শুক্রবার, ২১শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৪ঠা জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

আরাকানকে বাণিজ্যিক অঞ্চল করতে রোহিঙ্গাশূন্য করা হচ্ছে

মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর নিপীড়নকে ‘গণহত্যা’ বলে আখ্যায়িত করে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বলেছেন, আরাকানকে বাণিজ্যিক অঞ্চল করতে রোহিঙ্গাশূন্য করা হচ্ছে।

সোমবার বেলা ১১টার দিকে কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা বলেন।

Default Ad Content Here

কাজী রিয়াজুল হক বলেন, মিয়ানমার আগে থেকে উন্নত দেশ। এর ধারাবাহিকতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই বিশ্বের বিভিন্ন দেশ মিয়ানমারে বিনিয়োগ করছে। বিনিয়োগকারীদের ইচ্ছায় মিয়ানমার রাখাইন রাজ্যে বিশেষ অঞ্চল গড়তে চায়।

তিনি বলেন, অতীত রোহিঙ্গা নির্যাতন নিয়ে গত ২৪ আগস্ট কফি আনান কমিশনের জমা দেয়া প্রতিবেদনটি রোহিঙ্গা তথা মানবতার পক্ষে গেছে। তাই রোহিঙ্গাদের তাড়াতে পরিকল্পিতভাবে শুরু হয়েছে রোহিঙ্গা নিধন।

মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, বাণিজ্যিক উন্নয়নের লক্ষ্যে একটি জাতির ওপর রাষ্ট্রীয় গণহত্যা কোনোভাবে মেনে নেয়া যায় না। আন্তর্জাতিক মহল থেকে মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগের পরও নির্যাতন বন্ধ না হওয়ায় বাংলাদেশ সরকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যাওয়ার চিন্তা করছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

প্রেস ব্রিফিংয়ে কমিশনের চেয়ারম্যান আরও বলেন, মিয়ানমার সরকার নির্বিচারে রোহিঙ্গাদের হত্যা করছে। ঘুমন্ত মানুষের ওপর নির্যাতন চালাচ্ছে। নারীদের তুলে নিয়ে ধর্ষণ করেছে। বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ করে লুটপাট চালাচ্ছে -এই বর্বরতা সভ্য ইতিহাসে ব্যতিক্রম। পৃথিবীর কোনো দেশ, জাতি তা দেখেনি।

তিনি বলেন, আমরা রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করে অনেক রোহিঙ্গার সঙ্গে কথা বলেছি। তারা যেভাবে নির্যাতনের বর্ণনা দিয়েছেন, তা অত্যন্ত ভয়াবহ। তাদের কথা থেকে অনুমান করে মিয়ানমারের এই নির্যাতনকে গণহত্যার শামিল বলে অভিহিত করছি।

কাজী রিয়াজুল হক বলেন, মিয়ানমারের এই নির্যাতনের কথা জাতিসংঘ, ইইউ, আরবলীগসহ আন্তর্জাতিক মহলে তুলে ধরেছে বাংলাদেশ। তাদের বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে চিঠিও দেয়া হয়েছে। এতে বিশ্ব বিবেক নাড়া দিয়েছে। তাই আন্তর্জাতিক মহল থেকে মিয়নমারের ওপর চাপ প্রয়োগ হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, নতুনভাবে তিন লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে। সব মিলে এখন পর্যন্ত ৭-৮ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অবস্থান করছে। আসার অপেক্ষায় রয়েছে আরও অনেক রোহিঙ্গা। নতুন আসা রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ সরকার, বিভিন্ন সংগঠন ও সাধারণ মানুষ মানবিক সহায়তা দিচ্ছে।

রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের বোঝা উল্লেখ করে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, বাংলাদেশ জনসংখ্যাবহুল দেশ। তার ওপর ৭-৮ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটা আমাদের জন্য সমস্যা। জীবন বাঁচানো হচ্ছে সবচেয়ে বড় মানবাধিকার। বাংলাদেশ সরকার তাই রোহিঙ্গাদের ঠাঁট দিয়েছে।

তিনি বলেন, মিয়ানমার সরকারকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে হবে। তারা না নিলে জাতিসংঘ, ওআইসি ও আসিয়ান এগিয়ে আসুক। তাদের রোহিঙ্গাদের নিতে হবে। মিয়ানমার আসিয়ানের সদস্য। আসিয়ান চাপ প্রয়োগ করলে মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হবে। এতে আসিয়ানের সদস্য ভারত ও চীন বড় ভূমিকা রাখতে পারে।

প্রেস ব্রিফিংয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্য নুরুন্নাহার ওসমান ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপপরিচালক আনোয়ারুল নাসেরসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে রোববার তিনি উখিয়ার বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন। সেখানে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলে তাদের ওপর ঘটে যাওয়া পাশবিকতার বর্ণনা শোনেন।

Archives

December 2024
S S M T W T F
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031