শুক্রবার, ২১শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৪ঠা জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি
মানুষ যদি আল্লাহ পাকের নিকট কবুল হতে চায়, আল্লাহ পাক তাহার অর্থ-সম্পদ, বংশ-মর্যাদা, শিক্ষা-দীক্ষা, সামাজিক অবস্থান, বরং কিছুই দেখেন না দেখেন তার সিফাত। এর মাঝে প্রথম সিফাত হল ঈমান।
ঈমানঃ
ঈমান হল, রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর পুর্ন আস্থা থাকার কারনে আল্লাহ তাআলার পক্ষ হতে তিনি যে সকল খবর নিয়ে এসেছেন তা বিনা দ্বিধায় মেনে নেয়া।
ঈমানের উদ্দেশ্যঃ
ক) দিলের ইয়াকীন সহীহ করা; মাখলুক থেকে কিছুই হয় না যা হয় এক আল্লাহ থেকেই হয়।
খ) তরীকার ইয়াকীন সহীহ করা; রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এর তারীকা অনুযায়ী চলার মধ্যেই এক মাত্র কামিয়াবী।
গ) জযবার ইয়াকীন সহীহ করা; মালমুখী থেকে আ’মালমুখী হওয়া, দুনিয়া থেকে আখেরাতমুখী হওয়া।
ঈমানের ফযিলতঃ
ঈমানের দ্বারাই বান্দার সাথে আল্লাহর সম্পর্ক স্থাপন হবে। জাররা পরিমান ঈমান নিয়ে যে ব্যাক্তি দুনিয়া থেকে যাবে, তাকে ১০ দুনিয়ার সমান জান্নাত দেয়া হবে।
একজন ঈমানওয়ালা মানুষ যতদিন দুনিয়াতে থাকবে আল্লহ পাক তার বদৌলতে দুনিয়ার সমস্ত কায়েনাতকে ঠিক রাখবেন।
হাসিল করার তরীকাঃ
১) দাওয়াত
২) মশক
৩) দোয়া
১) দাওয়াতঃ
দাওয়াত কি?
আল্লাহ থেকেই সমস্ত কিছু হয় মাখলুক থেকে কিছুই হয় না, একমাত্র রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এর নুরানী তরীকাতেই একশতভাগ শান্তি ও কামিয়াবী অন্য যে কোন তরীকাতেই একশত ভাগ ধ্বংস, দুনিয়ার জিন্দেগী অল্প সময়ের জিন্দেগী আর আখেরাতের জিন্দেগী চিরস্থায়ী জিন্দেগী এই কথা মানুষ কে বলা।
কাকে দাওয়াত দিব? কোথায় দাওয়াত দিব?
উম্মতকে দাওয়াত দিব। যেখানে যেখানে উম্মত আছে সেখানে সেখানে দাওয়াত দিতে হবে।
কি দাওয়াত দিব?
যেখানে যেখানে আসবাব থেকে হওয়ার কথা আলোচনা হয়, সেখানে সেখানে গিয়ে আল্লহ থেকে হওয়ার দাওয়াত দিতে হবে। যেখানে রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের তরীকা ব্যতীত অন্য তরীকার কথা আলোচনা করা হয় সেখানে গিয়ে রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের তরীকায় একশত ভাগ কামিয়াবী আছে তার দাওয়াত দিতে হবে। যেখানে মানুষের আগ্রহ অল্পসময়ের দুনিয়ার প্রতি সেখানে গিয়ে চিরস্থায়ী আখেরাতের দাওয়াত দিতে হবে। নিজের জীবনে আনার জন্যই দাওয়াত দিতে হবে। আল্লাহ পাকের বড়ত্বের, আজমতের, একত্ববাদের দাওয়াত দিতে হবে।
এভাবে দাওয়াত দেয়ার দ্বারা ঈমান বনবে; এই ঈমানকে মজবুত করার জন্য ঈমানের মশক করতে হবে।
