সোমবার, ৮ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২৩শে শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

দা‘য়ীর গুরুত্বপুর্ন কিছু গুণাবলী

এখলাস
দা‘ঈর জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গুণ হলো এখলাস। এখলাস সম্পর্কে কুরআনের অনেকগুলো আয়াত ও হাদিস রয়েছে। আমরা এখানে একটি আয়াত পেশ করছি। আল্লাহ্্তা‘আলাবলেন-
وَمَا أُمِرُوا إِلَّا لِيَعْبُدُوا اللهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ
তাদেরকে এছাড়া কোন নির্দেশ করা হয়নি যে, তারা খাঁটি মনে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহ্্র এবাদত করবে।

উত্তম আমল
উত্তম আমল দ্বারা উদ্দেশ্য এখলাসের সাথে আমল। এ বিষয়ে আল্লাহ্্তা‘আলাবলেন-
الَّذِي خَلَقَ الْمَوْتَ وَالْحَيَاةَ لِيَبْلُوَكُمْ أَيُّكُمْ أَحْسَنُ عَمَلًا وَهُوَ الْعَزِيزُ الْغَفُورُ}
যিনি সৃষ্টি করেছেন মরণ ও জীবন, যাতে তোমাদেরকে পরীক্ষা করেন-কে তোমাদের মধ্যে কর্মে শ্রেষ্ঠ? তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাময়।

Default Ad Content Here

আাত্মশুদ্ধি:
দা‘ঈর জন্য খুবই জরুরি আমলের মাধ্যমে তার আত্মাকে শুদ্ধ করবে। তাদেরকে কুরআন ভর্ৎসনা করেছে যারা অন্যের এসলাহের তো ফিকির করে, কিন্তু নিজেকে ভুলে যায়। আল্লাহ্্তা‘আলাবলেন-
}أَتَأْمُرُونَ النَّاسَ بِالْبِرِّ وَتَنْسَوْنَ أَنْفُسَكُمْ وَأَنْتُمْ تَتْلُونَ الْكِتَابَ أَفَلَا تَعْقِلُونَ}
তোমরা কি মানুষকে সৎকর্মের নির্দেশ দাও এবং নিজেরা নিজেদেরকে ভূলে যাও ? অথচ তোমরা কিতাব পাঠ কর। তবুও কি তোমরা চিন্তা- ভাবনা কর না?
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لِمَ تَقُولُونَ مَا لَا تَفْعَلُونَ.
মুমিনগণ! তোমরা যা কর না, তা কেন বল?
দা‘ঈদের জন্য খুবই জরুরি হলো সে ইসলামের যে কোন প্রকারের আহকামাতের উপর আমল করবে। চাই সেটা ফরজ, নফল, কিংবা মুস্তাহাবই হোক না কেন। দা‘ঈ সমাজে আদর্শ ব্যক্তি হবে। নিচে কিছু বিষয় উল্লেখ করা হলো-

নামায:
নামায দ্বারা আমার উদ্দেশ্য শুধুমাত্র ফরজ নামায নয়। এটা ছাড়ার তো কোন উপায়ই নেই। উদ্দেশ্য হলো নামায আদায় করার ব্যাপারে তার কিছু বৈশিষ্ট্য থাকবে। দা‘ঈ সর্বদা প্রথম কাতারে থাকবে। পিছনে থাকার অভ্যাস করবে না। নামায আদায়ের ক্ষেত্রে সুন্নাতের এহতেমাম করবে। কোন ধরণের অপূর্ণতা না রেখে পরিপূর্ণ সুন্নত অনুযায়ী নামায আদায় করবে। এর দ্বারা লাভ হবে বাকী মানুষ তাকে আদর্শ মানবে। দাওয়াতের মাঝে এই আমলের প্রভাব সৃষ্টি হবে।
হযরত লোকমান আ. নিজ সন্তানদের উপদেশ দিলেন।
يَا بُنَيَّ أَقِمِ الصَّلَاةَ وَأْمُرْ بِالْمَعْرُوفِ وَانْهَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَاصْبِرْ عَلَى مَا أَصَابَكَ إِنَّ ذَلِكَ مِنْ عَزْمِ الْأُمُورِ.
হে বৎস! নামায কায়েম কর। সৎকাজের আদেশ দাও, মন্দকাজ হতে নিষেধ কর এবং বিপদাপদে সবর কর। নিশ্চয়ই এটা সাহসিকতার কাজ।
হযরত লোকমান আ. এর উপদেশ ছিল দাওয়াতের জন্য। দাওয়াতী কাজের জন্য নামাযের গুরুত্ব অপরিসীম। তাই তিনি নামাযের নসিহত করেছেন। দা‘ঈদের দাওয়াতী কাজে সফলতার জন্য নাওয়াফেল, সুন্নাতেমুআক্কাদা ইত্যাদি খুবই জরুরি। যেমন বিতর, তাহাজ্জুদ, চাশ্ত, আওয়াবীন, এশরাক ইত্যাদি আদায় করবে।

