে বাঁধা। কিন্তু আল্লাহ্ নন। আমাদের কাছে কোন ঘটনা ঘটার আগে সেটা ‘হতে পারে’ অবস্থায় থাকে। কিন্তু আল্লাহ্‌র কাছে ‘হতে পারে’ বলে কিছু নাই। কোন সত্তা যখন সময়ের বাইরে চলে যায়, তখন সে একই সাথে অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ সবকিছুই একই সময়ে, একই মুহূর্তে জানতে পারে। সুতরাং, আমি জাহান্নামে যাবো এটা যদি আল্লাহ্‌ জানেন, তারমানে এই না যে আল্লাহর জানাটা অতীতকালে ঘটে গেছে এবং আমার আর ভালো কাজ করে কোন লাভ নেই, আমার ভবিষ্যৎ পূর্বনির্ধারিত। আল্লাহ্‌ এই মুহূর্তে আমি কি করছি, কি করবো এবং তার ফলে আমার পরিণতি কি হবে তা সব দেখতে পাচ্ছেন। কিন্তু তার মানে এই না যে আমি কি করবো, কি করবো না, সেই সিদ্ধান্ত নেবার স্বাধীনতা আল্লাহ্‌ আমাকে দেন নি।
  • আল্লাহ্‌র কাছে অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যতের সকল জ্ঞান রয়েছে। সেই জ্ঞানের ভিত্তিতে আল্লাহ্‌ জানেন কখন মানুষ কী করবে। এবং এই জানার ভিত্তিতেই আল্লাহ্ তাকদিরের কিতাবে লিখে রেখেছেন মানুষ কি কি করবে।
  • অতএব, যারা ভুল পথে পরিচালিত হয় তারা নিজেদের ইচ্ছাতেই, নিজেদের কারণেই হয়। শয়তান শুধু তাদেরকে ওয়াসওয়াসা দেয়, খারাপ কাজে উৎসাহ দেয়; কিন্তু মূল কাজটা করে ব্যক্তি নিজেই। আপনাকে যদি কেউ পাহাড় থেকে লাফ দিতে বলে আর আপনি তার কথামত লাফ দিলেন- এখানে আসল দোষটা কার? ঐ ব্যক্তি নাকি আপনার? শয়তানের ব্যাপারটা এমনই, সে হল প্রভাবক- ভুল পথের আহ্বানকারী। আহ্বান শোনা বা না শোনা আপনার নিয়ন্ত্রণাধীন। আর আল্লাহ্‌ও তাদেরকে গোমরাহ করেন না। আল্লাহ্‌ শুধু তাদের সেই ভবিষ্যৎ অবস্থাটা তার জ্ঞানের মাধ্যমে আগে থেকেই লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন মাত্র, সেটার নিয়ন্ত্রণ নয়।
  • ২। আল্লাহ্‌ যেহেতু জানেনই কে বেহেশতে যাবে আর কে জাহান্নামে যাবে, তাহলে দুনিয়াতে পাঠিয়ে এত কষ্ট দেয়ার মানে কি? সরাসরি জাহান্নাম বা জান্নাতে পাঠালেই তো হত!
  • একই ধরনের আরেকটা প্রশ্ন, আল্লাহ্‌ যদি সর্বজ্ঞ হোন, তবে তার বান্দাদের পরীক্ষা করে দেখার কোন মানে আছে কি?
  • উত্তর: একটু চিন্তা করলেই বুঝা যায় যে, এটা আসলে কতটা হাস্যকর কথা। যদি আপনাকে কোন কিছু করার সুযোগ না দিয়েই জাহান্নামে পাঠানো হয়- তাহলে আপনি নিশ্চিতভাবেই আল্লাহ্‌কে বলবেন- “কেন আমাকে দোযখে দেওয়া হল? আমি কি অপরাধ করেছি?” যারা বেহেস্তে যাবে, তারা কি দাবি করবে না, “কেন আমাকে বেহেশতে ৫০,০০০ একর বাগান দেওয়া হল; কেন ১,০০,০০০ একর বাগান দেওয়া হল না?”