২) মশকঃ
ঘরে ও মসজিদে ঈমানী হালকা কায়েম করে ৪ লাইনে কথা বার্তা আলোচনা করতে হবে।
ক) আল্লাহ পাকের কুদরতের কথা আলোচনা করতে হবে (আল্লাহ পাক কুদরতের দ্বারা কায়েনাত কে সৃষ্টি করেছেন, কায়েনাতের মধ্যে কুদরত নাই) এর দ্বারা দিলে আল্লাহ পাকের আজমত বসবে, ধারনা সাফ হবে।
খ) আল্লাহ পাক নবীদের সাথে জাহেরের খেলাফ যে সব সাহায্য আর মদদ করছেন তা বেশী বেশী আলোচনা করা।
গ) ইয়াকিনের বুনিয়াদের উপর সাহাবাদেরকে জাহেরের খেলাফ যে সকল মদদ আল্লাহ পাক করেছেন তা আলোচনা করা।
ঘ) ঈমানের লক্ষন সমূহের ব্যাপারে কোরআন ও হাদিসে যে সব আয়াত ও হাদিস আছে তার সাথে নিজের ঈমানকে যাচাই করা।
৩) দোয়াঃ
কামেল ঈমান হাসিল করার জন্য দোয়া করতে হবে।
নামাজঃ
আল্লহ পাকের খাজানা থেকে সরাসরি নেয়ার মাধ্যম হলো নামাজ।
উদ্দেশ্যঃ আল্লহ পাকের খাজানা থেকে সরাসরি নেয়ার এক যোগ্যতা আর্জন করা।
ফযিলতঃ নামাজের এহতেমামের দ্বারা আল্লাহ পাক ৫ ভাবে পুরষ্কৃত করবেন।
১। আল্লাহ পাক দুনিয়াতে রিজিকের সংকীর্নতা দূর করে দেবেন।
২। কবরের আজাব হটাইয়া দিবেন।
৩। ডান হাতে আমাল নামা দিবেন।
৪। পুলসিরাতের রাস্তা বিজলির ন্যায় পার করে দিবেন।
৫। বিনা হিসেবে জান্নাত দিবেন।
হাসিলঃ তিন লাইনে মেহনতের দ্বারা নামাজ হাসিল হবে -দাওয়াত, মশক, দোয়া।
ক) দাওয়াতঃ
১। আমার জিন্দেগীতে কামেল নামাজ আনার জন্য উম্মতের মধ্যে চলাফেরা করে কামেল নামাজের দাওয়াত দিতে হবে।
২। নামাজের ফাজায়েল জানিয়া জানিয়া তার দাওয়াত দিতে হবে।
৩। নামাজ শুরু হয় অজুর দ্বারা, তাই অজুর ফরজ, সুন্নত, মুস্তাহাব ইত্যাদির দাওয়াত দিতে হবে।
৪। আল্লাহর ধ্যানে নামাজ পড়তে হবে, নিজের জিন্দেগীতে আনার জন্য দাওয়াত দিতে হবে।
৫। কেরাত, রুকু, সেজদা, জলসা, কওমা ইত্যাদি শান্ত ভাবে আদায় করতে হবে, এই কথার দাওয়াত দিতে হবে।
খ) মশকঃ ২ লাইনে নামাজের মশক করতে হবে।
১। জাহেরী লাইনেঃ
ক) অজু করার সময় ফরজ, সুন্নত, মুস্তাহাব, মেসওয়াক ইত্যাদি খেয়াল রাখতে হবে।
খ) কেয়াম, রুকু, সেজদা, জলসা, কওমা ইত্যাদি অঙ্গ প্রত্যঙ্গের ব্যবহার যথাযথভাবে আদায় করার জন্য মশক করতে হবে।
২। বাতেনী লাইনেঃ
অ) আল্লাহর ধ্যানে নামাজ পড়া।
আ) খুশু-খুজুর সাথে নামাজ পড়া।
ই) মোয়ামেলাতের মধ্যে তাকওয়া আনা। নিজের কামাই/রোজগার হালাল করা।
ঈ) প্রতি রোকনে কমপক্ষে ৩ বার এই ধ্যান করতে হবে যে, আল্লাহ আমাকে দেখতেছেন।
উ) কোন সমস্যা আসলে তাহা নামায দ্বারা সমাধানের চেষ্টা করতে হবে।
ঊ) নামাযের মধ্যে দিল দেমাগ ও শরীর হাজির রাখতে হবে (অর্থাৎ নামাযে ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নত কি কি তাহা ইয়াদ রাখতে হবে)।
