Admin |
২৯২ views |
ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৯ |
নাস্তিকদের প্রশ্নোত্তর
|
২:০৮ পূর্বাহ্ণ
পদার্থবিজ্ঞানী: মহাবিশ্ব সৃষ্টি হয়েছে এক অতি-মহাবিশ্ব থেকে। একে কোনো সৃষ্টিকর্তা বানায় নি। এক অতি-মহাবিশ্ব, যাকে মাল্টিভার্স বলা হয়, সেখানে প্রতিনিয়ত সকল ধরনের সৃষ্টি জগত তৈরি হয়। সকল সম্ভাবনা সেখানে বিদ্যমান। এরকম অসীম সংখ্যক মহাবিশ্বের একটিতে আমরা রয়েছি। আরেকটি মহাবিশ্বে হয়ত আমারই মত একজন রয়েছে, যে আমার থেকে একটু লম্বা। আরেকটিতে আমার থেকে একটু খাটো। মোট কথা যত কিছুই ঘটা সম্ভব, তার সবই ঘটেছে, ঘটছে এবং ঘটবে। এই মহাবিশ্বই একমাত্র মহাবিশ্ব, যাকে কোনো একক সত্তা সৃষ্টি করেছে, এর প্রমাণ কী?
- উত্তরঃ মহাবিশ্ব সৃষ্টি হয়েছে এক অতি-মহাবিশ্ব Multiverse (মাল্টিভার্স)থেকে আজকাল মিডিয়াতে ব্যাপকভাবে নতুন এক ধারণার প্রচারণা শুরু হয়েছে – মাল্টিভার্স থিওরি। বিজ্ঞানীরা দাবি করছে এই মহাবিশ্বের কোনো সৃষ্টিকর্তা নেই। আমাদের মহাবিশ্বটি এক মহা-মহা-মহাবিশ্বের বা মাল্টিভার্স-এর মধ্যে থাকা ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন মহাবিশ্বের মধ্যে একটি। বিজ্ঞানীরা কোনোভাবেই ব্যাখ্যা করতে পারছেন না: কীভাবে আমাদের এই মহাবিশ্বটি এত নিখুঁতভাবে, এত পরিকল্পিতভাবে প্রাণের সৃষ্টির জন্য অত্যন্ত সূক্ষ্ম ভারসাম্য রক্ষা করে তৈরি করা হয়েছে। অভিকর্ষ বল যদি ১০০ কোটি ভাগের এক ভাগ বেশি বা কম হতো, তাহলে কোনো গ্রহ সৃষ্টি হতো না, প্রাণের সৃষ্টির কোনো সম্ভাবনাই থাকতো না। বিগ ব্যাংগের সময় যে শক্তির প্রয়োজন ছিল, সেটা যদি ১০^৬০ ভাগের এক ভাগ এদিক ওদিক হতো, তাহলে অভিকর্ষ বলের সাথে অসামঞ্জস্য এত বেশি হতো যে, এই মহাবিশ্ব সৃষ্টি হয়ে বেশিক্ষণ টিকে থাকতে পারতো না। ১০^৬০ হচ্ছে ১ এর পরে ৬০টি শূন্য বসালে যে বিশাল সংখ্যা হয়, সেটি। বিগ ব্যাংগের মুহূর্তে প্ল্যাঙ্ক সময়ের পর মোট পদার্থের যে ঘনত্ব ছিল, সেটা যদি ১০^৫০ ভাগের এক ভাগও এদিক ওদিক হতো, তাহলে মহাবিশ্ব সৃষ্টি হতো না, যাতে আজকের মতো নক্ষত্র, গ্রহ এবং প্রাণ সৃষ্টি হতো।