বৃহস্পতিবার, ১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৮ই রমজান, ১৪৪৫ হিজরি

জেনে নিন ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদের ৫০০ বছরের ইতিহাস


উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের হাতে ধ্বংস হওয়া ভারতের উত্তরপ্রদেশের শহীদ বাবরি মসজিদ ভূমি মালিকানার রায় ঘোষণা করেছে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। রায়ে মসজিদের জায়গা হিন্দুদের মালিকানায় দিয়ে দেয়া হয়েছে।

আজ (শনিবার) স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১০টার দিকে দেশটির প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। এই বেঞ্চে রয়েছেন বিচারপতি এসএ বোবদে, ডিওয়াই চন্দ্রচূড়, অশোক ভূষণ এবং এস আব্দুল নাজির।

রায়ে সুপ্রিম কোর্ট বলেছেন, অযোদ্ধার বাবরি মসজিদের স্থানে রাম মন্দির নির্মিত হবে; বিকল্প হিসেবে বাবরি মসজিদ নির্মাণের জন্য মুসলিম ওয়াকফ বোর্ডকে পাঁচ একর জমি অন্যত্র প্রদান করা হবে।

ভারতীয় রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, ভারতের রাজনীতির একটা বড় অংশ আবর্তিত হয়েছে এই মসজিদের জায়গাকে কেন্দ্র করেই। আসুন যেনে নেই মসজিদটির নির্মাণ থেকে আজকের দিন পর্যন্ত ঐতিহাসিক কিছু ঘটনা।

১৫২৮- মুঘল সম্রাট বাবরের সেনাপতি মীর বাকি বাবরি মসজিদ তৈরি করেন।

১৮৮৫- ফৈজাবাদ জেলা আদালতে বাবরি মসজিদের বাইরে চাঁদোয় টাঙানোর আবেদন জানালেন মহান্ত রঘুবর দাস। আদালতে আবেদন নাকচ হয়ে যায়।

১৯৪৯- মূল গম্বুজের মধ্যে নিয়ে আসা হল রাম লালার মূর্তি।

১৯৫০-রামলালার মূর্তিগুলির পূজার অধিকারের আবেদন জানিয়ে ফৈজাবাদ জেলা আদালতে আবেদন করলেন গোপাল শিমলা বিশারদ।

১৯৫০- মূর্তি রেখে দেওয়ার এবং পূজা চালিয়ে যাওয়ার জন্য মামলা করলেন পরমহংস রামচন্দ্র দাস।

১৯৫৯- ওই স্থানের অধিকার চেয়ে মামলা করল নির্মোহী আখড়া।

১৯৬১- একই দাবি জানিয়ে মামলা করল সুন্নি সেন্ট্রাল ওয়াকফ বোর্ড।

১৯৮৬- ফেব্রুয়ারি ১- স্থানীয় আদালত সরকারকে নির্দেশ দেয়, হিন্দু তীর্থযাত্রীদের প্রবেশাধিকার দিতে। সে সময়ে রাজীব গান্ধী ছিলেন প্রধানমন্ত্রী।

১৯৮৯, ১৪ আগস্ট- এলাহাবাদ হাইকোর্ট নির্দেশ দেয়, বিতর্কিত স্থানে স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে হবে।

১৯৯০, ২৫ ডিসেম্বর- বিজেপি নেতা লালকৃষ্ণ আদবানি গুজরাটের সোমনাথ থেকে রথযাত্রা শুরু করেন।

৬ ডিসেম্বর, ১৯৯২- উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা বাবরি মসজিদকে শহীদ করে দেয়।

৩ এপ্রিল, ১৯৯৩- অযোধ্যার জমি অধিগ্রহণ করার জন্য বিতর্কিত এলাকার অধিগ্রহণ আইন পাস হয়। এলাহাবাদ হাইকোর্টে এই আইনের বিভিন্ন বিষয়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে রিট পিটিশন জমা পড়ে। সংবিধানের ১৩৯ এ অনুচ্ছেদের মাধ্যমে ওই রিট পিটিশন বদলি করে দেয় সুপ্রিম কোর্ট, যা এখনও হাইকোর্টে বিচারাধীন।