  • মানুষকে যদি আল্লাহ্‌ কোন শাস্তি দেন, তাহলে এটা স্বাভাবিক যে আল্লাহ্‌ মানুষকে সেই শাস্তি পাবার কারণ কি সেটা দেখাবেন। তা না হলে মানুষ দাবি করবেই কেন তাকে শাস্তি দেওয়া হল। আল্লাহ্‌ যদি মানুষকে পৃথিবীর জীবনের সুযোগটা না দিয়ে জাহান্নাম বানিয়ে, তাতে সরাসরি মানুষ ভরে দিতেন– তাহলে মানুষ কি সেটা মেনে নিত?
  • একইভাবে মানুষ যখন বেহেশতে যাবে, তার দাবি থাকবে তাকে বেহেশতে যা দেওয়া হয়েছে তা কিসের ভিত্তিতে দেওয়া হয়েছে। কেন সে কম পেল তার বেহেশতের প্রতিবেশীর থেকে? কেন সে যা পেয়েছে তার থেকে অন্য কিছু পেল না? মানুষ স্বাভাবিকভাবেই দাবি করবে আল্লাহ কিসের ভিত্তিতে তাকে বেহেশতে সেসব দিয়েছে।
  • একারণেই মানুষকে পৃথিবীর জীবন দেওয়া হয়েছে যেন মানুষ বেহেশতে যা কিছু পাবে, তা সে নিজে পৃথিবীতে অর্জন করে যেতে পারে।
  • আর এখানে পরীক্ষা বলতে আপনি যদি ভেবে থাকেন যে, এটা একজন বিজ্ঞানীর গবেষণার মত; যিনি দেখছেন কোন একটা পদার্থে অমুক অমুক উপাদান যোগ করলে মূল পদার্থটির কি কি পরিবর্তন হয়- তাহলে ভুল ভাবছেন। আল্লাহ্‌র পরীক্ষা নেয়ার বিষয়টা এরকম না। কারণ আল্লাহ্‌র জ্ঞান অপরিবর্তনীয়, কোন কিছুই তার জ্ঞানের বাইরে না। তিনি ভাল করেই জানেন ফলাফল কি হবে। পরীক্ষাটা হলো আমাদের নিজেদের মধ্যে, নিজেদের জন্য। আমরা কিভাবে বিভিন্ন কন্ডিশনে রেসপন্স করি। যাতে করে আমরা আমাদের কৃতকর্মের জন্য স্রষ্টাকে দায়ী করতে না পারি। যাতে আমরা বলতে না পারি, “আল্লাহ্‌ আমাকে তো তুমি যথেষ্ট পরিমাণ সুযোগ দাও নি।”
  • ৩। যেহেতু কারও জন্ম-মৃত্যু নির্ধারিত, সেহেতু কারও মুসলিম হিসেবে জন্মগ্রহণ করাটাও তো নির্ধারিত। আর মুসলিম হিসেবে জন্মগ্রহণ করে সে জান্নাতে যাবে। আর যাদের জন্ম হয়েছে হিন্দু, খ্রিস্টান পরিবারে- তাদের কি দোষ? তারা কেন জাহান্নামে যাবে?