গ) দোয়াঃ
হাকীকতওয়ালা নামাজ পড়ার তৌফিক চেয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করতে হবে।
এলেম ও জিকিরঃ
এলেমঃ
উদ্দেশ্যঃ
এলমে এলাহীর মধ্যে দুনিয়া ও আখেরাতের কামিয়াবী আছে, এই ইয়াকীন দিলে পয়দা করতে হবে। যে এলেম দ্বারা আল্লাহকে চেনা যায় সেটাই এলমে এলাহী।
ফজিলতঃ
১) যে ব্যাক্তি এলমে এলাহী শিখতে বাহির হয়, ফেরেশতারা তার চলার পথে পাখা বিছায়ে দেয়।
২) এলমের একটা অধ্যায় শিক্ষা করা ১০০০ রাকাত নফল নামাজ পড়ার চেয়ে উত্তম।
হাসিলঃ
৩ লাইনে মেহানত দ্বারা এলমে এলাহী হাসিল হবে। ক)দাওয়াত খ)মশক গ)দোয়া
ক) দাওয়াতঃ এলমের উদ্দেশ্য ও লাভ বলে বলে মানুষে মধ্যে দাওয়াত দিতে হবে।
খ) মশকঃ ৪ ভাবে এলম হাসিলের মশক করতে হবে।
১। ফাজায়েল-ওয়ালা এলম (ঘরে ও মসজিদে তালিমের হালকায় বসে)
২। মাসায়েল-ওয়ালা এলম (ওলামায়ে কেরাম থেকে)
৩। ছিফাত-ওয়ালা এলম (মুন্তাখাব হাদীস পড়ে)
৪। তরবিয়ত-ওয়ালা এলম (হায়াতুস সাহাবাহ পড়ে)
গ) দোয়াঃ এলমে এলাহী হাসিলের তৌফিক চেয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করতে হবে।
জিকিরঃ
উদ্দেশ্যঃ আমাদের জিন্দেগীর মধ্যে এহসান পয়দা করা। আল্লাহ আমাকে সর্বদা দেখেন, আমার দিলের জল্পনা-কল্পনাও তিনি জানেন-শুনেন, এই ইয়াকীন সর্বদা দিলে থাকাকে এহসান বলে। আল্লাহ পাক সামীউন/বসীরুন/আলীমুন এই ৩ সিফতের ধ্যান মানুষকে মাকামে এহসান এ পৌছায়।
ফাজায়েলঃ জিকিরের দ্বারা আল্লাহ পাকের মহব্বত পয়দা হয়, নৈকট্য হসিল হয়, দিল জিন্দা হয় এবং গাফেলত দূর হয়।
হাসিল করার তরীকাঃ ৩ লাইনে মেহানত দ্বারা জিকির হাসিল হবে। ক)দাওয়াত খ)মশক গ)দোয়া
ক) দাওয়াতঃ জিকিরের উদ্দেশ্য ও লাভ বলে বলে মানুষে মধ্যে দাওয়াত দিতে হবে।
খ) মশকঃ
১। তাসবিহাতঃ আল্লাহর ধ্যানের সাথে তাসবিহাত আদায় করা। ধ্যান ছাড়া তাসবিহাত আদায় করলে গাফেলত পয়দা হয়। তাই সকাল সন্ধ্যা ধ্যানের সাথে তিন তসবিহ আদায় করা।
২। কোরআন পাকের তেলাওয়াতঃ ধ্যানের সাথে রোজানা ১ পারা কোরআন পাকের তেলাওয়াত করতে হবে।
৩। মাসনুন দোয়াঃ মাসনুন দোয়া ধ্যানের সাথে আদায় করতে হবে। ধ্যান ছাড়া যে কোন আমাল আদতে পরিনত হবে।
গ) দোয়াঃ হাকীকতের যিকিরের তৌফিক চেয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করতে হবে।
একরামঃ
উদ্দেশ্যঃ নবীওয়ালা আখলাক আমাদের জিন্দেগীতে আনার জন্য এবং আমলের হেফাজতের জন্য একরাম করতে হবে।
ফজিলতঃ
১। কোন মুসলমানের উপকার করার চেষ্টা করা, ১০ বছর এতেকাফ করার চেয়ে উত্তম।