২৪ এপ্রিল, ১৯৯৪- সুপ্রিম কোর্ট ঐতিহাসিক ইসমাইল ফারুকি মামলায় রায়ে জানায়, মসজিদ ইসলামের অন্তর্গত ছিল না।

২০০২ এপ্রিল- বিতর্কিত স্থলের মালিকানা নিয়ে হাইকোর্টে শুনানি শুরু হয়।

১৩ মার্চ, ২০০৩- সুপ্রিম কোর্ট বলে, অধিগৃহীত জমিতে কোনও রকমের ধর্মীয় কার্যকলাপ চলবে না।

১৪ মার্চ- সুপ্রিম কোর্ট বলে, এলাহাবাদ হাইকোর্টে দেওয়ানি মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য অন্তর্বর্তী আদেশ কার্যকর থাকবে।

৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১০- হাইকোর্ট রায় দেয়, মসজিদের জমি সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড, নির্মোহী আখড়া এবং রামলালার মধ্যে সমবণ্টন করে দেওয়া হোক। এই রায়ে তিন বিচারপতি সহমত পোষণ করেননি। ২-১ ভিত্তিতে রায়দান হয়।

৯মে, ২০১১- অযোধ্যা জমি বিতর্কে হাইকোর্টের রায়ে স্থগিতাদেশ ঘোষণা করে সুপ্রিম কোর্ট।

২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬- মসজিদের স্থানে রাম মন্দির তৈরির অনুমতি চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেন সুব্রহ্মণ্যম স্বামী।

২১ মার্চ, ২০১৭- প্রধান বিচারপতি জেএস খেহর যুযুধান পক্ষগুলিকে আদালতের বাইরে সমঝোতার প্রস্তাব দেন।

৭ আগস্ট- এলাহাবাদ হাইকোর্টের ১৯৯৪ সালের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে করা আবেদনের শুনানির জন্য তিন বিচারপতির বেঞ্চ গঠন করে সুপ্রিম কোর্ট।

৮ আগস্ট – উত্তর প্রদেশের শিয়া সেন্ট্রাল বোর্ড সুপ্রিম কোর্টে জানায়, বিতর্কিত স্থান থেকে কিছুটা দূরে মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় মসজিদ বানানো যেতে পারে।

১১ সেপ্টেম্বর- সুপ্রিম কোর্ট এলাহাবাদ হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতিকে নির্দেশ দেয়, বিতর্কিত জমির ব্যাপারে সদর্থক মধ্যস্থতার জন্য দু’জন অতিরিক্ত জেলা বিচারককে ১০ দিনের মধ্যে মনোনয়ন করতে হবে।

২০ নভেম্বর- উত্তর প্রদেশের শিয়া সেন্ট্রাল ওয়াকফ বোর্ড সুপ্রিম কোর্টকে বলে, অযোধ্যায় মন্দির ও লখনউয়ে মসজিদ বানানো যেতে পারে।

১ ডিসেম্বর- এলাহাবাদ হাইকোর্টে ২০১০ সালের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে আবেদন করেন ৩২ জন নাগরিক অধিকার রক্ষা কর্মী।

৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮- সুপ্রিম কোর্টে সমস্ত দেওয়ানি মামলার আবেদনের শুনানি শুরু হয়।

১৪ মার্চ- সুব্রহ্মণ্যম স্বামী-সহ সকল অন্তর্বর্তী আবেদন (যারা এই মামলার পক্ষ হতে চেয়েছিল) নাকচ করে সুপ্রিম কোর্ট।

৬ এপ্রিল- ১৯৯৪ সালের রায়ে যে পর্যবেক্ষণ ছিল তা বৃহত্তর বেঞ্চে পুনর্বিবেচনা করার জন্য সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানালেন রাজীব ধাওয়ান।

২০ জুলাই- সুপ্রিম কোর্ট রায়দান স্থগিত রাখল।

২৭ সেপ্টেম্বর- পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চে মামলা নিয়ে যেতে অস্বীকার করল সুপ্রিম কোর্ট। জানানো হল, ২৯ অক্টোবর থেকে মামলার শুনানি হবে নবগঠিত তিন বিচারপতির বেঞ্চে।