  • উত্তর: যারা মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছে, তারা জন্মের জন্য জান্নাতে যাবে না, বরং তাদের বিশ্বাস ও কর্মের জন্য জান্নাতে যাবে। অনেক মানুষ আছে যারা মুসলিম পরিবারে জন্ম নিয়েও নামায আদায় করে না অথচ নামায ঈমান ও কুফরের পার্থক্যকারী। আবার অনেকেই মুসলিম পরিবারে জন্মেও ইসলাম ত্যাগ করে। মুসলিম পরিবারে জন্ম নেওয়া অবশ্যই জান্নাতের গ্যারান্টি নয়।
  • সব মুসলিমরা জান্নাতে যাবে বা কয়েকদিন জাহান্নামে শাস্তির পর জান্নাতে চলে যাবেই — এই ভুল ধারণা বনী ইসরাইলের ছিল, যারা ছিল সেই যুগের মুসলিম। কোনো কারণে নিজেদের প্রতি এমন অতি আত্মবিশ্বাস আজকে মুসলিমদের মধ্যেও চলে এসেছে। সূরা বাকারাহ সহ আরও কমপক্ষে ১০টি আয়াতে আল্লাহ্‌ আমাদেরকে বলেছেন: শুধু ঈমান এনেছি বললেই হবে না, একইসাথে আমাদেরকে ভালো কাজ (عَمِلُوا۟ ٱلصَّٰلِحَٰتِ) করতে হবে, যদি আমরা জান্নাতে যেতে চাই। আর ঈমান একটা বড় ব্যাপার। কেউ মুসলিম দাবী করলেই ঈমানদার হয়ে যায় না। ঈমান যথেষ্ট কষ্ট করে অর্জন করতে হয় এবং তার থেকেও বেশি কষ্ট করে ধরে রাখতে হয়। একজন মুখে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলল, কিন্তু ‘লা ইলাহা ইল্লালাহ’ মানে কী সেটা বুঝল না, -এর সাতটি শর্ত পূরণ করল না; ‘লোকে কী বলবে’ এই ভয়ে সে আল্লাহ্‌র নির্দেশকে প্রতিদিন অমান্য করল; নিজের কামনা-বাসনা পূরণ করার জন্য জেনে শুনে কু’রআনের নির্দেশ অমান্য করল; ইসলামকে সঠিকভাবে মানার জন্য নিজের ভেতরে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনার কোনো ইচ্ছাই তার ভেতরে নেই — এই ধরনের মানুষের ভেতরে ঈমান এখনও জায়গা পায়নি। তারা কেবল হয়ত মুসলিম হয়েছে বা নিজেকে শুধুই মুসলিম বলে দাবি করেছে।
  • কেউ নিজেকে মুসলিম বলে দাবি করুক আর না করুক, তার অবস্থা যদি এই আয়াতের মতো হয়, তাহলে সে চিরকাল জাহান্নামে থাকবে, যদি আল্লাহ ইচ্ছা করেন—
  • “কখনই না! যে একটিও বড় পাপ অর্জন করে এবং তার পাপের ধারাবাহিকতা তাকে ঘিরে রাখে — ওরা হচ্ছে (জাহান্নামের) আগুনের সহযাত্রী। সেখানে তারা অনন্তকাল [বা অনেক লম্বা সময়] থাকবে।” [আল-বাক্বারাহ ২:৮১]
  • এই আয়াতে আল্লাহ্‌ এক বিশেষ প্রজাতির মানুষের কথা বলেছেন, যাদের অবাধ্যতা চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। তিনি বলছেন: যারা ‘একটিও বড় পাপ’ করে। سَيِّئَةً — যা এসেছে سُوء থেকে, যার অর্থগুলো হলো: নিজের বা অন্যের জন্য ক্ষতিকারক কাজ, অশ্লীলতা, অপব্যবহার, অন্যায় সুবিধা নেওয়া। এটি হচ্ছে ঘৃণিত পাপ, বড় পাপ, যেমন মদ বা মাদকের প্রতি আসক্তি, ব্যভিচার, সুদ, হারাম ব্যবসা, অশ্লীলতা ইত্যাদি। এটি ছোটখাটো পাপ ذنب নয়। এই ধরনের একটি পাপ যে করে, তারপর যখন সেই পাপ তার জীবনটাকে ঘিরে ফেলে, সেই পাপ থেকে সে কোনোভাবেই বের হয় না, বরং সেই পাপ তাকে অন্যান্য পাপের দিকে নিয়ে যেতে থাকে, তাকে হাজার বুঝিয়েও লাভ হয় না—সে জাহান্নামের পথে চলতেই থাকে সে চিরজীবন জাহান্নামে থাকবে, যদি আল্লাহ ইচ্ছা করেন।
