বৃহস্পতিবার, ২৭শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

মানবধর্মই তো শ্রেষ্ঠ ধর্ম, আলাদা ধর্মের কি প্রয়োজন?

বর্তমান সেকুলার পৃথিবীতে ‘মানবধর্ম’ কথাটা বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। সাদা চোখে মানবধর্মের ‘পারষ্পরিক শ্রদ্ধাবোধ’, ‘সহনশীলতা’, ‘সাম্য’ এই উপাদানগুলোর কথা খুব চটকদার মনে হলেও একটু ভালোভাবে চিন্তা করলেই বুঝা যায় এসব আসলে ফাঁকাবুলি ছাড়া কিছুই না।
মানবধর্মের একটা মেজর ড্রব্যাক হচ্ছে এর কোন জেনারেল স্ট্যান্ডার্ড বা রেফারেন্স নেই। যে বিষয়টা একজনের কাছে মানবিক মনে হয় সেটা আরেকজনের কাছে বেশ অমানবিক। জাকির নায়েক ব্যাপারটা খুব সুন্দরভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। আমাদের অনেকের কাছেই কোন মানুষকে ধর্ষণের দায়ে হত্যা করাটা খুব অমানবিক। কিন্তু সেই ধর্ষণটা যদি আমাদের মা, বোন কিংবা স্ত্রীর সাথে করা হয় তবে আমরা সবাই ই চাইব নিষ্ঠুরতম উপায়ে লোকটাকে হত্যা করতে।
আবার কিছু কিছু ব্যাপারে আমরা খুব সহজেই একমত হতে পারি। যেমন: বাবা-মার সাথে ভালো ব্যবহার করা, দুস্থ মানুষকে সাহায্য করা। কিন্তু এই ভাল ব্যবহারটা কিভাবে করব কিংবা দুস্থ মানুষটাকে কিভাবে কিংবা কতটুকু সাহায্য করব তা নিয়ে মানবধর্ম কিছুই বলতে পারে না। কেউ হয়তো বলতে পারে বাবা-মার সাথে ঝগড়া না করাটাই ভালো ব্যবহার আবার দুস্থ মানুষদের কিছু টাকা দেয়া কিংবা চাদর দেয়াই হচ্ছে তাদের সাহায্য করা। আমরা ব্যবহারের ধরণ ও সাহায্যের পরিমাণ নিয়ে কখনোই এক জায়গায় অবস্থান করতে পারব না যতক্ষণ পর্যন্ত না আমরা রিলিজিয়নকে আমাদের রেফারেন্স হিসেবে ধরে না নিব। যতক্ষণ পর্যন্ত না আমরা হ্রদয় দিয়ে ধারণ করব পরম করুণাময়ের বাণী-
“তোমার পালনকর্তা আদেশ করেছেন যে, তাঁকে ছাড়া অন্য কারও ইবাদত করো না এবং পিতা-মাতার সাথে ভালো ব্যবহার কর। তাদের মধ্যে কেউ অথবা উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়; তবে তাদেরকে ‘উহ’ শব্দটিও বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না এবং তাদেরকে শিষ্ঠাচারপূর্ণ কথা বল।”[৭]
যতক্ষণ পর্যন্ত না আমরা সেই মানুষটার আদর্শ আমাদের জীবনে ধারণ করি যিনি সামর্থ্য থাকলে কখনোই কোন মানুষকে ফিরিয়ে দিতেন না।
ধরা যাক, আপনি একজন ব্যক্তির উপকার করলেন আর পরবর্তীতে সেই ব্যক্তিটাই আপনার ক্ষতি করল, মানুষের স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্য হিসেবেই পরবর্তীতে আপনি সেই লোকটার ক্ষতি করতে চাইবেন। এখানে একটা জিনিষই আপনাকে প্রতিশোধ স্পৃহা থেকে দূরে রাখতে পারে, তা হচ্ছে ক্ষমা- যেটা কেবল ধর্মই আপনাকে খুব সুন্দরভাবে শিক্ষা দেয়। ধর্ম আমাদের ভালো কাজের পিছনে একটা প্রেরণা যোগায়। মানবধর্ম যেহেতু মৃত্যুর পরের জীবনটাকেই অস্বীকার করে সেখানে এমন প্রেরণা পাবার সুযোগ নেই। এজন্যই মানবতাবাদী নাস্তিকদের তুলনায় আস্তিকরা চ্যারিটি প্রদানে বেশ এগিয়ে। আর্থার সি ক্লার্কের লেখা থেকে উদ্ধৃত করছি:
“The differences in charity between secular and religious people are dramatic. Religious people are 25 percentage points more likely than secularists to donate money (91 percent to 66 percent) and 23 points more likely to volunteer time (67 percent to 44 percent).
