ঐতিহাসিক নাস্তিক: প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মে ঘটা ঘটনার বাইরে কোনো ঘটনা নেই
Admin |
২৪০ views |
ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৯ |
নাস্তিকদের প্রশ্নোত্তর
|
২:১০ পূর্বাহ্ণ
ঐতিহাসিক: যদি কোনো বুদ্ধিমান সত্তা মহাবিশ্বকে নিয়ন্ত্রণ করতই, তাহলে ইতিহাসে অনেক ঘটনা থাকতো, যা থেকে বোঝা যেত: কোনো বুদ্ধিমান সত্তা সেগুলো ঘটিয়েছে, যা কোনোভাবেই প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মে ঘটা সম্ভব নয়। এরকম ঘটনা ঘটতে তো দেখা যাচ্ছে না। তাহলে প্রমাণ কী যে, আল্লাহ বলে সত্যিই কেউ আছে?
Default Ad Content Here
- উত্তরঃ প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মে ঘটা ঘটনার বাইরে কোনো ঘটনা নেই মানুষের চিন্তাশীল মস্তিষ্কে তালা দিতে নাস্তিক মহল একটা শব্দ আবিষ্কার করেছে, তার নাম হল “প্রকৃতি”। প্রথমত আমাদের বুঝতে হবে প্রকৃতি কি জিনিস। আমাদের চারপাশে গাছপালা, পশুপাখি যা আছে তা সবই প্রকৃতি। মানুষ যা করে তাও প্রকৃতি। পিপড়া বাসা বানালে সেটা প্রাকৃতিক আর মানুষ কম্পিউটার বানালে সেটা অপ্রাকৃতিক এ কথা যৌক্তিক নয়। দ্বিতীয়ত প্রকৃতির “স্বাভাবিক” নিয়ম বলে কিছু নেই। কোন কিছুই স্বাভাবিক না, কারন কোন কিছুই হওার কথা ছিল না। আপনি বিজ্ঞান দিয়ে কোন কিছু কিভাবে কাজ করে সেটা ব্যাখ্যা করতে পারলেই সেটা স্বাভাবিক আর তা পেছনে কারো হাত নেই এই কথা ঠিক না। কারন, বিজ্ঞান দিয়ে আমি ব্যাখ্যা করতে পারি ঘড়ি কিভাবে কাজ করে; তার মানে এই না যে ঘড়ির কোন সৃষ্টি করতা নেই। আমি বিজ্ঞান দিয়ে ব্যাখ্যা করতে পারি সুপার কম্পিউটার কিভাবে কাজ করে; তার মানে এই না সুপার কম্পিউটার কেউ বানায় নি। তবে আমাদের প্রাত্যহিক পারসেপশনের বাইরেও অনেক ঘটনা ঘটে যেগুলো সচরাচর ঘটে না। ফিরাউন যখন মুসা ﷺ নবীর দাবি অস্বীকার করলো এবং বনী ইসরাইলকে মুক্ত করে দিতে অস্বীকার জানালো, তখন আল্লাহ ﷻ মিশরে একের পর এক অতিপ্রাকৃত দুর্যোগ পাঠালেন, যা কোনো স্বাভাবিক প্রাকৃতিক ঘটনা ছিল না। কু’রআনের কিছু আয়াতে এই ঘটনাগুলো বর্ণনা করা হয়েছে— আমি ফিরাউনের লোকদের উপর বছরের পর বছর খরা, ফসলহানি দিলাম, যাতে করে তারা নির্দেশ শোনে। … কিন্তু তারা বলল, “তুমি আমাদের উপর জাদু করার জন্য যতই অলৌকিক ঘটনা দেখাও, আমরা তোমাকে বিশ্বাস করব না।” তাই আমি ওদের উপর বন্যা, পঙ্গপাল, উকুন, ব্যাঙ, রক্ত পাঠালাম — একদম পরিষ্কার নিদর্শন। কিন্তু ওরা ছিল এক অহংকারী সম্প্রদায় এবং দুর্নীতিবাজ। [আল-আরাফ ৭:১৩০-১৩৩] ১৯ শতকের শুরুর দিকে মিশরে একটি প্রাচীন ফলক আবিষ্কার হয়, যা হল্যান্ডের মিউজিয়ামে অনুবাদ করার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। এই প্রাচীনফলকের নাম ‘ইপুয়ের-এর