  • হতে পারে সে কিছু ভালো কাজও করে। কিন্তু সেই পাপটা সে করবেই, এবং সেটা নিয়ে তার কোনো অনুশোচনা নেই। তাকে কু’রআন থেকে যতই প্রমাণ দেখানো হোক না কেন, সেই পাপ করা সে কোনোভাবেই ছাড়বে না। সে পাপটাকে হারাম মানে না। সে তার নিজের ইচ্ছা এবং সিদ্ধান্তকে আল্লাহ্‌র ইচ্ছা থেকে উপরে স্থান দিয়েছে। তার প্রভু আর আল্লাহ্‌ নয়, তার প্রভু হয়ে গেছে তার নিজের ইচ্ছা। এভাবে সে আল্লাহ্‌র আয়াতের কুফরি করেছে এবং আল্লাহ্‌র সাথে শিরক করছে, যার শাস্তি চির জাহান্নাম।
  • মানুষ যখন ছোট খাটো পাপ অনায়াসে করতে অভ্যস্ত হয়, তখন বড় পাপে জড়িত হওয়ার পথ খুলে যায়। আর বড় পাপগুলো কুফর ও শিরকের কাছাকাছি করে দেয়। এক পর্যায়ে ইসলাম থেকেই বের করে নেয়। ফলে তখন চিরস্থায়ী জাহান্নামই তার ঠিকানা হয়ে যায়।
  • এই ধরনের মানুষের উদাহরণ আমরা চারপাশে তাকালে দেখতে পারব, যারা হয়ত নিয়মিত জুম’আর নামায পড়ে, ফকিরদেরকে টাকা পয়সা দেয়, কুরবানির ঈদে লক্ষ টাকার গরু কিনে জবাই করে। কিন্তু তারপরে দেখা যায়: তারা তাদের হারাম ব্যবসা কোনোভাবেই ছাড়বে না। তারা কোনোভাবেই রাতের বেলা একটু হুইস্কি না টেনে ঘুমাতে যাবে না। তারা কোনোভাবেই ইন্টারনেটে পর্ণ দেখার অভ্যাস থেকে বের হবে না। তারপর তারা বিদেশে গেলে … না করে ফিরবে না। —এই ধরনের মানুষদেরকে পাপ ঘিরে ফেলেছে। তারা ঠিকই লক্ষ্য করছে যে, একটা পাপের কারণে তারা অন্যান্য পাপে জড়িয়ে পড়ছে। তারা খুব ভালো করে জানে তাদের কাজটা হারাম, কিন্তু তারপরেও তারা নানাভাবে সেই পাপ কাজকে সমর্থন করে। তারা কোনোভাবেই সেই পাপ থেকে বের হবে না। এমনটা নয় যে, তারা প্রবৃত্তির তাড়নায় এই পাপগুলো করছে। বরং তারা জেনে শুনেই ইচ্ছা করে অবাধ্য হয়ে পাপগুলো করছে। —এদের পরিণাম ভয়ঙ্কর।
  • এই আয়াতে خَطِيٓـَٔتُ এর অনুবাদ সাধারণত ‘পাপ’ করা হলেও, এটি হচ্ছে পাপের কারণে যে ফলাফল হয়, সঠিক রাস্তা থেকে দূরে চলে যাওয়া। এখানে আল্লাহ্‌ বলছেন যে, যে বড় পাপ করে, তারপর পাপের ধারাবাহিকতায় করা কাজকর্ম তার জীবনটাকে ঘিরে ফেলে।
  • যেমন, রাহাত সাহেব বিশাল পরিমাণের ঘুষ খাইয়ে একটা সরকারি প্রজেক্টের কন্ট্রাক্ট হাতালেন। এর জন্য তিনি মন্ত্রীকে গুলশানে দুইটা ফ্ল্যাট কিনে দেওয়ার নিশ্চয়তা দিলেন। তারপর ব্যাংকের লোণ নিয়ে জোগাড় করা সেই বিশাল অংকের ঘুষ, সুদ সহ শোধ করতে গিয়ে, এবং মন্ত্রীকে কথা দেওয়া দুইটা ফ্ল্যাটের টাকা উঠানোর জন্য শেষ পর্যন্ত তাকে প্রজেক্টের অনেক টাকা এদিক ওদিক সরিয়ে ফেলতে হলো। দুই নম্বর সস্তা কাঁচামাল সরবরাহ করতে হলো। যোগ্য কনট্রাক্টরদের কাজ না দিয়ে অযোগ্য, সস্তা কনট্রাক্টরদের কাজ দিতে হলো, যারা কিনা তাকে প্রচুর ঘুষ খাওয়ালো। এরপর একদিন তার প্রজেক্ট ধ্বসে পড়ল। তার নামে ব্যাপক কেলেঙ্কারি হয়ে মামলা হয়ে গেলো। মামলায় উকিলের টাকা জোগাড় করতে তাকে আরও বিভিন্ন উপায়ে টাকা