মঙ্গলবার, ১৮ই আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৮ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সত্যিই যদি আল্লাহ থাকে তাহলে পৃথিবীতে এতো দুঃখ, কষ্ট কেন?

  • আপনার যদি এই ধারণা থাকে যে – সত্যিই যদি কোন ‘পরম করুণাময়’ সৃষ্টিকর্তা থাকতো, তাহলে পৃথিবীতে এত দুঃখ, কষ্ট, যুদ্ধ, অভাব, অসুখ থাকতো না – তার মানে এই না যে কোন পরম করুণাময় সৃষ্টিকর্তা নেই। এর মানে এটাই যে আল্লাহ কি উদ্দেশে পৃথিবী তৈরি করেছেন, তা আপনি বুঝতে পারেন নি। পৃথিবীতে কোন সমস্যা থাকার মানে এই না যে কোন পরম করুণাময় সৃষ্টিকর্তানেই বরং এটাই প্রমাণ হয় যে আপনি সৃষ্টিকর্তার সংজ্ঞা সম্পর্কে নিজেনিজেই কিছু একটা ধারণা করে নিয়েছেন, যা সঠিক না। একটা পিঁপড়া যদি মানুষকে চ্যালেঞ্জ করে – “তোমাদের না এতবুদ্ধি? তাহলে তোমরা মাটির উপরে বাড়ি বানাও কেন? আমাদের মত মাটির নিচে থাকলেই তো পারো?” এখানে পিঁপড়া ধরে নিচ্ছে বুদ্ধিমান হলেই মাটির নিচে থাকতে হবে, যা হাস্যকর। ঠিক একই ভাবে এটা হাস্যকর যে মানুষ সৃষ্টিকর্তার এক সংজ্ঞা নিজে নিজে বানিয়ে, সেই সংজ্ঞা ব্যবহার করে নিজেরাই সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বকে অস্বীকার করে।
  • দ্বিতীয়ত, আপনাকে কে শেখাল করুণা কি? পৃথিবীতে যদি কোন সমস্যা না থাকতো, কোন অন্যায় না হত, কোন খারাপ কিছু না থাকতো, তাহলে আপনিবুঝতেন কি করে ‘খারাপ’ কি এবং তখন ‘ভালো’ বলতেই বা কি বোঝাতো? করুণা করার প্রশ্ন তখনই আসে যখন কোন মন্দ ঘটনা ঘটে। কোন মন্দ না থাকলে তো করুণার অস্তিত্ব থাকতো না। বরং আপনার মনে করুণার ধারনাটি যে আছে সেটাই তো প্রমাণ করে যে কেউ একজন আছে যে আপনাকে করুণার ধারনাটি দিয়েছে! না হলে এই ধারণাটি আপনার মনে আসলো কিভাবে? এটা তো ক্ষুধারমত কোন শারীরবৃত্তীয় ধারণা না যে আপনি বিবর্তনের মাধ্যমে বানর থেকে মানুষ হবার সময় এই ধারণাটি পেয়েছেন!
  • তৃতীয়ত, আল্লাহ পরম করুণাময় হলেই যে তিনি কাউকে কোন অন্যায় করতে দিবেন না, তা আপনাকে কে বলেছে? বাবা-মা তাদের বাচ্চাদেরকে অত্যন্ত ভালবাসে, কিন্তু তাই বলে তারা নিশ্চয়ই তাদের বাচ্চাদের চিন্তার স্বাধীনতা কেড়ে নেয় না এবং প্রত্যেকটা কাজে বাধা দেয় না। বাচ্চারা অন্যায় করে, তারপর তার জন্য শাস্তি পায়। বাবা-মা সব সময় চেষ্টা করে বাচ্চাদেরকে যতটুকু সম্ভব ভুল না করতে দেওয়ার, অন্যায় থেকে দূরে থাকার জন্য উপদেশ দেবার। আল্লাহও সেটাই করেন আমাদের সাথে।