ফলক’ যেখানে মিশরের প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলোর ঘটনা বর্ণনা করা আছে। ফলকটি ইপুয়ের নামের একজন প্রাচীন মিশরীয় লিখেছেন, এবং ধারণা করা হয় তিনি এই ঘটনাগুলো নিজের চোখে দেখেছেন। তিনি কী লিখেছেন দেখা যাক— সারাদেশে মহামারি, চারিদিকে রক্ত… পুরো নদীতে রক্ত… সবগুলো শহর ধ্বংস হয়ে গেছে… চারিদিকে চিৎকার, হাহাকার… সব গাছপালা ধ্বংস হয়ে গেছে… কোথাও কোনো ফল, শাকসবজি নেই… কোথাও কোনো আলো নেই… দেখ! এক বিশাল আগুন… [২৩০] এধরনের ঘটনা প্রকৃতির কোনো স্বাভাবিক নিয়মে ঘটে না। থামুদ নামে কু’রআনে এক জাতির কথা বলা আছে, যারা আল-হিজর নামে একটি জায়গায় পাহাড় কেটে বিশাল সব প্রাসাদ, বাড়ি বানিয়েছে। তাদের এই বিশেষ ক্ষমতা অন্য কোনো জাতির দেখা যায়নি। শক্ত পাহাড়ের পাথর কেটে বানানো তাদের বিশাল সব প্রাসাদ, স্তম্ভ, বাড়িঘর আজও অটুট রয়েছে। কিন্তু সেই থামুদ জাতির মানুষরা কোনো কারণে ধ্বংস হয়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। তাদের কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। এরকম প্রযুক্তিতে অগ্রসর, বিত্তশালী, শক্তিশালী জাতি কীভাবে রাতারাতি বিলুপ্ত হয়ে গেল, অথচ তাদের বানানো বাড়িঘরগুলো ঠিকই থাকলো — সেটা আজও একটা বিস্ময়। কু’রআনে বলা আছে সেদিন কী ঘটেছিল— আল-হিজরের বাসিন্দারা আমার রাসুলদের অস্বীকার করেছিল। আমি ওদেরকে আমার নিদর্শন দেখিয়েছিলাম, কিন্তু ওরা মানল না। ওরা পাহাড় কেটে বাড়িঘর বানাত, নিরাপদে বসবাস করত। সকাল বেলা এক প্রচণ্ড আঘাত ওদেরকে শেষ করে দিল। ওরা কতকিছু অর্জন করেছিল, যার কিছুই ওদের কোনো কাজে আসলো না। [আল-হিজর ১৫:৮০-৮৫] এই সব রহস্য প্রমাণ করে যে, পৃথিবীর ইতিহাসে অনেক ঘটনা রয়েছে, যার কোনো স্বাভাবিক প্রাকৃতিক কারণ নেই, যা কোনো প্রচলিত প্রাকৃতিক নিয়মে ব্যাখ্যা করা যায় না। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হলো, যে সব জাতিগুলো এরকম রহস্যময়ভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে, তাদের প্রত্যেকের ধ্বংসাবশেষ ঘাঁটলে দেখা যায় যে, এরা সবাই সম্পদে, প্রাচুর্যে অন্ধ হয়ে নৈতিকভাবে একেবারেই নিচে নেমে গিয়েছিল এবং জঘন্য সব কাজ করত তারা। এদের শহরগুলো ভর্তি মদের পাত্রের ছড়াছড়ি। রাস্তার মোড়ে মোড়ে পতিতালয়। দেওয়ালে দেওয়ালে সমকামিতার ছবি। উদ্ধার করা প্রাচীন লিপিগুলোতে বর্ণনার যোগ্য নয় এমন নোংরা সবঘটনার বর্ণনা। তাদের ধ্বংস হয়ে যাওয়ার ঘটনাগুলো পর্যবেক্ষণ করলে দেখাযায় যে, এই সব অতিপ্রাকৃত ঘটনাগুলো ঘটেছে পরিকল্পিতভাবে। এগুলো কোনো কাকতালীয় ঘটনা নয়। কেউ একজন আছেন, যিনি চরমভাবে দুর্নীতিগ্রস্থ, নৈতিকভাবে একেবারেই নষ্ট হয়ে যাওয়া এই ধরনের জাতিগুলোকে বার বার ধ্বংস করে দেন।