মঙ্গলবার, ২৩শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৫ই রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

আল্লাহ থাকতে এতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ কেন? এতো মানুষ মারা যায় কেন?”

  • এক বিংশ শতাব্দীতে গত দশ বছরের গড় হিসাব করলে প্রতি বছর গড়ে ৭০,০০০ মানুষ মারা যায় প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে। কিন্তু মানুষের দোষের কারণে কত মানুষ মারা যায় জানেন?
  • শুধু এইডসে গড়ে বছরে ১৮ লক্ষ মারা যায় এবং ২০১০ সালে সাড়া পৃথিবীতে ৩.৪ কোটি এইডস আক্রান্ত মানুষ পাওয়া গেছে।
  • ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক কঙ্গো যুদ্ধে ৩৩ লক্ষ মানুষ মারা গেছে।
  • রাস্তায় দুর্ঘটনায় বছরে ১২ লক্ষ মানুষ মারা যায়।
  • এরকম শত শত পরিসংখ্যান রয়েছে যা প্রমাণ করে পৃথিবীতে বেশিরভাগ মানুষ মারা যায় মানুষেরই ভুলের কারণে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে খুব কমই মারা যায়।
  • এছাড়াও প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলোর মধ্যে অনেকগুলোই হয় মানুষের কারণে। যেমন নদীতে অপরিকল্পিত বাধ দেবার ফলে বিভিন্ন অঞ্চলে খরা সৃষ্টি হয়। তারপর খরা থেকে শুরু হয় দুর্ভিক্ষ, মহামারি। নিয়ন্ত্রণহীন গাছ উজার করার ফলে  হয় অনাবৃষ্টি এবং মাটির পানি শোষণের ভারসাম্য নষ্টহয়ে হয় বন্যা, নদী ভাঙ্গন। তারপর বন্যা থেকে মহামারি, দুরভিক্ষ। ফ্যাক্টরির বর্জ্য নদীতে ফেলে নদী দূষণের কারণে হয় মহামারি, খাবারের অভাব, দুর্ভিক্ষ, এবং ব্যাপক পরিবেশ দূষণ, যার কারণে মানুষের নানা ধরণের জটিল অসুখ হয়। কোটি কোটি টন মানুষের বর্জ্য নদী থেকে সমুদ্রে ফেলে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট, মহামারি, ক্যানসার সৃষ্টি ইত্যাদি।
  • আল্লাহ কখনও কোন জাতির উপরে দেয়া তাঁর অনুগ্রহকে বদলান না, যতক্ষণ না সে জাতি নিজেদেরকে বদলিয়ে না ফেলে। (৮:৫৩)
  • আমরা কত ভাবে প্রকৃতির ক্ষতি করি এবং প্রকৃতি কত ভাবে সেই ক্ষতি গুলোকে সংশোধন করার চেষ্টা করে তা দেখতে হলে এই অসাধারণডকুমেন্টারিটি দেখুন। আপনার পৃথিবী সম্পর্কে শ্রদ্ধা হাজার গুণে বেড়ে যাবে যখন আপনি দেখবেন পৃথিবীতে কত হাজার ধরণের স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা আল্লাহ তাঁর অসীম জ্ঞান দিয়ে তৈরি করে রেখেছেন মানুষের অবাধ দূষণ পরিস্কার করার জন্য। কিন্তু তারপরেও মানুষ সীমালঙ্ঘন করে এবং তার ফলাফল ভোগ করে।