কিয়ামুল লাইল:
তাহাজ্জুদের নামায এমন এক ইবাদাত, যার দ্বারা দ’ায়ী তার দাওয়াতের মধ্যে অসম্ভব প্রভাব সৃষ্টি করতে পারে। যার প্রমাণ হলো, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই নামাযের জন্য মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতেন। এই গুণে গুণান্বিত ব্যক্তিদের প্রশংসা করেছেন। তিনি নিজে আমল করে আমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন। একই অবস্থা ছিল সাহাবা রা.-দের। তাহাজ্জুদের গুরুত্ব বুঝানোর জন্যআল্লাহ্তা‘আলাবলেন-
وَمِنَ اللَّيْلِ فَتَهَجَّدْ بِهِ نَافِلَةً لَكَ عَسَى أَنْ يَبْعَثَكَ رَبُّكَ مَقَامًا مَحْمُودًا.
.
রাত্রির কিছু অংশ কোরআন পাঠ সহ জাগ্রত থাকুন। এটা আপনার জন্যে অতিরিক্ত। হয়ত বা আপনার পালনকর্তা আপনাকে মোকামে মাহমুদে পৌঁছাবেন।
দা‘ঈরা হবেন তাহাজ্জুদগুজার এবং কঠিন পরিশ্রমী। তাদের নেক আমল যেন বেশী থেকে বেশী হয়। আমলটি যেন হয় এখলাস ওয়ালা। আর নিজের ভুল-ত্রুটির জন্য এস্তেগফার পড়বে। দা‘ঈদের বৈশিষ্টই হলো তারা সবধরণের আমল করার পরেও মনে করবে এটা খুবই কম হয়ে গেছে। অক্ষমতার জন্য আল্লাহ্্র কাছে ক্ষমা চাবে।
দা‘ঈদের জন্য খুবই জরুরি তারা যেন এই কাজকে তাহাজ্জুদকে নিজের জীবনের একটি অংশ বানিয়ে নেয়। দাওয়াত কবুল হওয়া ও শক্তিশালী হওয়ার জন্য এটা খুবই জরুরি জিনিস।

