শুক্রবার, ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক/মায়ের দুধের সংগ্রহশালা কী বিপদ ? কী বিকল্প?


দুধ ভাই-বোনের সম্পর্ক হলো আপন ভাই-বোনের মতো। আপন ভাই-বোনের মধ্যে যেমন দাম্পত্য সম্পর্ক চলতে পারে না, ঠিক তেমনি দুধ ভাই-বোনের মধ্যেও চলতে পারে না। এ জন্য কোনো এক মায়ের দুধ যখন ভিন্ন কোনো এক, দুই বা ততোধিক মায়ের সন্তান পান করে, তারা পরস্পরে আপন ভাই-বোনের সম্পর্কে আবদ্ধ হয়ে যায়। এ কারণেই এক মায়ের সন্তান যখন অন্য কোনো মায়ের দুধ পান করে সেটা মনে রাখতে হয় এবং এ বিষয়টি সম্পর্কে জানাশোনা থাকতে হয়। যেন দুধ সম্পর্কের বিষয়টি জানা না থাকায় ‘আপন’ ভাই-বোনের ভেতরে বৈবাহিক সম্পর্ক ঘটে যাওয়ার মতো ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনা না ঘটে।

হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক বা মায়েদের দুধের সংগ্রহশালা চালু করার মূল সমস্যাটা এখানেই। এতে ‘আপন’ ভাই-বোনের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক তৈরি হওয়ার পথ খুলে যায়। কারণ এই মিল্ক ব্যাংকে একদিকে বহু মায়ের দুধ জমা হয়, অপরদিকে বহু ভিন্ন মায়ের সন্তান এই দুধ পান করে। যাদের পরস্পরের মধ্যে কোনো পরিচিতি থাকার সুযোগ ঘটে না, দরকারও মনে করা হয় না, সম্ভবও হয় না। কার দুধ কে পান করলো, কে কার দুধ ভাই-বোন হলো-এটা থাকে পুরোপুরি অজ্ঞাত।

একটু চিন্তা করলেই বোঝা যায়, মিল্ক ব্যাংকের এই প্রক্রিয়াটি কত ভয়ঙ্কর রকম বিপদজনক! কী ভয়াবহ বিপর্যয় তৈরি করতে পারে!

এ বিষয়টি নিয়ে তাই মিল্ক ব্যাংক বিষয়ে সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তাদের সঙ্গে খোলামেলা, আন্তরিক ও প্রামাণ্য আলোচনা হতে পারে প্রথম পদক্ষেপ। এমনকি এ বিষয়ে কাছাকাছি সহজ বিকল্পের পরামর্শও তাদের সামনে পেশ করা যায়। এতে যদি কাজ না হয় তবে এ বিষয়টি নিয়ে পরবর্তী ধাপে আরো জোরালো ও শক্ত পদক্ষেপের দিকে যাওয়া যায়। কোনো অবস্থাতেই একটি মুসলিম সমাজে, মুসলিম দেশে এমন ঢালাওভাবে মায়ের দুধের সংগ্রহশালা চলতে দেওয়া উচিত হবে না।

প্রচলিত দুধ ব্যাংকের একটি বিকল্প:

হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক ধারণা ও প্রয়োজনীয়তার বেশ কিছু বিকল্প থাকতে পারে। এখানে একটি বিকল্পের কথা তুলে ধরছি।

কোনো একটি হাসপাতালে অথবা ভিন্ন ভিন্ন বহু হাসপাতলে দুধ দানকারী মায়েদের ( যেসব মায়ের দুধ নবজাতকের মৃত্যুসহ অন্য কোনো কারণে জমে যাচ্ছে, নষ্ট হচ্ছে এবং তিনি অন্য কোনো মায়ের সন্তান কে তার দুধ দান করতে চাচ্ছেন) একটি তালিকা- ঠিকানা ও ফোন নাম্বারসহ রক্ষা করা যায়। অপরদিকে যেসব নবজাতক কোনো কারণে নিজের আপন মায়ের দুধ পাচ্ছে না, হাসপাতালে যোগাযোগ করে দুধ দানকারী নির্দিষ্ট কোনো এক বা একাধিক মায়ের দুধ তাকে পান করানো যায়। দুধদানকারী মা এবং দুধ পানকারী অপর মায়ের সন্তান বা তার অভিভাবকের মধ্যে পরস্পর জানাশোনা ও পরিচিতি রক্ষার ব্যবস্থা করা যায়। এতে ঢালাওভাবে অজ্ঞাত অবস্থায় যেকোনো মায়ের দুধ অপর যেকোনো সন্তান পান করার ফলে পরবর্তী সময়ে যে ভয়াবহ সংকট তৈরি হওয়া আশঙ্কা থাকে, তা থেকে মুক্ত থাকা যায়।

এই তালিকার ভিত্তিতে সরাসরি দুধ দানকারী মায়ের কাছে গিয়েও অপর মায়ের সন্তানের দুধ পান করার ব্যবস্থা করা যায়, অথবা কৃত্রিম উপায়ে দুধ দানকারী মায়ের দুধ সংগ্রহ করে ওই সন্তানের কাছে পৌঁছে দেওয়া যায়। উভয়টাই সম্ভব। এ প্রক্রিয়ায় একটু বাড়তি শ্রম যাবে, কিন্তু দুধ সম্পর্কজাত পবিত্র বন্ধনের পরিচিতি ও পবিত্রতাটা রক্ষা করা যাবে। এবং এ বিষয়ক ভয়াবহ বিপদজ্জনক সংকট থেকে বাঁচা যাবে।

এখানে তাৎক্ষণিকভাবে একটি বিকল্পের কথা পেশ করা হলো। বিজ্ঞ মুফতি সাহেবগণ এ বিষয়ক বিভিন্ন বিকল্প ও সুরত নিশ্চয়ই জানেন। তারা অবশ্যই আরো বিভিন্ন প্রস্তাব পেশ করতে পারবেন।

‘মানবকল্যাণের’ নামে যেকোনো ভয়াবহ ও বিপদজনক হারাম সমাজে চালু হলে কেউ কেউ বিকল্প কোনো সুরত পেশ করতে না পারলে সতর্ককারীদের চুপ থাকতে বলেন। মুসলমানের জন্য এটা একদমই অসমীচীন। ওইসব হারামের পথে না যাওয়ার বিকল্প পাওয়া গেলে তো ভালো। বিকল্প না পাওয়া গেলেও ওই বিপদজনক হারামের পক্ষে অবস্থান নেওয়া মারাত্মক একটা ব্যাপার। খুব শান্তভাবে পুরো বিষয়টি ভেবে চিন্তে দেখার অনুরোধ রইলো।

শরীফ মুহম্মদ

সম্পাদক, ইসলাম টাইমস ২৪

Archives

April 2024
S S M T W T F
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930