২। যে মুসলমানের দোষত্রুটি ঢেকে রাখবে, আল্লাহ পাক দুনিয়া ও আখেরাতে তাহার দোষত্রুটি ঢেকে রাখবেন।
হাসিলঃ ৩ লাইনে মেহানত দ্বারা একরাম হাসিল হবে। ক)দাওয়াত খ)মশক গ)দোয়া
ক) দাওয়াতঃ সমস্ত মাখলুকের হক আদায় করতে হবে এই কথার দাওয়াত দিতে হবে।
খ) মশকঃ
১। নিজের ভাল কাজের মধ্যে দোষ তালাশ করা এবং অপর মুসলমান ভাইয়ের মধ্যে গুন তালাশ করা।
২। প্রকৃত মুমিন ঐ ব্যাক্তি যে নিজের জন্য যাহা পছন্দ করে, অন্যের জন্যও তাহা পছন্দ করে।
গ) দোয়াঃ হুসনে আখলাক নিজের জিন্দেগীতে নসীব হওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করতে হবে।
এখলাসঃ
উদ্দেশ্যঃ
রেজায়ে এলাহী। আল্লাহ পাকের আহকামসমুহ সুন্নত তরীকায় কেবল মাত্র আল্লাহ পাকের রাজির নিয়তে করা।
ফজিলতঃ এখলাসের সহিত সামান্য আমলই নাজাতের জন্য যথেষ্ট। আল্লাহ পাক ঐ আমালই কবুল করেন যাহা কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করা হয়।
হাসিলঃ ৩ লাইনে মেহানত দ্বারা এখলাস হাসিল হবে। ক)দাওয়াত খ)মশক গ)দোয়া
ক) দাওয়াতঃ এখালসের উদ্দেশ্য ও ফজিলত বলে বলে দাওয়াত দিতে হবে।
খ) মশকঃ
১। প্রতিটি আমাল শুরু, মাঝে এবং শেষে নিয়তকে যাচাই করতে হবে। আমালটি আল্লাহ পাকের রেজামন্দীর জন্য হইতেছে কিনা।
২। রোজানা অন্ততঃ একটা আমাল এমনভাবে করা যাহা আল্লাহ এবং তাঁর ফেরেশতাগণ ব্যতীত কেহ না জানে।
৩। নিজের সমস্ত ভাল আমালের মধ্যে খারাবী তালাশ করা।
গ) দোয়াঃ এখলাস হাসিল করার জন্য আল্লাহর দরবারে দোয়া করতে হবে।
দাওয়াত ও তাবলীগঃ
উদ্দেশ্যঃ নিজের ঈমান, ইয়াকীন ও আমাল সহীহ হয়ে যায় এবং সকল উম্মতের ঈমান, ইয়াকীন ও আমাল সহীহ হয়ে যায়, এই উদ্দেশ্যে রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের মেহনতের তরীকাকে জিন্দা করা। দাওয়াতের মেহনতের মাধ্যমে ঈমান হাসিল হয়। মালুমাতের মাধ্যমেও ঈমান হাসিল হয় কিন্ত এই ঈমান হালতের সামনে টিকে থাকতে পারে না।
ফজিলতঃ
১। আল্লাহর রাস্তায় এক সকাল অথবা এক বিকাল দুনিয়া এবং দুনিয়ার মধ্যে যা কিছু আছে তার চেয়ে উত্তম।
২। আল্লাহর রাস্তার ধূলা এবং জাহান্নামের ধূয়া একত্র হবে না।
৩। আল্লাহর রাস্তায় প্রতি কদমে ৭০০ নেকী হবে, ৭০০ গুনাহ মাফ হবে, বেহেশতে ৭০০ দরজা বুলন্দ হবে।
হাসিলঃ ৩ লাইনে মেহানত দ্বারা এই ছিফত হাসিল হবে। ক)দাওয়াত খ)মশক গ)দোয়া
ক) দাওয়াতঃ দাওয়াতে তাবলীগের উদ্দেশ্য ও ফজিলত বলে বলে দাওয়াত দিতে হবে।
খ) মশকঃ নিজের জান মাল ও সময় নিয়ে আল্লাহর রাস্তায় বের হয়ে এই ছিফতের মশক করতে হবে।
গ) দোয়াঃ নিজের জান মাল ও সময় আল্লাহর রাস্তায় কবুল হওয়ার জন্য দোয়া করতে হবে এবং পুরা উম্মতের জন্যও এই দোয়া করতে হবে।