মারা শুরু করতে হলো। তারপর কয়েকদিন পর পর তাকে পুলিশ ধরতে আসে, আর তিনি পুলিশের উপরের তলার লোকদের ঘুষ খাইয়ে পুলিশকে হাত করে ফেলেন। প্রজেক্টে দুর্নীতির কারণে ভুক্তভুগি মানুষদের হাত থেকে বাঁচার জন্য তাকে অনেক টাকা খরচ করে কিছু ‘সোনার ছেলে’ পালতে হয়। তারা মাঝে মাঝেই খুন, ধর্ষণ করে, হোটেলে থেকে … করে এসে বিরাট বিল ধরিয়ে দেয়। তারপর তাদেরকে যখন পুলিশ ধরতে আসে, তিনি পুলিশকে টাকা খাইয়ে তাদেরকে রক্ষা করেন। এত দুশ্চিন্তার মধ্যে তিনি রাতে কোনোভাবেই ঘুমাতে পারেন না। দুশ্চিন্তা ভুলে থাকার জন্য তাকে নিয়মিত মদ খাওয়া ধরতে হয়। এভাবে একটার পর একটা পাপে তিনি জড়িয়ে পড়তে থাকেন। পাপের ধারাবাহিকতা তার জীবনটাকে ঘিরে ফেলে।
  • এই আয়াতে আল্লাহ বলেননি, “যারা একটি পাপ করে”, বরং তিনি বলেছেন, “যারা একটিও পাপ অর্জন করে।” এ থেকে আমরা এই ধরনের পাপীদের মানসিকতা সম্পর্কে ধারণা পাই: তারা চেষ্টা করে সেই পাপ অর্জন করে। পাপটা এমনিতেই ভুলে হয়ে যায় না। বরং তারা সেই পাপ করে একধরনের পরিতৃপ্তি পায়। সেই পাপ করে তার কোনো অনুশোচনা নেই, এটা তার কাছে একটা অর্জন। তারা মনে করে যে, এই পাপ করা কোনো ব্যাপার না, অন্য সবাই করছে না?
  • কেউ যদি আল্লাহ্‌র সাথে শিরক করে, হোক সে মুসলিম বা অমুসলিম- সে কখনও জান্নাতে যাবে না। একইভাবে যারা সালাত কায়েম করে না, বা ইসলামের কোন বিধানকে অস্বীকার করে (যেমন- কেউ যদি পর্দার বিধানকে অস্বীকার করে, সমকামিতাকে হালাল মনে করে), তারা সুস্পষ্ট কুফরিতে নিমজ্জিত হল। এরাও জান্নাতে যাবে না। বিস্তারিত দেখুন IslamQA-তে: http://islamqa.info/en/147996
  • এবার আসি পরের পয়েন্টে। দুনিয়াতে এত এত মানুষ যদি নিজের ধর্ম ছেড়ে ইসলামের দিকে আসতে পারে, তাহলে তার আসতে সমস্যা কি? যে সবকিছু ছেড়ে ইসলামে আসবে, তার জন্য আল্লাহ্‌ তো তার অতীতের সব গুনাহ ক্ষমা করে দেয়ার নিশ্চয়তা দিচ্ছেনই। সেটা কি কোন বেনিফিট নয়? প্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় যে কোন মানুষের স্বাধীন বুদ্ধি ও বিবেক থাকে। এই সময়ে যদি তার কাছে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছায় এবং সে যদি তা গ্রহণ না করে, তাহলে হিন্দু, খ্রিষ্টান বা নাস্তিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করা তার জন্য অজুহাত হতে পারে না। যে অমুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছে, তার জন্য সেটি একটি পরীক্ষা। পৃথিবীতে বহু মানুষ এই পরীক্ষায় কৃতকার্য হচ্ছে, অমুসলিম থেকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করছে। সে যদি যথার্থভাবে ইসলামের দাওয়াত পায়, তাহলে ইসলাম গ্রহণ করা তার জন্য অবশ্য কর্তব্য হবে। (মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই ধরণের অভিযোগ মূলত আসে নাস্তিকদের পক্ষ থেকে। কিন্তু নিজ পরিবারের বিশ্বাসকে প্রত্যাখ্যান করা যদি অসম্ভবই হবে তাহলে তারা আবার নাস্তিক হয় কীভাবে!)