[১০২] — এরকম শত শত ভারসাম্য কীভাবে কাকতালীয় ভাবে মিলে গেলো? কীভাবে এগুলো সব অত্যন্ত নিখুঁতভাবে নির্ধারণ করা হল, যেন নক্ষত্র, গ্রহ, পানি, ভারী মৌলিক পদার্থ সৃষ্টি হয়ে একদিন প্রাণের সৃষ্টি হয়, যেই প্রাণ বিশেষভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়ে একদিন মানুষের মতো বুদ্ধিমান প্রাণীর জন্ম দিবে? — এর পক্ষে তারা কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারছে না। এতগুলো সূক্ষ্ম ভারসাম্য এক সাথে মিলে যাওয়া যে কোনোভাবেই গাণিতিক সম্ভাবনার মধ্যে পড়ে না —এটা তারা বুঝে গেছে। তারা এর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে এক নতুন থিওরি নিয়ে এসেছে: আমাদের মহাবিশ্ব আসলে ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন মহাবিশ্বের মধ্যে একটি। একেক মহাবিশ্বে পদার্থ বিজ্ঞানের ধ্রুবকগুলোর একেক মান রয়েছে। কিছু মহাবিশ্ব বেশিদিন টিকে থাকতে পারে না, কারণ সেই মহাবিশ্বে পদার্থবিজ্ঞানের ধ্রুবকগুলোর মানগুলোর মধ্যে ভারসাম্য থাকে না। আর কিছু মহাবিশ্বে পদার্থবিজ্ঞানের ধ্রুবকগুলোর মান এমন হয় যে, সেখানে কোনোদিন সূর্যের মতোএকটি তারা এবং পৃথিবীর মতো একটি গ্রহ তৈরি হতে পারে না। যার ফলে সেই সব মহাবিশ্বে কোনো প্রাণ সৃষ্টি হয় না। পদার্থবিজ্ঞানের সুত্রগুলোর যতগুলো সম্ভাব্য সম্ভাবনা হওয়া সম্ভব, সেটা যতই কল্পনাতীত, অবাস্তব একটা ব্যাপার হোক না কেন, যা কিছু হওয়া সম্ভব তার সবকিছুই সেই মাল্টিভারসের ‘ল্যান্ডস্কেপ’-এ কোথাও না কোথাও হয়েছে এবং হয়ে যাচ্ছে। আমরা মানুষেরা, সেই অসীম সংখ্যক সম্ভাবনাগুলোর একটি, যেখানে পদার্থবিজ্ঞানের হাজার হাজার নিয়ম কাকতালীয়ভাবে, কল্পনাতীত সূক্ষ্ম ভারসাম্য রক্ষা করে কোনোভাবে মিলে গেছে এবং যার কারণে আজকে আমরা এই মহাবিশ্বে দাঁড়িয়ে নিজেদেরকে উপলব্ধি করতে পারছি।[১০৩] তাদের দাবিটা হচ্ছে এরকম: ধরুন কোনো এক সমুদ্রের তীরে বালুতে আপনি একটি মোবাইল ফোন পড়ে থাকতে দেখে তাদেরকে জিগ্যেস করলেন, এই মোবাইল ফোনটা নিশ্চয়ই কোনো বুদ্ধিমান সত্ত্বা বানিয়েছে। তারা বলবে, “না, কোটি কোটি বছর ধরে সমুদ্রের পানি বালুতে আছড়িয়ে পড়তে পড়তে এবং ঝড়, বৃষ্টি, বজ্রপাতের ফলে বালুতে রায়ায়নিক বিক্রিয়া হয়ে একসময় এই মোবাইল ফোনটি তৈরি হয়েছে। এটি কোনো বুদ্ধিমান সত্ত্বা বানায়নি, এটি পদার্থবিজ্ঞানের সুত্রগুলোর অসীম সব সম্ভাবনাগুলোর একটি। এরকম কোটি কোটি সমুদ্রের তীর আছে যেগুলোর একটিতে হয়তো শুধুই একটা প্লাস্টিকের বাক্স তৈরি হয়েছে, পুরো মোবাইল ফোন তৈরি হতে পারেনি। কিছু তীর আছে যেখানে হয়তো একটা স্ক্রিন পর্যন্ত তৈরি হয়েছে, কিন্তু কোনো বাটন তৈরি হয়নি। আপনি, আমি আসলে সেই অসীম সব সমুদ্রের তীরগুলোর বিশেষ একটিতে দাঁড়িয়ে