  • মানুষের কোনই হাত নেই এমন কিছু প্রাকৃতিক দুর্যোগ হল – সুনামি, ভুমিকম্প, আগ্নেয়গিরি এবংউল্কাপাত। এখন সুনামি, আগ্নেয়গিরি এবং ভুমিকম্প প্রবণ এলাকা গুলো মানুষ ভালো করেই জানে। তারাসেখান থেকে সরে গেলেই পারে। কিন্তু তারা সেটা করে না। বাপ-দাদার ভিটামাটি আকরে ধরে থাকার এক অন্ধ মোহ আছে তাদের মধ্যে। তারা ভূমিকম্পে, সুনামিতে, যুদ্ধে মারা যাবে, কিন্তু তারপরেও সেখান থেকে তারা সরে যাবে না। তারা অমুসলিম, অত্যাচারী শাসকের অত্যাচারে জীবন পার করবে, কিন্তু আল্লাহর দেওয়া এত বড় পৃথিবীতে অন্য কোথাও গিয়ে ভালভাবে বেঁচে থাকার চেষ্টা করবে না। এদেরজন্য আল্লাহ বলেছেনঃ
  • যখন ফেরেস্তারা ঐসব লোকদের আত্মাকে নিয়ে যাবে যারা নিজেদের উপরে অত্যাচার করছিল এবং জিজ্ঞেস করবে, “তোমরা কি অবস্থায় ছিলে?” তারা উত্তর দিবে, “আমরা দুর্বল/অত্যাচারিত/অসহায় অবস্থায় ছিলাম।” ফেরেস্তারা বলবে, “আল্লাহর পৃথিবী কি যথেষ্ট বড় ছিল না, তোমাদের অন্যকোথাও চলে যাবার জন্য?” ঐসব লোকদের আশ্রয় হবে জাহান্নাম, এক জঘন্য গন্তব্য।  কিন্তু সেসব সত্যিকারের অসহায় পুরুষ, মহিলা এবং বাচ্চারা ছাড়া ,যাদের নিজেদের কোন সামর্থ্য ছিলনা এবং যাদের অন্য কোন পথও ছিল না। (৪:৯৭-৯৮)
  • তবে শুধু অসহায় মানুষদেরই যে সবসময় দোষ তা নয়। মানুষ তার স্বার্থপর রাজনৈতিক নিয়ম দিয়ে আল্লাহর দেওয়া পৃথিবীকে ‘দেশ’ নামের ১৯৬টা ভাগে ভাগ করে এবং ‘ভিসা’ নামের একটি ব্যবস্থা করে এমন ব্যবস্থা করে রেখেছে যে গরিব অসহায় মানুষগুলোকে ভুমিকম্প, সুনামিপ্রবণ এলাকাগুলোতে অসহায় ভাবে বন্দি থাকতে হবেই। আল্লাহর দেওয়া এই বিশাল পৃথিবীতে এতোখালি জায়গা আছে, সেখানে গিয়ে তারা শান্তিতে বেঁচে থাকতে পারবে না। এর জন্য আল্লাহকে দোষ দিয়ে তো কোন লাভ নেই। মানুষ কত স্বার্থপর হতে পারেতা কিছুদিন আগে বার্মাতেই দেখা গেছে। হাজার হাজার গরীব মুসলমান গণহত্যার হাত থেকে বাঁচার জন্য, দিনের পর দিন না খেয়ে সমুদ্রে ভেসে বাংলাদেশে আসলো একটু আশ্রয় পাবার জন্য, আর বাংলাদেশের মানুষ তাদেরকে ভিসা না থাকার জন্য ফেরত পাঠিয়ে দিল। এধরণের চরম অমানুষিক তারপরেও বাংলাদেশের অর্ধেক মানুষ যে পরের দিনই ভুমিকম্পে ধসে মারা যায়নি তার কারণ আল্লাহ নিরন্তর করুণাময়, চরম ধৈর্যশীল।
  • অনেকে প্রশ্ন করেন, আল্লাহ কেন পৃথিবীকে এমনভাবে তৈরি করলো না যাতে করে পৃথিবীতে কখনও বন্যা, খরা, মহামারি, ভুমিকম্প না হয়? আল্লাহর তো সব ক্ষমতাই আছে। তিনি কি ইচ্ছা করলেই এমন একটা পৃথিবী তৈরি করতেপারতেন না যেখানে কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয় না?