রোজ
দা‘ঈদের জন্য খুবই জরুরি সে রোজার গুরুত্ব দিবে। এখানে রোজা বলার দ্বারা ফরজ রোজা উদ্দেশ্য নয়। বরং আমার উদ্দেশ্য হলো নফল রোজা। যেমন- সোমবার, বৃহস্পতিবার, মাসে আইয়্যামে বীযের তিন রোজা, আশুরা ও আরাফার রোজা ইত্যাদি।
এই রোজা দ্বীন ও দুনিয়ার কাজে ঈমানী শক্তি যোগায়। দা‘ঈদের জন্য এটা মৌলিক মাধ্যম। একই অবস্থা দান-খায়রাতের ক্ষেত্রেও।
দা‘ঈ কৃপণ হবে না
কৃপণ ব্যাক্তির ক্ষেত্রে মানুষ দুশমনি করে। প্রয়োজনের বেশী মাল খরচ করা উচিত। তবে এদিকেও লক্ষ রাখতে হবে যাতে এই অতিরিক্ত খরচ অপচয়ের কারণ না হয়। এতে হক গ্রহণের স্পৃহা সৃষ্টি হয়। এর দ্বারা তার সওয়াবও হবে। দান-সদকার অনেক ফজিলত হাদিসে উল্লেখ রয়েছে। পাশাপাশি কৃপণতার ভয়াবহতার কথাও আছে। মোটকথা, দা‘ঈদের জন্য কৃপণতা করা একেবারেই ঠিক না। আল্লাহ্্ তা’আলা আমাদেরকে কৃপণতা থেকে বেঁচে থাকার তাওফিক দান করুন।
কুরআন তেলাওয়াতের গুরুত্ব:
কুরআনুল কারীমের তেলাওয়াতে অভ্যস্ত হওয়া প্রত্যেক মুসলমানের জন্য জরুরি। বিশেষ করে দা‘ঈদের জন্য খুবই জরুরি। তেলাওয়াতকে দা‘ঈ তার জীবনের মৌলিক কাজ বানিয়ে নিবে। কারণ কুরআন হলো আল্লাহ্্র কালাম। মুসলমানগণ কুরআন থেকে সকল প্রকার জ্ঞান অর্জন করতে পারবে। এই কুরআন তাকে সঠিক পথ দেখায়। কুরআন এমন ভাবে তেলাওয়াত করবে, যেন কুরআন তার আখলাক হয়ে যায়। কুরআন অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করার তাওফিক আল্লাহ্্আমাদের দান করুন। আমিন ।
রাসূলূল্লাহ সা. বলেন-
عَنْ عُثْمَانَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ عَنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ إن أفضلكم خَيْرُكُمْ مَنْ تَعَلَّمَ الْقُرْآنَ وَعَلَّمَهُ .
হযরত উসমান রা. নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেছেন, তোমাদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা উৎকৃষ্ট ও উত্তম ঐ ব্যক্তি যে কুরআন শেখে এবং শিখায়।
মোটকথা,দা‘ঈদের জন্য খুবই জরুরি জীবনের পাথেয় হিসাবে সকল প্রকারের নফল নামায, রোজা, দান-খায়রাত, তেলাওয়াত, জিকির-আযকারের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিবে। কারণ এগুলো দাওয়াতী কাজে অনেক প্রভাব পড়ে।
ইল্ম ও জ্ঞান
ইল্ম দ্বারা উদ্দেশ্য এই নয় যে, দা‘ঈর সকল প্রকার জ্ঞান জানা থাকতে হবে। বরং দা‘ঈর ওই বিষয়ের এলেম বা জ্ঞান থাকতে হবে, যে বিষয়ে দা‘ঈ মানুষকে আহবান করবে। যেসব বিষয় থেকে মানুষকে বাঁধা দিবে। আর দা‘ঈ ঐ বিষয়ের নির্দেশ দিবে, যে বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সা. নির্দেশ দিয়েছেন। দা‘ঈ শুধু ঐ সব জিনিস থেকে বাধা দিবে যেসব বিষেয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাধা দিয়েছেন।
ইল্ম ও জ্ঞান মৌলিক গুণাবলির মধ্যে একটি গুণ। যা থেকে দা‘ঈ বিমুখ হতে পারবে না। কারণ আল্লাহ্্তা‘আলাইলমের অনেক মর্যাদা দান করেছেন। সাধারণ মুসলমানের থেকে বেশী মর্যাদা দান করেছেন।
আল্লাহ্্ তা‘আলাবলেন-
قُلْ هَلْ يَسْتَوِي الَّذِينَ يَعْلَمُونَ وَالَّذِينَ لَا يَعْلَمُونَ إِنَّمَا يَتَذَكَّرُ أُولُو الْأَلْبَابِ.
বলুন, যারা জানে এবং যারা জানে না, তারা কি সমান হতে পারে? চিন্তা-ভাবনা কেবল তারাই করে যারা বুদ্ধিমান।
আমলের পূর্বে ইলম অর্জন
فَاعْلَمْ أَنَّهُ لَا اِلَـٰهَ إِلَّا اللهُ وَاسْتَغْفِرْ لِذَنْبِكَ وَلِلْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ وَاللهُ يَعْلَمُ مُتَقَلَّبَكُمْ وَمَثْوَاكُمْ
জেনে রাখুন, আল্লাহ্্ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। ক্ষমাপ্রার্থনা করুন, আপনার ত্রুটির জন্যে এবং মুমিন পুরুষ ও নারীদের জন্যে। আল্লাহ্্, তোমাদের গতিবিধি ও অবস্থান সম্পর্কে জ্ঞাত।
কাসির বিন কায়স রহ. বলেন আমি দামেস্কের জামে মসজিদে হযরত আবু দারদা রা.- এর কাছে বসা ছিলাম। এমন সময় উনার কাছে একটি লোক এসে বললেন হে আবু দারদা আমি মদিনাতুর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে শুধু একটি হাদিস শোনার জন্য এসেছি। আমি জানতে পেরেছি আপনি সেই হাদিস রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামহতে বর্ণনা করেছেন। হযরত আবু দারদা রা. বললেন এছাড়া কি তোমার আর কোন কাজ ছিল না? লোকটি বললেন, না। হযরত আবু দারদা রা. জিজ্ঞাসা করলেন আপনি কোন ব্যবসার উদ্দেশ্যে আসেন নি? তিনি বললেন না। একথা শুনে হযরত আবু দারদা রা. বললেন আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন-
من سلك طريقا يطلب فيه علما سلك الله به طريقا من طرق الجنة ، وإن الملائكة لتضع أجنحتها رضا لطالب العلم ، وإن العالم ليستغفر له من في السموات ومن في الارض والحيتان في جوف الماء ، وإن فضل العالم على العابد كفضل القمر ليلة البدر على سائر الكواكب ، وإن العلماء ورثة الانبياء ، وإن الانبياء لم يورثوا دينارا ولا درهما ورثوا العلم فمن أخذه أخذ بحظ وافر سنن أبي داود – (৩ / ৩৫৬)
অর্থাৎ যে ব্যক্তি ইলম অর্জনের জন্য পথ চলে আল্লাহ্্ তা’আলা তার (আমল) দ্বারা তাকে বেহেশতের পথসমূহের মধ্যে একটি পথে পৌঁছিয়ে দেন। এবং ফেরেশ্তাগণ দ্বীনী ইলম অন্¦েষণ কারীদের সন্তুষ্টির জন্য নিজেদের ডানা সমূহ বিছিয়ে দেন। এছাড়া যারা আলেম তাদের জন্য আসমান ও জমিনে যারা আছেন, সকলেই আল্লাহ্্র নিকট ক্ষমা প্রার্থনা ও দুআ’ করতে থাকেন। এমনি ভাবে গভীর পানির মাছ সমূহও (দুআ’করতে থাকে)। আলেমগণের ফজিলত (আলেম নন এমন) আবেদের উপর এরূপ, যেরূপ পূর্ণ চন্দ্রের ফজিলত অন্নান্য তারকারাজির উপর। নিশ্চয়ই আলেমগণ হলেন নবীগণের ওয়ারিস (উত্তরাধিকারী)। আর নবীগণ কোন দিনার বা দেরহামের মিরাস বা উত্তরাধিকার রেখে যান নি। বরং তারা এলেমকেই মিরাস হিসাবে রেখে গেছেন। সুতরাং যে ব্যক্তি এলেম অর্জন করেছে সে মিরাসের পূর্ণ অংশ অর্জন করেছে।