  • “…অতঃপর যদি তোমাদের নিকট আমার পক্ষ থেকে কোন হেদায়েত পৌঁছে, তবে যে ব্যক্তি আমার সে হেদায়েত অনুসারে চলবে, তার উপর না কোন ভয় আসবে, না (কোন কারণে) তারা চিন্তাগ্রস্ত ও সন্তপ্ত হবে। আর যে লোক তা অস্বীকার করবে এবং আমার নিদর্শনগুলোকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করার প্রয়াস পাবে, তারাই হবে জাহান্নামবাসী; অন্তকাল সেখানে থাকবে।” (সূরা বাকারাহ ২:৩৮-৩৯)
  • ৪। অনেকের কাছে তো ইসলামের দাওয়াতই পৌঁছায় না। পৃথিবীতে অনেক দুর্গম জায়গা আছে যেখানে হয়তো ইসলামের দাওয়াত যায়নি। আবার অনেকের কাছে বিভিন্ন কারণেই ঠিকভাবে ইসলামের বাণী পৌঁছায়নি। তাহলে এদের সবাই কি জাহান্নামে যাবে?
  • উত্তর: এসব ব্যাপারেও ইসলাম আমাদেরকে সুস্পষ্টভাবে অভিহীত করে। আল্লাহ্‌ কারো প্রতি সামান্যতম অন্যায় করবেন না। এটি আল্লাহর সিফাত বা গুণ নয় যে তিনি বান্দার প্রতি বিন্দুমাত্রও জুলম করেন।
  • “নিশ্চয়ই আল্লাহ কারো প্রতি বিন্দুমাত্রও জুলুম করেন না; আর যদি তা[মানুষের কর্ম] সৎকর্ম হয়, তবে তাকে দ্বিগুণ করে দেন এবং নিজের পক্ষ থেকে বিপুল সওয়াব দান করেন।” (সূরা নিসা ৪:৪০) “…বস্তুতঃ আল্লাহ তাদের উপর কোন অন্যায় করেননি, কিন্তু তারা নিজেরাই নিজেদের উপর অত্যাচার করছিল।” (সূরা আলি ইমরান ৩:১১৭) “কোন রাসূল না পাঠানো পর্যন্ত আমি কাউকেই শাস্তি দান করি না।” (সূরা বনী ইসরাঈল ১৭:১৫)
  • চার প্রকারের লোক কিয়ামতের দিন আল্লাহ্‌ তা’আলার সাথে কথোপকথন করবে। প্রথম হল বধির লোক, যে কিছুই শুনতে পায় না; দ্বিতীয় হল সম্পূর্ণ নির্বোধ ও পাগল লোক যে কিছুই জানে না। তৃতীয় হল অত্যন্ত বৃদ্ধ যার জ্ঞান লোপ পেয়েছে।চতুর্থ হল ঐ ব্যক্তি যে এমন যুগে জীবন যাপন করেছে যে যুগে কোন নবী আগমন করেননি বা কোন ধর্মীয় শিক্ষাও বিদ্যমান ছিল না। বধির লোকটি বলবে, “ইসলাম এসেছিল, কিন্তু আমার কানে কোন শব্দ পৌঁছেনি।” পাগল বলবে, “ইসলাম এসেছিল বটে, কিন্তু আমার অবস্থা তো এই ছিল যে শিশুরা আমার উপর গোবর নিক্ষেপ করত।” বৃদ্ধ বলবে, “ইসলাম এসেছিল, কিন্তু আমার জ্ঞান সম্পূর্ণ লোপ পেয়েছিল। আমি কিছুই বুঝতাম না।” আর যে লোকটির কাছে কোনও রাসূল আসেনি এবং সে তাঁর কোন শিক্ষাও পায়নি সে বলবে, “আমার কাছে কোনও রাসুল আসেননি এবং আমি কোন সত্যও পাইনি। সুতরাং আমি আমল করতাম কিভাবে?”