  • চতুর্থত, আপনি ধরে নিচ্ছেন, পৃথিবীতে যাবতীয় দুঃখ কষ্টের জন্য শুধু আল্লাহ দায়ী। এখানে মানুষের কোন হাত নেই। মানুষের হাত থাকলেও কেন আল্লাহ এমন ব্যবস্থা করলো না যার জন্য মানুষ যেন কখনও অন্য মানুষকে কষ্ট দিতে না পারে। আমরা অনেক সময় ঠিকভাবে সময় নিয়ে চিন্তা করে দেখি না আমরা আল্লাহকে কি নিয়ে দোষ দেই। যেমন আপনি হয়তো আফ্রিকার গরিব মানুষদের কষ্ট দেখে ভাবছেন কেন আল্লাহ তাদেরকে এত কষ্ট দেয়? আল্লাহ আফ্রিকার দেশগুলোকে অনেক প্রাকৃতিক সম্পদ দিয়ে পাঠিয়েছিলেন। তাদের তেল ছিল, হীরা ছিল, সোনা ছিল। কিন্তু কোন লাভ হয়নি। তাদের ব্যবসায়ী সরকার নিজেদের পকেটে টাকা ঢোকাবার জন্য পশ্চিমা দেশের কোম্পানিগুলোর সাথে চুক্তি করে সব তেল, গ্যাস, হীরা, সোনা পশ্চিমা দেশে পাচার করে দিয়েছে। যার ফলে নিজের দেশের অর্থনীতি ধ্বংস হয়ে দেশের মানুষগুলো চরম গরিব হয়ে না খেয়ে মারা যাচ্ছে। আফ্রিকার গরিব দেশগুলোর সরকারগুলো যদি পররাষ্ট্রনীতিতে স্বচ্ছ এবং দক্ষ হত, তারা নিজেদের কমিশনের কথা চিন্তা না করে দেশের মানুষের জন্য ভাবতো, প্রাকৃতিক সম্পদগুলোকে গোপন রাখত, যতক্ষণ না তারা নিজেদের দেশে দক্ষ শ্রমিক তৈরি করে সেই প্রাকৃতিক সম্পদগুলো নিজেরাই ভোগ করতে না পারছে, তাহলে আজকে তাদের এই অবস্থা হত না। আল্লাহ সেই দেশগুলোকে বিপুল পরিমাণ প্রাকৃতিক সম্পদ দিয়েছিলেন, যে রকম কিনা তিনি মালয়েশিয়াকে দিয়েছেন। কিন্তু মালয়েশিয়া তাদের সম্পদকে নিজের দেশেরেখে নিজেরাই ভোগ করে বিরাট বড় লোক হয়ে গেছে। অন্যদিকে আফ্রিকার দেশগুলো অল্প কমিশনের বিনিময়ে বিদেশি কোম্পানিগুলোকে সেই প্রাকৃতিক সম্পদ নিয়ে যাবার সুযোগ করে দিয়ে ফকির হয়ে গেছে।
  • আল্লাহ কখনও কোন জাতির উপরে দেয়া তাঁর অনুগ্রহকে বদলান না, যতক্ষণ না সে জাতি নিজেদেরকে বদলিয়ে না ফেলে। (৮:৫৩)
  • এখন আপনি দাবি করবেন, “আল্লাহ তাহলে তাদেরকে এমন সরকার হতে দিল কেন? কেন সেই সরকারের সদস্যগুলোর মাথায় বাজ পড়লো না, যখন তারা বিদেশি কোম্পানিগুলোর সাথে চুক্তি করে নিজের দেশকে বিক্রি করে দিচ্ছিল? কেন  বিদেশি দেশগুলোকে আল্লাহ  টর্নেডো, ভুমিকম্প, আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত দিয়ে আটকিয়ে রাখল না, যাতে করে তারা আফ্রিকাতে গিয়ে সম্পদগুলো চুরি করতে না পারে?” সমস্যা হচ্ছে আপনি চাচ্ছেন পৃথিবীর মানুষ প্রতিনিয়ত অন্যায় করে যাবে, আর আল্লাহ অলৌকিক ভাবে প্রতিনিয়ত মানুষকে অন্যায় করা থেকে আটকিয়ে রাখবেন। যদি আল্লাহ তাই করতেন তাহলে এই পৃথিবী তৈরি করে মানুষকে পাঠিয়ে পরীক্ষা নেবারকোন দরকার ছিল না, যদি তাঁর উদ্দেশই থাকতো মানুষকে যেভাবেই হোক অন্যায় করা থেকে আটকিয়ে রাখার। মানুষ অন্যায় করবে, তার জন্য শাস্তি পাবে। মানুষের অন্যায়ের কারণে যারা ভুক্তভুগি, তাদের সাথে আল্লাহ যথার্থ ন্যায় বিচার করবেন এবং তাদের কষ্টের জন্য যথাযথ প্রতিদান দিবেন। মনে রাখবেন, আল্লাহ হচ্ছেন ‘পরম ন্যায় বিচারক’ – তিনি সামান্যও অন্যায় করেন না। সুতরাং মানুষের কষ্ট দেখে আল্লাহর উপর ভরসা হারিয়ে না ফেলে আল্লাহর গুণগুলো নিয়ে ভালভাবে চিন্তা করুন। আপনার মনে আল্লাহর সম্পর্কে যত ধরণের সংশয়, দ্বিধা, সন্দেহ আছে, তা চলে যাবে। কু’রআন নিজে মনোযোগ দিয়ে বুঝে পড়লেই এধরনের সংশয়ের সমাধান পেয়ে যাবেন। যখনি মনে কোন সন্দেহ জাগবে, সেই সন্দেহের উত্তর খোঁজার জন্য কু’রআন পড়া শুরু করবেন। দেখবেন আল্লাহ আপনার সব প্রশ্নের উত্তর দিয়ে রেখেছেন। সবসময় মনে রাখবেনঃ