তাক্বওয়া:
তাক্বওয়ার উপর চলা দা‘ঈদের জন্য খুবই জরুরি। এটা ইবাদত কবুল হওয়ার মাধ্যম। মুস্তাহাবের উপর চলতে হবে।
আল্লাহ্্ তা’আলা বলেন-
بَلَىٰ مَنْ أَوْفَىٰ بِعَهْدِ ه وَاتَّقَىٰ فَإِنَّ اللهَ يُحِبُّ الْمُتَّقِينَ
যে লোক নিজে প্রতিজ্ঞা করবে এবং পরহেজগার হবে, অবশ্যইআল্লাহ্পরহেজগারদেরকে ভালবাসেন।
নম্রতা:
দাওয়াতী কাজের শুরু লগ্ন থেকে আম্বিয়া আ. সেসব আদর্শ পদ্ধতি অবলম্বন করেছেন তা হলো ন¤্রতা, মুহাব্বাত ও ভালোবাসা। এ পদ্ধতি অবলম্বন করার কারণে মাদ’উ তাদের অন্তর উজাড় করে দিয়েছেন। ন¤্রতার কারণে দাওয়াত কবুল করে।
দা‘ঈদের কাছে এটাই চাওয়া, তারা মানুষের সাথে ভালো কথা বলবে। সুন্দর কথা বলবে। চাই লোকটি ভালো হোক কিংবা খারাপ হোক। ভালো কথার প্রভাব তার উপর পড়বে।
দা‘ঈদের জন্য জরুরি সে মানুষের সাথে ন¤্রতা অবলম্বন করবে। তার প্রতি দরদি হবে। নিজেকে চিকিৎসক মনে করবে। আর মাদ’উকে রুগী মনে করবে।
তাদের চিকিৎসা করতে হবে। আর মানুষের অন্তরের রোগের চেয়ে বড় কোন রোগ হতে পারে না।
দা‘ঈদের জন্য জরুরি হল তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম. এর পদাঙ্ক অনুসরণ করে কুরআনী শিক্ষার উপর আমল করে ন¤্রতা অবলম্বন করবে, ভালো কথা বলবে।