  • সহজ উত্তর – হ্যা, তিনি পারেন এবং তিনি বেহেশত তৈরি করেছেন যেখানে কোন বন্যা, খরা, মহামারি, ভুমিকম্প হয় না। পৃথিবী তৈরির উদ্দেশ্য ছিল না পৃথিবীকে আরেকটা বেহেশত বানানোর।
  • আর যারা আরও বিস্তারিত জানতে চান কেন পৃথিবীতে প্রাণের সৃষ্টির জন্য ভুমিকম্প প্রয়োজন, কেন খরা না থাকলে প্রাণ বিলুপ্ত হয়ে যেত – তারা এই আর্টিকেলটি পড়ে দেখুন। প্রাকৃতিক দুর্যোগ হচ্ছে পৃথিবীর নিজেকে দূষণ মুক্ত করে প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করার একটি সহজাত প্রক্রিয়া। মানুষ ব্যাপক দূষণ করার পরেও পৃথিবীকে বসবাস যোগ্য রাখার জন্য আল্লাহ তাঁর অসীম জ্ঞান দিয়ে হাজার হাজার স্বয়ংক্রিয় প্রতিরোধ ব্যবস্থা তৈরি করে রেখেছেন। প্রাকৃতিক দুর্যোগ তার মধ্যেএকটি।
  • আল্লাহর বিরুদ্ধে আরেকটি সাধারণ অভিযোগ হল আল্লাহ কেন পৃথিবীতে এত মানুষ পাঠাল, কিন্তু তাদের জন্য যথেষ্ট খাবার, প্রাকৃতিক সম্পদ, জায়গা দিয়ে পাঠাল না। এটি একটি বিরাট ভুল ধারণা যে পৃথিবীতে এত যে গরিব মানুষ তার মূল কারণ পৃথিবীতে সম্পদের অভাব। পৃথিবীত মাত্র ১% মানুষ পুরো পৃথিবীর ৪৮% সম্পদ দখল করে রেখেছে। পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী ১০% মানুষ পুরো পৃথিবীর ৮৫% সম্পদের অধিকারী! মোট জনসংখ্যার অর্ধেক, যা কিনা প্রায় ৩.৫ বিলিয়ন মানুষ, আজকে পৃথিবীর মোট সম্পদের মাত্র ১% এর উপর বেঁচে আছে!
  • শুধু তাই না, মাত্র ২% ধনী মানুষগুলো পুরো পৃথিবীর অর্ধেকের বেশি বাড়ি এবং জমির মালিক। বাকি অর্ধেক জমি এবং বাড়ির মধ্যে বাকি ৯৮% জনসংখ্যা বসবাস করছে। মানুষের মধ্যে আজকে যে এই চরম বৈষম্য তার কারণ ক্যাপিটালিস্ট অর্থনীতি, লোভ এবং দুর্নীতি। সুদ আরেকটি বড় কারণ যা এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে করে বড় লোকরা বসে বসে আরও বড় লোক হয়, আর মধ্যবিত্ত এবং গরিবরা অমানুষিক খাটার পরেও দিনে দিনে আরও গরিব হতে থাকে।
  • সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার হল, পুরো পৃথিবীর সব মানুষকে, পুরো ৬ বিলিয়ন মানুষের প্রত্যেকে একটি বাসা এবং সামনে একটি ছোট বাগান দিলেও পৃথিবীর সব মানুষকে যুক্তরাজ্যের এক টেক্সাস অঙ্গরাজ্যেই জায়গা দেওয়া যাবে। আল্লাহ আমাদেরকে এক বিরাট পৃথিবী দিয়েছেন, কিন্তু মাত্র২% লোভী মানুষের কারণে আজকে ১.৬ বিলিয়ন মানুষ দিনে একবেলাও খেতে পারে না।
  • আল্লাহ কখনই মানব জাতির কোন ক্ষতি করেন না, বরং মানুষরাই মানুষের ক্ষতি করে। (১০:৪৪)
  • আল্লাহ মানুষকে যথেষ্ট সময় দেন নিজেদেরকে শোধরানোর জন্য। তারপরেও যখন মানুষ শোধরায় না, তখন বিরাট কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয়, বিপুল পরিমাণের সম্পত্তির ক্ষতি হয় যা ধনীদের কুক্ষিগত থাকে, প্রচুর অসহায় মানুষ মারা যায়, যাদের জীবনটা ইতিমধ্যেই পশুর চেয়েও অধম ছিল। তারপর যে মানুষগুলো বেঁচে থাকে, তারা আবার নতুন করে সভ্যতার শুরু করে। এরকম আগে অনেকবার হয়েছে এবং অদূর ভবিষ্যতেও হবার সম্ভাবনা আছে, হয়তো এই বছরই সেটা হতে পারে।

Archives

October 2024
S S M T W T F
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031