  • তাদের এসব কথা শুনে আল্লাহ্‌ তা’আলা তাদেরকে নির্দেশ দেবেন- “আচ্ছা যাও, জাহান্নামে লাফিয়ে পড়।” রাসূল (সা) বলেন, “যাঁর হাতে আমার প্রাণ রয়েছে তাঁর শপথ! যদি তারা আল্লাহর আদেশ মেনে নেয় এবং জাহান্নামে লাফিয়ে পড়ে তবে জাহান্নামের আগুন তাদের জন্য ঠাণ্ডা আরামদায়ক হয়ে যাবে।”
  • অন্য বিবরণে আছে যে, যারা জাহান্নামে লাফিয়ে পড়বে তা তাদের জন্য হয়ে যাবে ঠাণ্ডা ও শান্তিদায়ক। আর যারা বিরত থাকবে তাদের হুকুম অমান্যের কারণে টেনে হিঁচড়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।
  • ইমাম ইবনু জারির(র) এই হাদিসটি বর্ণণা করার পরে আবু হুরাইরা(রা)-র নিম্নের ঘোষণাটি উল্লেখ করেছেন- “এর সত্যতা প্রমাণ হিসেবে তোমরা ইচ্ছা করলে আল্লাহ্‌ তা’আলার وَمَا كُنَّا مُعَذِّبِينَ حَتَّىٰ نَبْعَثَ رَسُولًا [কোন রাসূল না পাঠানো পর্যন্ত আমি কাউকেই শাস্তি দান করি না।] বাক্যও পাঠ করতে পারো।”
  • [মুসনাদ আহমাদ, তাফসির ইবন কাসির, সুরা বনী ইস্রাইল ১৫নং আয়াতের তাফসির] [ইমাম মুহাম্মাদ ইবনু ইয়াহইয়া যাহলী(র) কর্তৃক বর্ণিত একটি রেওয়াতে নবীশূণ্য যুগের লোক, পাগল ও শিশুর কথাও এসেছে।]
  • কিয়ামতের দিন অজ্ঞ ও বোধহীন লোকেরা নিজেদের বোঝা কোমরে বহন করে নিয়ে আসবে এবং আল্লাহ্‌ তা’আলার সামনে ওজর পেশ করে বলবে, “আমাদের কাছে কোন রাসূল আসেননি এবং আপনার কোন হুকুমও পৌঁছেনি। এরূপ হলে আমরা মন খুলে আপনার কথা মেনে চলতাম।” তখন আল্লাহ্‌ তা’আলা বলবেন, “আচ্ছা এখন যা হুকুম করবো তা মানবে তো?” উত্তরে তারা বলবে, “হ্যাঁ, অবশ্যই বিনা বাক্য ব্যয়ে মেনে নেবো।” তখন মহামহিমান্বিত আল্লাহ্‌ বলবেন, “আচ্ছা যাও, জাহান্নামের পার্শ্বে গিয়ে তাতে প্রবেশ কর।” তারা তখন অগ্রসর হয়ে জাহান্নামের পার্শ্বে পৌঁছে যাবে। সেখানে গিয়ে যখন ওর উত্তেজনা, শব্দ এবং শাস্তি দেখবে তখন ফিরে আসবে এবং বলবে, “হে আল্লাহ্‌ আমাদেরকে এর থেকে রক্ষা করুন।” আল্লাহ্‌ তা’আলা বলবেন, “দেখো, তোমরা অঙ্গীকার করেছো যা আমার হুকুম মানবে আবার এই নাফরমানী কেন?” তারা উত্তরে বলবে, “আচ্ছা, এবার মানবো।” অতঃপর তাদের কাছ থেকে দৃঢ় অঙ্গীকার নেয়া হবে। তারপর এরা ফিরে এসে বলবেঃ “হে আল্লাহ্‌, আমরা তো ভয় পেয়ে গেছি। আমাদের দ্বারা তো আপনার এই আদেশ মান্য করা সম্ভব নয়।” তখন প্রবল প্রতাপান্বিত আল্লাহ্‌ বলবেন, “তোমরা নাফরমানী করেছো। সুতরাং এখন লাঞ্ছনার সাথে জাহান্নামী হয়ে যাও।” রাসূল (সা) বলেন যে, প্রথমবার তারা যদি আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী জাহান্নামে লাফিয়ে পড়তো তবে ওর অগ্নি তাদের জন্য ঠাণ্ডা হয়ে যেত এবং তাদের দেহের একটি লোমও পুড়তো না।