ক্ষমা:
দা‘ঈদের জন্য ক্ষমার মতো মহান গুণে গুণান্বিত হওয়া খুবই জরুরি। আল্লাহ্্তা‘আলাবলেন-
وَلَا يَأْتَلِ أُولُو الْفَضْلِ مِنْكُمْ وَالسَّعَةِ أَنْ يُؤْتُوا أُولِي الْقُرْبَى وَالْمَسَاكِينَ وَالْمُهَاجِرِينَ فِي سَبِيلِ اللهِ وَلْيَعْفُوا وَلْيَصْفَحُوا أَلَا تُحِبُّونَ أَنْ يَغْفِرَ اللهُ لَكُمْ وَاللهُ غَفُورٌ رَحِيمٌ
তোমাদের মধ্যে যারা উচ্চমর্যাদা ও আর্থিক প্রাচুর্যের অধিকারী, তারা যেন কসম না খায় যে, তারা আত্মীয়-স্বজনকে, অভাবগ্রস্তকে এবং আল্লাহ্্র পথে হিজরতকারীদেরকে কিছুই দেবে না। তাদের ক্ষমা করা উচিত এবং দোষত্রুটি উপেক্ষা করা উচিত। তোমরা কি কামনা কর না যে, আল্লাহ্্ তোমাদেরকে ক্ষমা করেন? আল্লাহ্্ ক্ষমাশীল, পরম করুণাময়।
রাহমাতুল্লিল আলামিন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- এর উপর এই অবস্থার পর তিনি যেমন ক্ষমা করে দিয়েছেন। তেমনিভাবে দা‘ঈদের জন্য জরুরি, নবীজীর ওয়ারিস হিসাবে তার বাস্তব জীবনে বাস্তবায়িত করে আমলি নমুনা পেশ করবে। আমলীভাবে এই সুন্নাতের হেফাজত করবে। পূর্বের নবীগণও এ ধরনের নির্যাতন সহ্য করেছেন এবং তার জাতিকে ক্ষমা করে দিয়েছেন।
দা‘ঈদের জন্য জরুরিহল তারা আম্বিয়া আ. এর জীবনীর উপর এবং তাদের দাওয়াতী কার্যক্রমের উপর গভীর পড়াশোনা করবে। তার উপর আমল করে ঐ ফলগ্রহণ করবেন যা করেছেন আম্বিয়া আ.।
রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বদা সাহাবায়ে কেরাম রা.- কে উদ্বুদ্ধ করতেন। তারা যেন মন্দের বদলা মন্দ দিয়ে না দেয়। তাদেরকে ক্ষমা করতে উদ্বুদ্ধ করতেন এবং উত্তম চরিত্র ও কষ্ট সহ্য করার দাওয়াত দিতেন।
এতেদাল:
কারো ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে তাড়াহুড়া না করা। কেউ কারো কোন কথা বললে কোন যাচাই-বাছাই ছাড়াই তাকে নিন্দা করা, দা‘ঈদের জন্য মোটেই উচিৎ না। এর জন্য অনেক সময় লজ্জিতও হতে হয়। তাই মেজাজে সাম্যতা এতেদাল থাকতে হবে। আল্লাহ্্তাআলা’ বলেন-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا ضَرَبْتُمْ فِي سَبِيلِ اللهِ فَتَبَيَّنُوا وَلَا تَقُولُوا لِمَنْ أَلْقَى إِلَيْكُمُ السَّلَامَ لَسْتَ مُؤْمِنًا تَبْتَغُونَ عَرَضَ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا فَعِنْدَ اللهِ مَغَانِمُ كَثِيرَةٌ كَذَلِكَ كُنْتُمْ مِنْ قَبْلُ فَمَنَّ اللهُ عَلَيْكُمْ فَتَبَيَّنُوا إِنَّ اللهَ كَانَ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرًا
হে ঈমানদারগণ! তোমরা যখন আল্লাহ্্র পথে সফর কর, তখন যাচাই করে নিও এবং যে তোমাদেরকে সালাম করে তাকে বলো না যে, তুমি মুসলমান নও। তোমরা পার্থিব জীবনের সম্পদ অন্বেষণ কর, বস্তুত: আল্লাহ্্র কাছে অনেক সম্পদ রয়েছে। তোমরাও তো এমনি ছিলে ইতোপূর্বে; অতঃপরআল্লাহতোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন। অতএব, এখন অনুসন্ধান করে নিও। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তোমাদের কাজ-কর্মের খবর রাখেন।
এই আয়াতের শানে নুজুলের ব্যাপারে আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ রা. বলেন- একজন মানুষ ছাগল চড়াচ্ছিল। সে দিক দিয়ে মুসলমানদের এক সৈনিকদল যাচ্ছিল। ঐ লোকটি তাদেরকে সালাম দেয়। তারা তাকে দুশমন মনে করে হত্যাকরে ফেলে। তার ছাগল নিয়ে যায়। এই প্রেক্ষাপটে এই আয়াত নাজিল হয়েছে।
ধৈর্য বা সবর
দা‘ঈদের মধ্যে এই গুণ থাকা খুবই জরুরি। এই সবর গুরুত্বপূর্ণ একটি গুণ।
সবরের সংজ্ঞা
সবর অর্থ দৃঢ় দেখানো। অস্থিরতা ও পেরেশানী প্রকাশ না করা। এস্তেকামাতের সাথে অপেক্ষা করা।

