শুক্রবার, ২১শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৪ঠা জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি
ইতিহাস। মানব রচিত এক উপাখ্যান। পূর্বের ঘটিতব্য ঘটনা জীবন্ত হয় যে ক্যানভাসে। এরই নাম ইতিবৃত্ত বা ইতিহাস। লেখকের মনমত যেখানে পাল্টে যায় চরিত্র। ইনসাফী কলমে যেমন উঠে আসে সত্য ও নিরেট চিত্র। তেমনি স্বার্থান্বেষীর কলমের খোঁচায় চিত্রিত হয় ভিন্ন গল্প। রচয়িতার ভাবনা ও আবেগ পরিস্ফুটিত হয় ইতিহাসের ছত্রে ছত্রে। সত্যান্বেষী নীতিবান ঐতিহাসিকের কলমে তাই যেমন ফুটে উঠেছে সত্য ইতিহাস। তেমনি প্রান্তিক ইতিহাসবেত্তার সত্য-মিথ্যার মিশ্রণ ভজঘটে তৈরী হয়েছে ধুম্রজাল। কলংকিত হয়েছে ইতিহাস শাস্ত্র।
ধুম্রজালটা এমনি ধোঁয়াশা সৃষ্টি করে যে, কখনো সখনো পরবর্তী সত্যানুসারীকেও করে দেয় বিভ্রান্ত। ইতিহাসের অন্ধ গলিতে খেই হারিয়ে ফেলেন অনেক জ্ঞানী বুদ্ধিজীবীও।
শিয়া সম্প্রদায়। ইতিহাস বিকৃতির এক নিপূণ কারিগর। জাল ও বানোয়াট কথাগুলো খানিক বাস্তবতার মিশেলে এমনি ধুম্রতা তৈরী করতে পারে যে, পরবর্তী অনেক পণ্ডিতও আটকা পড়েছেন শিয়াইয়্যাতের মিথ্যার সেই জালে। কাল থেকে কালান্তর সেই মিথ্যা বিস্তৃতি লাভ করতে থাকে। বসে যায় অনেকের মন ও মগজে।
যার বাস্তব নমুনা মাওলানা মওদুদী সাহেবের লিখিত “খিলাফত ও রাজতন্ত্র” বইটি। হয়তো তার নিয়ত সহীহ ছিল। কিন্তু তিনি ফেঁসে গেছেন শিয়াদের মিথ্যা ইতিহাসের ঘূর্ণাবর্তে। হাজ্জাজী কলমে সাহাবীদের চরিত্রে বসিয়েছেন অপবাদের থাবা। আশ্রয় নিয়েছেন ঘৃণিত শিয়াদের মিথ্যা ইতিহাসের ভাগাড়ে।
শাইখুল ইসলাম মুফতী মুহাম্মদ তক্বী উসমানী দাঃবাঃ এর কলমে মাওলানা আবু তাহের মিসবাহের অনুবাদে “ইতিহাসের কাঠগড়ায় আমীরে মুয়াবিয়া রাঃ” নামক বইয়ে যার সত্যিকার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। আগ্রহী পাঠকগণ বইটি পড়লেই বুঝতে পারবেন ইতিহাসের অন্ধ গলি কতটা ভয়াবহ ও কন্টকাকীর্ণ।
অনেক দিন আগে www.ahlehaqmedia.com সাইটের প্রশ্নোত্তর বিভাগে একটি প্রশ্ন আসে। সেখানে বলা হয়ঃ শিয়াদের দাবী হল, হযরত ফাতিমা রাঃ এর প্রতি বিদ্বেষ থাকার কারণে হযরত আবু বকর রাঃ সহ অন্যান্য সাহাবাগণ রাঃ তার জানাযায় অংশ নেননি। হযরত আলী রাঃ নিজেই তার স্ত্রীকে গোসল দিয়ে জানাযা পড়ান।
বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর। খোঁজ নিয়ে দেখলাম বাংলায় লেখা হযরত ফাতিমা রাঃ এর কিছু জীবনীতে কাছাকাছি কথাগুলো লেখা আছে।
হয়রান হয়ে গেলাম। এ হয় না। হতে পারে না। সাহাবাগণ পরস্পর ছিলেন “রুহামাউ বাইনাহুম” এর সত্যিকার উদ্দীষ্ট। তাহলে এমন ঘটনা কিভাবে হতে পারে?
তথ্য তালাশ করতে গিয়ে হলাম যারপরনাই বিস্মিত। কাজটা শিয়াদের। সত্য ঘটনা ধামাচাপা দিয়ে একটি ও আজগুবি কথাকে প্রতিষ্ঠিত করাতে তাদের জুড়ি মেলা ভার।
মূলত হযরত ফাতিমা রাঃ ছিলেন খুবই পর্দানশীন। তিনি চাচ্ছিলেন না তার জানাযার সময় বেশি মানুষের সমাগম হোক। আর দ্রুত দাফন করা হোক। তাই যে রাতে তিনি ইন্তেকাল করেছেন সেই রাতে অল্প সময়েই তাকে গোসল ও দাফন করা হয়।
গোসল করান হযরত আবু বকর রাঃ এর স্ত্রী আসমা বিনতে উমায়েস রাঃ। আর হযরত আলী রাঃ এর বিনীত অনুরোধে জানাযা পড়ান হযরত আবু বকর রাঃ। দেখুন উসদুল গাবা ও তবক্বাতে ইবনে সা’দ।
দ্রুততার সাথে রাতে কাজগুলি সমাধা হওয়ায় বেশি সাহাবাগণ জানাযায় অংশ নিতে পারেননি।
অথচ রংচং মেখে শিয়া ঐতিহাসিকরা কী ছড়াল? আর আমাদেরও অনেকে তাহক্বীক ছাড়া তা গোগ্রাসে গিলে নিল।
তাই সাবধান! নবীজী সাঃ ও সাহাবাগণ রাঃ এর শানের খেলাফ ঐতিহাসিক কোন বর্ণনা পেলে বিশেষজ্ঞ আলেম (শুধু নামের আলেম নয়) এর কাছ থেকে তাহক্বীক করা ছাড়া বিশ্বাস করবেন না। মিথ্যা ইতিহাস আমাদের ঈমানকেও মিথ্যা প্রতিপন্ন করে দিতে পারে। আল্লাহ হিফাযত করুন। আমীন।