২৯ অক্টোবর- সুপ্রিম কোর্ট জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে যথাযথ বেঞ্চে মামলার শুনানি স্থির করল, ওই বেঞ্চই শুনানির দিন ধার্য করবে।

২৪ ডিসেম্বর- সুপ্রিম কোর্ট সিদ্ধান্ত নিল, এ সম্পর্কিত সমস্ত আবেদনের শুনানি হবে ৪ জানুয়ারি থেকে।

৪ জানুয়ারি, ২০১৯- সুপ্রিম কোর্ট জানায়, তাদের তৈরি করা যথোপযুক্ত বেঞ্চ মামলার শুনানির তারিখ ১০ জানুয়ারি স্থির করবে।

৮ জানুয়ারি- সুপ্রিম কোর্ট পাঁচ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চ ঘোষণা করে। শীর্ষে রাখা হয় প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈকে। এ ছাড়া বেঞ্চের অন্য বিচারপতিরা হলেন এস এ বোবদে, এনভি রামানা, ইউইউ ললিত এবং ডিওয়াই চন্দ্রচূড়।

১০জানুয়ারি- বিচারপতি ইউইউ ললিত নিজেকে মামলা থেকে সরিয়ে নিয়ে সুপ্রিম কোর্টকে বলেন, ২৯ জানুয়ারি নতুন বেঞ্চের সামনে মামলার শুনানি শুরু করতে।

২৫ জানুয়ারি- সুপ্রিম কোর্ট পাঁচ সদস্যের নতুন সাংবিধানিক বেঞ্চ গঠন করে। নতুন বেঞ্চের সদস্যরা হলেন বিচারপতি রঞ্জন গগৈ, বিচারপতি এসএ বোবদে, ডিওয়াই চন্দ্রচূড়, অশোক ভূষণ এবং এস এ নাজির।

২৯ জানুয়ারি- কেন্দ্র সুপ্রিম কোর্টে বিতর্কিত অংশ বাদ দিয়ে বাকি ৬৭ একর জমি তাদের আদত মালিকদের কাছে ফিরিয়ে দেবার আবেদন জানায়।

২০ ফেব্রুয়ারি- সুপ্রিম কোর্ট জানায়, মামলার শুনানি শুরু হবে ২৬ জানুয়ারি থেকে।

২৬ ফেব্রুয়ারি- সুপ্রিম কোর্ট মধ্যস্থতার কথা বলে, আদালত নিযুক্ত মধ্যস্থতাকারীদের কাজে লাগানো হবে কিনা সে সিদ্ধান্ত নেবার জন্য ৫ মার্চ দিন স্থির হয়।

৬ মার্চ- জমি বিতর্ক মধ্যস্থতার মাধ্যমে মীমাংসা করা হবে কিনা সে সম্পর্কিত রায় দান মুলতুবি রাখে সুপ্রিম কোর্ট।

৯ এপ্রিল- নির্মোহী আখড়া কেন্দ্রের জমি ফেরানোর আবেদনের বিরোধিতা করে।

৯ মে- তিন সদস্যের মধ্যস্থতাকারী কমিটি সুপ্রিম কোর্টে তাদের অন্তর্বর্তী রিপোর্ট জমা দেয়।

১৮ জুলাই- সুপ্রিম কোর্ট মধ্যস্থতা চালিয়ে যেতে বলে, ১ অগাস্ট রিপোর্ট জমা দেওয়ার দিন ধার্য হয়।

১ আগস্ট- মধ্যস্থতা সংক্রান্ত রিপোর্ট বন্ধ খামে সুপ্রিম কোর্টে জমা পড়ে।

৬ আগস্ট- সুপ্রিম কোর্ট জমি মামলায় দৈনিক ভিত্তিতে শুনানির কথা জানায়।

১৬ অক্টোবর- সুপ্রিম কোর্টে শুনানি শেষ হয়, রায়দান মুলতুবি রাখা হয়।

৯ নভেম্বর ২০১৯- শনিবার সকালে ভারতের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈর নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ এই রায় দিয়েছে যে বাবরি মসজিদের জায়গায় মন্দির নির্মাণ করা হবে।

Archives

March 2024
S S M T W T F
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031