সবরের হাকিকত
সবর হলো অন্তরের গুণাবলীর মধ্য থেকে উত্তম একটি গুণ। সেই কারণে সে ঐ সব কাজ থেকে বিরত থাকে যা সুন্দর ও উত্তম না। এটা আধ্যাত্মিক শক্তিগুলোর একটি। যার দ্বারা মুআমালাত এবং অবস্থা ঠিক হয়ে যায়।
জুননূন রাহ. বলেন-
সবর হলো পাপকর্ম থেকে দূরে থাকা। পরীক্ষার সময় কষ্ট সহ্য করা। এক বর্ণনা অনুযায়ী সবর হলো বিপদের সময় ভালো ব্যবহার করা। অর্থ- মসিবতের সময় কোন ধরনের অভিযোগ না।
খাওয়াস বলেন যে, সবর দ্বারা উদ্দেশ্য, কিতাব ও সুন্নাতের আহকামাতের উপর অনড় ও দূর থাকা।
উত্তম চরিত্র
আল্লাহ্্তা‘আলারাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- এর পরিচয় করিয়েছেন-
وَإِنَّكَ لَعَلَى خُلُقٍ عَظِيمٍ
আপনি অবশ্যই মহান চরিত্রের অধিকারী।
আনাস রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন
كان رسول الله صلعم أحسن الناس خلقا
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষের মধ্যে উত্তম চরিত্রের অধিকারী ছিলেন।
ক্রোধ:
ক্রোধ এমন একটি রোগ যা মানুষকে জাহান্নামে নিয়ে যায়। এটা আখলাকে রাযায়েলগুলোর মধ্যে একটি। এখানে ক্রোধ বর্জন দ্বারা উদ্দেশ্য এটা নয় যে, একেবারে ক্রোধকে মিটিয়ে দিবে। উদ্দেশ্য হলো খুব দ্রুত যেন ক্রোধ না আসে, আসলেও যেন নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
আল্লাহ্্ তা’আলা বলেন-
وَالَّذِينَ يَجْتَنِبُونَ كَبَائِرَ الْإِثْمِ وَالْفَوَاحِشَ وَإِذَا مَا غَضِبُوا هُمْ يَغْفِرُونَ
যারা বড় গোনাহ ও অশ্লীল কার্য থেকে বেঁচে থাকে এবং ক্রোধাম্বিত হয়েও ক্ষমা করে।

Archives

April 2025
S S M T W T F
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
2627282930