রবিবার, ২রা চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ই রমজান, ১৪৪৬ হিজরি
উচুঁ, নিচু, কালো, ফর্সা, ধনী দারিদ্র সবই স্রষ্টার অপরূপ সৃষ্টি বৈচিত্র। দুনিয়া এক পরীক্ষার হল। পরীক্ষার্থী সকল ইনসান। সময়সীমা মৃত্য অবধি।
ধনীর অঢেল সম্পদ যেমন পরীক্ষা। গরীবের দরিদ্রতাও তেমনি ইমতিহান।
উঁচু বংশের আভিজাত্য যেমন পরীক্ষা। তেমনি নিচু বংশের দুর্বলতাও পরীক্ষা।
লম্বার উঁচুতা যেমন ইমতিহান। তেমনি খাটোর দুর্বলতাও পরীক্ষা।
পরীক্ষা ফর্সার জৌলস যেমন। পরীক্ষা কালোর কৃষ্ণতাও।
বিজয়ীর উচ্ছাস যেমন পরীক্ষা। পরীক্ষা পরাজিতের গ্লানিও।
কেউবা বুঝে। কেউবা না বুঝে স্রষ্টার ফায়সালায় অহেতুক অসন্তুষ্ট হয়।
জীবন চলে আপন গতিতে। কারো বা চোখের অশ্রুতে। কারো বা সুখের গড্ডালিকায় গা ভাসিয়ে।
মানুষ সমাজবদ্ধ জীব। সামাজিকতা আর বংশ পরম্পরা টিকে থাকার স্রষ্টা নির্ধারিত চিরায়ত পদ্ধতি হল বিয়ে। সৃষ্টি লগ্ন থেকেই যা চলে আসছে যুগ যুগ ধরে।
কালের আবর্তে, সমাজের তারতম্যে তার পথ পদ্ধতিতে এসেছে নানাভিদ আচার অনুষ্ঠান। রুসুম ও রেওয়াজ।
এর মাঝে বিয়ের আগে কনে দেখা প্রায় সকল ধর্ম বর্ণ ও জাতিগোষ্ঠিতে স্বীকৃত একটি বিষয়।
বরের চাহিদার অন্ত নেই। আবহমান কাল ধরেই তা চলে আসছে বাংলার শহর বন্দর। গ্রাম গ্রামান্তর।
কোথাও যৌতুকের অভিশাপ। শ্বশুরবাড়ীতে ভিক্ষার ঝুলি হাতে বরপক্ষ। কখনো সখনো যৌতুকের পরিমাপ বিতর্ক গরু হাটের দরদামও হার মানে। ভদ্রতার মুখোশ খুলে ফুটে উঠে লোভি পশুত্বের বিশ্রী দন্ত।
কোথাও যৌতুক নয়। চলে সৌন্দর্য পূজার খোলা আয়োজন।
বউটা চাই প্রায় বিশ্ব সুন্দরী। খাড়া নাক। টানা টানা ডাগর চোখ। দুধে আলতা বরণ। কমণীয় চাহনি। রেশমী চুলের বাহার। লম্বাটে গরণ। এক কথায় পরমা সুন্দরী ডানা কাটা পরী চাই সবার।
আয়োজন করে কনে দেখতে যেয়ে। গরু দেখাকে হার মানাই। হেটে দেখাও। চুল দেখাও। পানির উপর দিয়ে চলতো খানিক। ইংরেজীতে কথা বল।
কনে দেখাতো নয়। যেন হালাল করতে গরু কেনা হচ্ছে। নিখুঁত প্রাণীটা চাই সবার।
মনুষত্বের আদালতে দাঁড়িয়ে। মানবিকতার দৃষ্টিতে। মানবতার নজরে দৃশ্যগুলো কল্পনা করিতো একবার!
আমাদের উপরোক্ত কনে দেখার উদ্ভট আয়োজনে কী পরিমাণ ঝড় বয় কনেদের মনাকাশে। এত আয়োজন করে দেখা শেষে যখন কালো বলে, খাটো বলে প্রত্যাখ্যান করা হয় পাত্রীকে। তখন কি হাল হয় মেয়েটার? একবার ভাবি কি?
বিশ্ব সুন্দরী বিয়ে করতে চাও আগে বলে দিলেই হয়। খবর নাও। সব কিছু ঠিক থাকলে দেখতে যাও। নতুবা আগে থেকেই কেটে পড়।
কিন্তু বিশাল আয়োজনে ছেলেসহ কনে দেখার পর অভিযোগের ঢালি সাজিয়ে এ কোন অমানুষীর কাজ করছি আমরা?
সব কিছু যদি দুনিয়াতেই চাও তাহলে আখেরাতটা বিশ্বাস কর কোন লাজে?
বিবাহ প্রত্যাশী আমার ভাইরা!
কন্যাদায়গ্রস্থ পিতার আর্তনাদ হয়তো আপনি শুনতে পাননি। হয়তো আপনার কর্ণে লৌকিক সৌন্দর্যহীন কনের করূণ কান্না পৌঁছে না। অনুভূত হয় না বাহ্যিক চামড়ার সৌন্দর্যহীন বোনদের হৃদয়ে জমা কষ্টের নদীটা। ঠাট্টায়। উপহাসে উড়িয়ে দেয়া আপনার মন্তব্যে ফাঁসিতে ঝুলতে যাওয়া কন্যার গোঙ্গানো বেদনা নাড়া দেয় না আপনার হৃদয়ে।
কিন্তু তবে!
চিত্রটা বদলে যেতে পারে একদিন। কন্যাদায়ের অভিশাপ চাপতে পারে আপনার কাঁধেও। উল্টে যেতে পারে দৃশ্যপট।
তাই চামড়ার সৌন্দর্য নয়। দিলের সৌন্দর্যের অভিলাসী হই। দুনিয়াতেই সকল চাওয়ার বাস্তবায়ন না চাই। আখেরাতের জন্য বরাদ্দ রাখি কিছু চাওয়া পাওয়া।