The data shows that if two people — one religious and the other secular — are identical in every other way, the secular person is 23 percentage points less likely to give than the religious person and 26 points less likely to volunteer”[৮]
আবার আমাদের নৈতিকতা স্থান-কালভেদে ধ্রুবক নয়। যে কাজটা আগের যুগের লোকদের কাছে মানবিক ছিল তা আমাদের কাছে অমানবিক। আবার যে কাজটা আমাদের কাছে মানবিক তা হয়তো ভবিষ্যতের মানুষদের নিকট অমানবিক মনে হতে পারে। ঠিক একইভাবে যে কাজটা একজনের কাছে খারাপ সেই একই কাজ আরেকজন মুক্তচিন্তা ও ফ্রীডম অফ উইলের অজুহাতে করতে পারে। এর উদাহারণ পর্ণ মুভি দেখা থেকে শুরু করে ইন্সেস্ট পর্যন্ত দেয়া যেতে পারে। আমাদের অনেকের মনে হয়তো ইন্সেস্টের মত জঘন্য চিন্তাই আসেনি, কিন্তু সভ্য(!) দেশগুলোতে ঢু মারলে পিতা-কন্যা একসাথে সুখী(?) সংসার জীবন করছে এমন উদাহারণ অহরহ দেখা যাবে। এছাড়াও আপনি দেখবেন যে, বিভিন্ন দেশে ধর্ষণের আইনও ভিন্ন। অনেক দেশেই পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে সেক্স করা ১৮ বছর বয়সী নারীর কেস ফাইল করা হয় না; অর্থাৎ, একই বয়সী নারীকে এক দেশে প্রাপ্তবয়স্ক, অন্যদেশে শিশু হিসেবে ধরা হয়![৯] আবার সমকামিতা কয়েকবছর আগেও খারাপ চোখে দেখা হত, আর এখন অনেক দেশে এটা permitted. So we need a unique humanity concept which can be applicable for every era, at least for some decades for all race of humanity.
একটা সত্য গল্প বলি। একবার কিছু সাহাবী লক্ষ্য করলেন উমার(রাঃ) অনবরত হাসছেন আর কাঁদছেন, সাহাবীরা তাকে এই অদ্ভুত আচরণের কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, “আমি জাহেলিয়াতের দিনগুলোর কথা মনে করছি। আমি খেজুর দিয়ে তৈরী মূর্তি নিজের কাছে রাখতাম। একদিন আমার খুব ক্ষুধা লাগল আর আমি মূর্তি থেকে খেজুর খেয়ে নিলাম (আমি কি বোকাটাই না ছিলাম যে খেজুরের তৈরি মূর্তির উপাসনা করতাম!)। তারপর আমার কান্না পেল আর আমি মনে করলাম একদিন আমি গর্ত খুঁড়ছিলাম আর আমার কন্যাকে (জীবন্ত) কবর দিচ্ছিলাম, যখন আমি তাকে কবর দিচ্ছিলাম, হঠাৎ সে তার হাত উঠিয়ে আমার দাঁড়ি থেকে ময়লা পরিষ্কার করে দিল।”[১০] একজন মুসলিম হিসেবে এই ঘটনাগুলো উমার(রাঃ) কে হাসিয়েছিল আবার কাঁদিয়েছিল। ইসলাম গ্রহণের পূর্বে খেজুরের তৈরি মূর্তিকে সিজদা দেয়া কিংবা কন্যা শিশুকে জীবন্ত কবর দেয়া তাদের মানবধর্মে একদম স্বাভাবিক ব্যাপার ছিল।
“যখন সমুদ্রকে উত্তাল করে তোলা হবে,যখন আত্মাসমূহকে যুগল করা হবে, যখন জীবন্ত প্রোথিত কন্যাকে জিজ্ঞেস করা হবে, কি অপরাধে তাকে হত্যা করা হল?[১১]
তথ্যসূত্র:
[১] সূরা বাকারা ২:২৬
[২] সূরা বাকারা ২:১১৮
[৩] আশ্‌-শূরা ৪২:৫১
[৪] Paul Davies –এর বই God and The New Physics
[৫] সূরা মায়েদা ৫:১১৫
[৬] সূরা ইব্রাহিম ১৪:১৮
[৭] সূরা বনী ইসরাইল ১৭:২৩
[১০] Understanding the Quran- Anwar Al Awlaki
[১১] সূরা তাক্‌ভীর ৮১:৬-৯

Archives

December 2024
S S M T W T F
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031