  • [মুসনাদ বাযযার, ইমাম ইবন কাসির(র) এর মতে ইমাম ইবন হাব্বান(র) নির্ভরযোগ্যরূপে বর্ণণা করেছেন; তাফসির ইবন কাসির, সুরা বনী ইস্রাইল ১৫নং আয়াতের তাফসির, ইয়াহইয়া ইবন মুঈন(র) ও নাসাঈ(র) এর মতে এতে(সনদের ব্যাপারে) ভয়ের কোন কারণ নেই।]
  • আল্লাহ্‌র গুণাবলী সম্পর্কে কুরআন ও হাদিস থেকে আমরা যা জানতে পারি, তা থেকে নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, যারা আদৌ ইসলামের দাওয়াত পাবে না, তাদের প্রতি পরকালে যে পরীক্ষা হবে তা মোটেও তাদের সাধ্যাতীত কিছু হবে না। অনেক লোকই আগুনের সেই পরীক্ষাতেও নিজ যোগ্যতায় পাশ করে যাবে এবং অনেকে নিজ অযোগ্যতায় ব্যর্থ হবে।
  • “আল্লাহ কাউকে তার সাধ্যাতীত কোন কাজের ভার দেন না; সে তাই পায় যা সে উপার্জন করে এবং তাই তার উপর বর্তায় যা সে করে।…” (সূরা বাকারাহ ২:২৮৬)
  • কেউ যদি দাবি করে যে সে ভবিষ্যতের কথা জানে এবং তার এই জানার ভিত্তিতে সে একটা বই রচনা করে, কিন্তু সেই ভবিষ্যতবাণীকে বাস্তবতা দেবার জন্য সে কোন প্রচেষ্টা না চালায়, তাহলে তার ব্যাপারে দুইটি সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়:
  • ১। যদি তার সব ভবিষ্যদ্বাণী বাস্তব হয়, তবে বলা যাবে সে আসলেই ভবিষ্যত জানে।
  • ২। যদি তার ভবিষ্যদ্বাণী বাস্তব না হয়, তবে বলা যাবে সে আসলে ভবিষ্যত জানে না।
  • কিন্তু তার প্রতিটি ভবিষ্যদ্বাণী ফলে যাবার কারণে,
  • একথা বলা যাবে না যে, তার ভবিষ্যদ্বাণীর কারণেই কোনো ঘটনা ঘটেছে।
  • বরং বলতে হবে, ভবিষ্যতের সঠিক জ্ঞান থাকার কারণেই সে ঘটনাটিকে আগেই লিখে রাখতে পেরেছে।
  • ইসলাম একথা বিশ্বাস করতে বলে যে, আল্লাহ্‌ তার ইলমের দ্বারা জানেন মানুষ কী করবে, তা তিনি তাকদিরের কিতাবে লিখে রেখেছেন। এটা নিছক আল্লাহর ইলম সংক্রান্ত একটা বিশ্বাস বা স্বীকৃতি। স্রষ্টা অনাদি, অনন্ত, সর্বজ্ঞ। তিনি সময়ের অধীন না। অতীত, বর্তমান ভবিষ্যতের সব জ্ঞানই তার কাছে আছে। সেই জ্ঞান তিনি লিপিবদ্ধ করবেন কি করবেন না, সেটা তার ইচ্ছা। সেটা লিপিবদ্ধ করা বা না করার দ্বারা কারো ওপর কিছু আরোপিত হয় না।
  • ইসলাম একথা বিশ্বাস করতে বলে না যে, আল্লাহ তাকদিরের কিতাবে লিখে রেখেছেন বলেই আমরা পৃথিবীতে সব কাজ করি, বা আল্লাহ ‘by force’ আমাদেরকে দিয়ে তাকদিরের কিতাবের লিখিত বিষয়বস্তুর অভিনয় করাচ্ছেন আর আমরা রোবটের মত অভিনয় করে যাচ্ছি! [অথচ আমরা অনেকে তাকদিরকে সেটাই মনে করি, আর সেখানেই আমাদের ভুল।]
  • শেষ কথা- আল্লাহ্‌ই ভাল জানেন তাকদির সম্পর্কে। আমাদের শুধু বিশ্বাস রাখতে হবে।
  • তথ্যসূত্র:

Archives

October 2024
S S M T W T F
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031