আছি, যেখানে পদার্থ বিজ্ঞানের সব সম্ভাবনা কাকতালীয় ভাবে মিলে গেছে, যে কারণে এইতীরে একটি সম্পূর্ণ মোবাইল ফোন সৃষ্টি হয়েছে।” এই হচ্ছেমাল্টিভার্স থিওরি। মাল্টিভার্সথিওরির পক্ষে বিন্দুমাত্র প্রমাণ নেই। কিন্তু এনিয়ে শত শত বই, ডিসকভারি চ্যানেলে শত শত প্রোগ্রাম, হাজার হাজার লেকচার এমন ভাবে দেওয়া হচ্ছে যে, এটা বিগ ব্যাং থিওরির এর মতই একটা ফ্যাক্ট। বিজ্ঞানীদের এক বিশেষ দল, যাদের মধ্যে সবাই নাস্তিক, এবং শুধু নাস্তিকই নয়, এদেরকে বিশেষ ভাবে Militant Atheist বলা হয়, এরা উঠে পড়ে লেগেছে ডারউইনের বিবর্তনবাদের মতো মাল্টিভার্স থিওরিকেও মানুষের মধ্যে গলার জোরে ফ্যাক্ট বলে চালিয়ে দেওয়ার। কারণ একমাত্র মাল্টিভার্স থিওরিই পারে – “মহাবিশ্বের কোনো সৃষ্টিকর্তা নেই” – সেটার পক্ষে কোনো ধরণের ‘বিশ্বাসযোগ্য’ চমকপ্রদ ব্যাখ্যা দিতে, যেটা পড়ে সাধারণ মানুষ, যার মহাকাশ বিজ্ঞান নিয়ে ভালো জ্ঞান নেই, অবাক হয়ে ভাবে, “আরে! এতো দেখি চমৎকার এক ব্যাখ্যা! মহাবিশ্বের দেখি সত্যিই কোনো সৃষ্টিকর্তার দরকার নেই!” একারণেই আল্লাহﷻ আমাদেরকে মু’মিন হবার জন্য প্রথম শর্ত দিয়েছেন – “যারা মানুষের চিন্তার ক্ষমতার বাইরে এমন সব বিষয়ে বিশ্বাস করে।” [আল-বাক্বারাহ: ৩] আমাদেরকে মানতে হবে যে, আমরা কোনোদিন প্রমাণ করতে পারবো না: কীভাবে, কী কারণে এই মহাবিশ্ব সৃষ্টি হয়েছে। আমরা কোনোদিন কোনো রেডিও এন্টেনা দিয়ে জান্নাত, জাহান্নাম খুঁজে পাবো না। আমরা কোনোদিন এক্সরে করে ফেরেশতাদেরকে দেখতে পারবো না। আমরা কোনোদিন পদার্থ বিজ্ঞানের কোনো সুত্র দিয়ে ব্যাখ্যা করতে পারবো না: কীভাবে আমরা মরে, ধ্বংস হয়ে, মহাবিশ্বে ছড়িয়ে যাওয়া আমাদের দেহের অণু পরমাণুগুলো থেকে একদিন আমাদেরকে আবার একই অবস্থায় ফেরত আনা হবে। আমাদেরকে এই সব কিছু বিশ্বাস করতে হবে, কোনোই বৈজ্ঞানিক প্রমাণ ছাড়া, শুধুই কু’রআনের প্রমানের উপর ভিত্তি করে এই শর্তে যে কু’রআন সন্দেহাতীত ভাবে আল্লাহর ﷻ বাণী। যদি কোনো প্রমাণ না থাকার পরেও বিবর্তনবাদ, ডার্ক ম্যাটার, ডার্ক এনার্জি, স্ট্রিং-থিওরিতে ঠিকই বিশ্বাস করতে পারি, তাহলে কু’রআনের বাণীর উপর বিশ্বাস না করার পেছনে কোনো যুক্তি থাকতে পারে না, যেখানে কি না কু’রআন যে মানুষের পক্ষে তৈরি করা সম্ভব না, এর পক্ষে শত শত প্রমাণ আছে। একারণে আমরা যদি অদেখায় বিশ্বাস করতে না পারি, তাহলে আমরা কোনোদিন মু’মিন হতে পারবো না।
Default Ad Content Here