শনিবার, ২২শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৫ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি
নামাজ আদায়ের ভিত্তিতে যদি মানুষকে বিভক্ত করা হয়, তাহলে দেখা যাবে সমগ্র মানবজাতি পাঁচ প্রকার পর্যায়ে রয়েছেঃ-
প্রথম ধাপঃ এই ধাপে আছে তারা, যারা নামাজে অনীহা দেখায়, নিজেদের আত্মার প্রতি জুলুম করে। এরা ঠিকমত ওযু করে না, সময়মত নামাজ আদায় করে না, নামাজের নিয়ম-কানুন ভালোভাবে পূরণ করে না, তাদের নামাজের রুকনগুলি ছুটে যায়।
দ্বিতীয় ধাপঃ এ ধাপের সদস্য হচ্ছে তারা, যারা সঠিক সময়ে নামাজ পড়ে, নামাজের নিয়ম-কানুন মেনে চলে, প্রয়োজনীয় রুকনগুলি আদায় করে, যত্নের সাথে ওযু করে। তবে উপরিউক্ত বিষয়গুলো অর্জনে তার প্রচেষ্টা শয়তানের ওয়াসওয়াসার কারণে নষ্ট হয়ে যায়। নামাজ আদায়ের সময় শয়তানের কুমন্ত্রণায় সে ডুবে যায় ভাবনার জগতে।
তৃতীয় ধাপঃ এ ধাপের লোকেরা নামাজের নিয়ম-কানুন মেনে চলায় সদাসচেষ্ট থাকে, নামাজের রুকনসমূহ ভালোভাবে আদায় করে এবং শয়তানের কুমন্ত্রণা ও চিন্তাভাবনা থেকে দূরে থাকার জন্য ক্রমাগত চেষ্টা চালিয়ে যায়। নামাজের সময় সে তার শত্রু – শয়তানের সাথে লড়াই করতে ব্যস্ত থাকে; এক্ষেত্রে সে একইসাথে নামাজ আদায় করছে এবং শয়তানের বিরুদ্ধে জিহাদ করছে।
চতুর্থ ধাপঃ এ ধাপে আছেন সেই ব্যক্তি যিনি নামাজে দাঁড়ান, নামাজের সব হক আদায় করেন, নিয়ম-কানুম মেনে চলেন, প্রতিটি রুকন পালন করেন। নামাজের হক আদায়ে তার হৃদয় আচ্ছন্ন হয়ে থাকে, তিনি নিবিষ্ট মনে চেষ্টা করেন যেন তার কোন প্রচেষ্টা বিফলে না যায়। তার একমাত্র চিন্তা থাকে কীভাবে তিনি নামাজকে কায়েম করবেন, নামাজকে সঠিকভাবে সম্পন্ন করবেন, নৈপুণ্যের সাথে সালাহ আদায় করবেন। এ ব্যক্তির অন্তর নামাজে মগ্ন হয়ে থাকে, মহান রবের দাসত্বে ভরপুর হয়ে ওঠে।
পঞ্চম ধাপঃ এ ধাপে সেই ব্যক্তি আছেন, যিনি উপরের ধাপে বর্ণিত লোকের মতই নামাজে দাঁড়ান। তবে সেই সাথে তিনি আরো কিছু কাজ করেন। তিনি তার অন্তরখানা আল্লাহ আযযা ওয়াজালের সমীপে পেশ করেন, পূর্ণ মনোযোগের সাথে তাঁর প্রতি তাকিয়ে থাকেন। তার মন আল্লাহর ভয়ে ও আল্লাহর অসীম শক্তির স্মরণে এতো অভিভূত হয়ে থাকে, যেন তিনি আল্লাহকে সরাসরি দেখতে পাচ্ছেন। শয়তানের কুমন্ত্রণা, আজেবাজে চিন্তা কোথায় নিমিষে উধাও হয়ে যায়। তার এবং তার রবের মাঝের পর্দা সরে যায়। দুনিয়ার সকল লোকের নামাজের সাথে এ ব্যক্তির নামাজের তুলনা তো এমন যেমন ফারাক থাকে আসমান ও জমীনের মধ্যে। এ ব্যক্তি শুধু তার রবকে নিয়েই ব্যস্ত, এবং তাকে পেয়েই সন্তুষ্ট।
কেমন হবে এ পাঁচ প্রকার নামাজের বিনিময়?
প্রথম ধাপের লোকেদের শাস্তি দেওয়া হবে, দ্বিতীয় ধাপের ব্যক্তিদের জেরা করা হবে, তৃতীয় ব্যক্তির গুনাহ ও দুর্বলতা ক্ষমা করে দেওয়া হবে। চতুর্থ ব্যক্তিকে পুরস্কৃত করা হবে আর পঞ্চম ব্যক্তি অর্জন করবে আল্লাহর নৈকট্য, কেননা সে নামাজকে নিজের চোখের প্রশান্তি করে নিয়েছে। সুতরাং তার বিনিময় ও হবে তাদের মত যারা নিজেদের নামাজে চোখের প্রশান্তি খুঁজে পায়। যারা নামাজকে নিজেদের চোখের প্রশান্তি করে নেয়, পরকালে আল্লাহর নৈকট্যকে তাদের জন্য চোখের প্রশান্তি করে দেওয়া হবে। এ দুনিয়াতেও তিনি সকলের জন্য চোখের প্রশান্তিতে পরিণত হবেন, কেননা যে ব্যক্তি আল্লাহকে তার চোখের প্রশান্তি বানিয়ে নেয়, সে ব্যক্তিকে দেখে সব চোখই সন্তুষ্ট হয়ে ওঠে।
[মূল লেখাঃ ইবন আল-কায়্যিম (রহিমাহুল্লাহ)
আল-ওয়াবিল আল-সায়্যিব বই এর একাংশ, ইংরেজি থেকে অনূদিত]