মঙ্গলবার, ৫ই কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২৯শে রবিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

তামিলনাড়ুতে ৩ হাজার মানুষ ৫ জানুয়ারি ইসলাম গ্রহণ করবেন


সম্প্রতি ‘তামিল পুলিগাল’ নামে একটি সংগঠনের পক্ষ থেকে এ ঘোষণা দেয়া হয়। মর্মান্তিক প্রাচীর ধসে নিহত ১৭ দলিতের বিচার চেয়ে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছে সংগঠনটি। বিচার না পেয়ে তারা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর খবরে বলা হয়েছে।

খবরে বলা হয়, ডিসেম্বরের শুরুর দিকে তামিলনাড়ুর কোয়েম্বাটোর জেলার মেট্টুপাল্যাম এলাকায় মর্মান্তিক প্রাচীর ধসের ঘটনা ঘটে। অতিবৃষ্টিতে ২০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ২ ফুট প্রস্থের একটি প্রাচীর ধসে যায়। এ ঘটনায় ১১ নারী ও ৩ শিশুসহ ১৭ জন নিহত হন।

Default Ad Content Here

স্থানীয়দের অভিযোগ, দলিত সম্প্রদায়ের কেউ যাতে তার জমিতে না যেতে পারে, সেজন্য ‘বৈষম্যের’ এই প্রাচীর নির্মাণ করেন স্থানীয় এক প্রভাবশালী ব্যক্তি।

অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগ এনে পরে ওই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০৪এ ধারায় অভিযোগ আনা হয়। পরে জামিনে মুক্তি পান তিনি।

এ ঘটনায় ক্ষোভে ফেটে পড়েন দলিত সম্প্রদায়ের বাসিন্দারা। সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে তারা মিছিল বের করেন। সেই মিছিল থেকে তামিল পুলিগাল সংগঠনের সভাপতিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরপর ওই ব্যক্তি কারাগারেই রয়েছেন। এ ঘটনা চরম রেখাপাত করেছে দলিত সম্প্রদায়কে।

দলিত সম্প্রদায়ের অভিযোগ, প্রাচীর নির্মাণের সময়ই তারা এর বিরোধিতা করেছিলেন। তারা আশঙ্কা করছিলেন যে, এতে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। কারণ, এই দেয়ালের স্থায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন ছিল। কিন্তু প্রশাসন তাদের কথায় কোনো কর্ণপাত করেনি। অতীতে বিভিন্ন অভিযোগ করেও তারা কোনো প্রতিকার পাননি।

তামিলনাড়ুর দলিত সম্প্রদায়ের অধিকার নিয়ে কাজ করা তালিম পুলিগাল কাচির (টিপিকে) সাধারণ সম্পাদক এম ইলাভেনিল সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা দশকের পর দশক ধরে বৈষম্যের শিকার। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, অনেক হয়েছে আর নয়। আমরা এবার ধর্ম পরিবর্তন করব। প্রাচীর ধস সেই সুযোগ করে দিয়েছে। আমরা এখন বলতে পারব, আমরা কেন এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

‘একটি ধর্ম যদি আমাদের জীবনের মূল্যই না দিতে পারল, তাহলে আমরা কেন নিজেদের শুধু শুধু বিসর্জন দিয়ে যাব’-প্রশ্ন দলিত সম্প্রদায়ের এই নেতার।

টিপিকের সাধারণ সম্পাদক ইলাভেনিল আরও বলেন, ‘যে ব্যক্তি এই মর্মান্তিক ঘটনার জন্য দায়ী তাকে জামিনে মুক্তি দিয়ে দেয়া হলো। কিন্তু সংগঠনের সভাপতি নাগাই তিরুভল্লুয়ান গণতান্ত্রিক উপায়ে ন্যায়বিচার চাইতে গেলে তাকে আটক করা হয়।’

জানা গেছে, বর্ণহিন্দুদের দ্বারা নিপীড়নে অতিষ্ঠ সেখানকার স্থানীয় দলিতরা। ইলাভেনিল বলেন, ‘নিপীড়ন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, আমাদেরকে কূপ থেকে পানি খেতে দেয় না। মন্দিরের ধারেকাছে যেতে দেয় না। রাস্তায় ধরে মারধর করে আবার মামলাও দেয়। আমাদেরকে বলা হয়েছে, রাস্তায় যেন মোবাইল ফোনে কথা না বলি। কী ধরনের অমানবিক আচরণ এগুলো?’

তালিমনাড়ুর একটি জেলা সালেম। এই জেলার বাসিন্দা রনজিত। টিপিকের এই সদস্য বলেন, ‘ধাপে ধাপে আমাদের তিন হাজার সদস্য ইসলাম গ্রহণ করবেন। ৫ জানুয়ারি প্রথমদিন ২০০ জন ধর্ম পরিবর্তন করেবেন। পরবর্তীতে এ প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে। আমাদের প্রায় তিন হাজার সদস্য মুসলমান হতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।’

প্রথমেই মুসলমান হবার ইচ্ছা পোষণ করেছেন সুরেশ কুমার। এ বিষয়ে তার বক্তব্য, “আমরা আশা করছি, ‘দলিত দাগটা’ একবার দূর হলেই সবধরনের বৈষম্য কমে যাবে। তাই প্রথমে আমিই মুসলমান হবো। তারপর আমার পরিবার।”

সূত্র: দ্য প্রিন্ট, ইন্ডিয়া টুডে, টাইমস নাউ নিউজ

Archives

October 2025
S S M T W T F
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031