  • আল্লাহ কখনই মানব জাতির কোন ক্ষতি করেন না, বরং মানুষরাই মানুষের ক্ষতি করে। (১০:৪৪)
  • কিছুদিন আগে আমাকে একজন জিজ্ঞেস করেছিলেন, “আল্লাহ কেন গরিব মানুষগুলোকে মান্না এবং সালওয়া পাঠায় না, যে রকম কিনা ওই বদ ইহুদিগুলোকে দিয়েছিল।” এ ধরণের অলৌকিক ঘটনা ঘটলে তার ফলাফল কি ভয়াবহ হবে চিন্তা করে দেখুন। ধরুন বসনিয়াতে নির্যাতিত মুসলিমদের উপর একদিন হঠাৎ করে আকাশ থেকে মান্না এবং সালওয়া আসা শুরু হল। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সেই খবর ইন্টারনেটএ ছড়িয়ে যাবে এবং বিবিসি, সিএনএন, ন্যাশনাল জিওগ্রাফি, ডিসকভারি চ্যানেল থেকেশত শত হেলিকপ্টারে করে হাজার হাজার সাংবাদিক গিয়ে সেখানে হাজির হবে। পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষ সারাদিন বসে টিভিতে দেখতে থাকবে এই অসম্ভব ঘটনা। সাড়া পৃথিবী থেকে লক্ষ লক্ষ মানুষ এই অলৌকিক ঘটনা নিজের চোখে দেখার জন্য প্লেনে করে বসনিয়াতে যাবার জন্য বিরাট লাইন দিয়ে দিবে। বসনিয়ার আসে পাশের দেশগুলো থেকে লক্ষ লক্ষ গরিব মানুষ গরু, ঘোড়া, গাধায় করে রওনা দিবে বসনিয়ার উদ্দেশে এই বিনামুল্যে পাওয়া খাবারে ভাগ দেবার জন্য। কয়েক দিনের মধ্যে পৃথিবীর একটা বড় জনগোষ্ঠী বসনিয়াতে গিজ গিজ করতে থাকবে। বসনিয়ার বাড়িঘর, রাস্তাঘাটে কোন জায়গা পাওয়া যাবে না। শহরের পানি, খাদ্য, পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থা নষ্ট হয়ে যাবে। খ্রিস্টান, মুসলিম, ইহুদি আলেমদের মধ্যে বিরাট ঝগড়া লেগে যাবেযে এই অলৌকিক ঘটনার জন্য কে দায়ী – আল্লাহ, নাকি যীশু, নাকি ইহুদিদের খোদা এল্লাহি। কয়েকদিনের মধ্যে পশ্চিমা দেশের বড় বড় কোম্পানিগুলো তাদের আর্মিকে হাতিয়ে, বসনিয়াকে ক্যান্টনমেন্ট বানিয়ে কাটা তারের বেড়া দিয়ে সবাইকে বের করে দিবে, মান্না এবং সালওয়া নিয়ে গবেষণা এবং ব্যবসা করার জন্য।
  • আল্লাহ জানেন এ ধরণের কোন অলৌকিক ঘটনা ঘটালে মানব জাতির লাভের থেকে ক্ষতিহবে। এ কারণেই তিনি তা করেন নাঃ
  • অলৌকিক নিদর্শন পাঠাতে আমার কোন বাঁধা নেই, কিন্তু আগের প্রজন্মগুলো সেগুলো অমান্য/অস্বীকার  করেছে। আমি থামুদের লোকদেরকে পরিস্কার নিদর্শন হিসেবে এক উটদিয়েছিলাম। কিন্তু তারপরেও তারা সেটার সাথে অন্যায় করেছিল। আমি অলৌকিক নিদর্শন পাঠাই মানুষকে শুধুমাত্র সাবধান করতে। (১৭:৫৯)

Archives

October 2023
S S M T W T F
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031